ভারতজুড়ে বর্ষার অগ্রগতি: বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বৃষ্টির (মোনসুন) সময়সীমা সাধারণত জুনের প্রথম সপ্তাহে শুরু হলেও, চলতি বছর ভারতের কেরালায় ২৪ মে বর্ষা ঢুকে গেছে। এটি পূর্বাভাসের তুলনায় তিন দিন আগেভাগে এবং গত ১৫ বছরে সবচেয়ে দ্রুততম আগমন। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের (IMD) মতে, বর্ষা ইতোমধ্যে দক্ষিণ ভারত ও আরব সাগরজুড়ে বিস্তার লাভ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—বাংলাদেশে কি এবার আগেভাগে বর্ষা ঢুকবে?
সাধারণত কখন বাংলাদেশে আসে বর্ষা?
বাংলাদেশে সাধারণত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বৃষ্টি শুরু হয় জুনের প্রথম সপ্তাহে, বিশেষ করে ৫ থেকে ১০ জুনের মধ্যে। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এটি মে’র শেষ দিকেই ঢুকতে পারে। ইতিহাস বলছে, কখনো কখনো ৩০ মে’র কাছাকাছি সময়েও বর্ষা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করেছে।
এবার আগাম বর্ষার সম্ভাবনা কতটা?
ভারতের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে এবার বর্ষার অগ্রগতি খুবই ইতিবাচক। বঙ্গোপসাগরের উত্তরে ২৭ মে’র আশেপাশে একটি নতুন নিম্নচাপ গঠনের আশঙ্কা রয়েছে, যা বাংলাদেশমুখী বর্ষাকে টেনে আনতে পারে। ফলে বাংলাদেশে বর্ষা এ বছর সাধারণ সময়ের আগেই, অর্থাৎ ২৮ মে থেকে ৩ জুনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে—এমনটা মনে করছেন আবহাওয়াবিদেরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের একজন সিনিয়র পূর্বাভাসবিদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ‘সারাক্ষণ রিপোর্ট’-কে বলেন, “ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে বর্ষা প্রবলভাবে সক্রিয় রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মে’র শেষ সপ্তাহ থেকেই প্রাক-মৌসুমি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এটি ধীরে ধীরে মৌসুমি বৃষ্টিতে রূপ নিতে পারে জুনের প্রথম সপ্তাহেই।”
কতটা বৃষ্টি হবে বাংলাদেশে?
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর চলতি মৌসুমে ‘অ্যাবাভ নরমাল’ অর্থাৎ গড়ের চেয়ে বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। বাংলাদেশেও একই ধারা বজায় থাকতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতোমধ্যে জানিয়েছে, জুন-সেপ্টেম্বর মৌসুমে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে গড়ের কাছাকাছি অথবা কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বিশেষত:
- চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
- ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চল (বরিশাল, খুলনা) অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ গড়ের চেয়ে সামান্য বেশি হতে পারে।
- উত্তরাঞ্চল (রংপুর, রাজশাহী) অঞ্চলে কিছুটা কম বা গড়ের মতো বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
কৃষি ও জনজীবনের ওপর প্রভাব
বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ কৃষি এখনও সরাসরি বর্ষার পানির ওপর নির্ভরশীল। আগেভাগে বর্ষা শুরু হলে বোরো কাটার পর আমন ধানের চারা রোপণ এবং অন্যান্য মৌসুমি কৃষিকাজে সুবিধা হবে। তবে, অতিবৃষ্টি হলে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা এবং পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
বিশেষত, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান এলাকায় বর্ষা প্রবেশের প্রথম দুই সপ্তাহে অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে দুর্যোগের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবহাওয়াবিদরা আগাম সতর্কতা এবং প্রস্তুতির পরামর্শ দিচ্ছেন।
সারসংক্ষেপ: বাংলাদেশে বর্ষার সম্ভাব্য সময় ও পূর্বাভাস
বিষয় | সম্ভাব্য সময় বা তথ্য |
বর্ষা প্রবেশের সময় | ২৮ মে – ৩ জুনের মধ্যে |
মৌসুমের বৃষ্টিপাত | গড়ের কাছাকাছি বা কিছুটা বেশি |
সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি | সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে |
ঝুঁকির এলাকা | পার্বত্য চট্টগ্রাম, শহরাঞ্চল (জলাবদ্ধতা) |
ভারতের কেরালায় আগাম বর্ষার প্রবেশ বাংলাদেশের আবহাওয়ার গতিপথকেও প্রভাবিত করেছে। বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ এবং ক্রমবর্ধমান জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বাংলাদেশের দিকে বর্ষাকে টেনে আনতে পারে খুব দ্রুতই। প্রস্তুত থাকতে হবে কৃষক, নগর প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে।