০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

রয়টার্সের প্রতিবেদন: ইউনুস নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে

  • রুমা পাল
  • ০৪:২০:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • 130

২৬ মে ২০২৫, ঢাকা

বাংলাদেশে অস্থায়ী সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়তে থাকায় সোমবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি খাতের কর্মচারীদের সঙ্গে একযোগে বিক্ষোভে অংশ নেন। দেশটিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে।

৮৪ বছর বয়সী নোবেল শান্তিপুরস্কারপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ইউনুস গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন, যখন ছাত্র-নেতৃত্বাধীন প্রাণঘাতী বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন প্রশাসনিক কর্মচারী, শিক্ষক, রাজনৈতিক দল এবং সেনাবাহিনীর চাপের মুখে রয়েছে, কারণ এটি একটি ভঙ্গুর রূপান্তর পর্বে দেশকে একটি গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

রবিবার সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে, যেখানে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াই বরখাস্ত করা যাবে। এ সিদ্ধান্তে সরকারি প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

সরকারি কর্মচারীরা টানা তৃতীয় দিনের মতো সোমবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। তাঁরা এ অধ্যাদেশকে “দমনমূলক” বলে আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবি জানান।

সেই দিন থেকেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে চলে যান। তাঁদের দাবি, বেতন বৃদ্ধি করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মচারীদের প্রতিবাদের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার রবিবার এনবিআর বিলুপ্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ গঠনের নির্দেশ বাতিল করতে বাধ্য হয়। ফলে এনবিআরের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও গভীর হয় গত সপ্তাহে, যখন এক শীর্ষ ছাত্রনেতা দাবি করেন—ইউনুস বলেছেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার এবং নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে ঐকমত্য না হয়, তাহলে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন।

তবে ইউনুসের মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা হিসেবে থাকা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ দাবি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমরা কোথাও যাচ্ছি না যতক্ষণ না আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়।” তিনি আরও বলেন, ইউনুস স্বীকার করেছেন যে সামনে বাধা রয়েছে, কিন্তু তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছেন।

এই অন্তর্বর্তী সরকার এখন দ্রুত নির্বাচন ও কাঠামোগত সংস্কারের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চাপে রয়েছে। ইউনুস এর আগে বলেছিলেন, ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। অন্যদিকে, বিএনপি নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে গত সপ্তাহে এক ভাষণে ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান। এতে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইউনুস শনিবার হঠাৎ করে তার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক ডাকেন এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্র-নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এখন যুদ্ধাবস্থার মতো এক পরিস্থিতিতে রয়েছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর আমাদের অস্থিতিশীল করতে নানা চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।”

এই মাসেই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে, ফলে দলটি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

রয়টার্সের প্রতিবেদন: ইউনুস নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে

০৪:২০:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

২৬ মে ২০২৫, ঢাকা

বাংলাদেশে অস্থায়ী সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়তে থাকায় সোমবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি খাতের কর্মচারীদের সঙ্গে একযোগে বিক্ষোভে অংশ নেন। দেশটিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে।

৮৪ বছর বয়সী নোবেল শান্তিপুরস্কারপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ইউনুস গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন, যখন ছাত্র-নেতৃত্বাধীন প্রাণঘাতী বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন প্রশাসনিক কর্মচারী, শিক্ষক, রাজনৈতিক দল এবং সেনাবাহিনীর চাপের মুখে রয়েছে, কারণ এটি একটি ভঙ্গুর রূপান্তর পর্বে দেশকে একটি গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

রবিবার সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে, যেখানে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াই বরখাস্ত করা যাবে। এ সিদ্ধান্তে সরকারি প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

সরকারি কর্মচারীরা টানা তৃতীয় দিনের মতো সোমবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। তাঁরা এ অধ্যাদেশকে “দমনমূলক” বলে আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবি জানান।

সেই দিন থেকেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে চলে যান। তাঁদের দাবি, বেতন বৃদ্ধি করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মচারীদের প্রতিবাদের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার রবিবার এনবিআর বিলুপ্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ গঠনের নির্দেশ বাতিল করতে বাধ্য হয়। ফলে এনবিআরের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও গভীর হয় গত সপ্তাহে, যখন এক শীর্ষ ছাত্রনেতা দাবি করেন—ইউনুস বলেছেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার এবং নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে ঐকমত্য না হয়, তাহলে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন।

তবে ইউনুসের মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা হিসেবে থাকা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ দাবি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমরা কোথাও যাচ্ছি না যতক্ষণ না আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়।” তিনি আরও বলেন, ইউনুস স্বীকার করেছেন যে সামনে বাধা রয়েছে, কিন্তু তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছেন।

এই অন্তর্বর্তী সরকার এখন দ্রুত নির্বাচন ও কাঠামোগত সংস্কারের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চাপে রয়েছে। ইউনুস এর আগে বলেছিলেন, ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। অন্যদিকে, বিএনপি নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে গত সপ্তাহে এক ভাষণে ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান। এতে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইউনুস শনিবার হঠাৎ করে তার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক ডাকেন এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্র-নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এখন যুদ্ধাবস্থার মতো এক পরিস্থিতিতে রয়েছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর আমাদের অস্থিতিশীল করতে নানা চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।”

এই মাসেই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে, ফলে দলটি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।