০৬:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
আমেরিকায় প্রযুক্তি কর্মী তৈরির দৌড়, তবে  কি আগে চাকরি পাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? বিশ্ববাজারে এআই বিনিয়োগে উত্তাপ — হংকং সম্মেলনে শেয়ারবাজারে বুদবুদের আশঙ্কা প্যারিসবাসীর জন্য ব্যতিক্রমী লটারি: ঐতিহাসিক সমাধিক্ষেত্রে সমাধিস্থ হওয়ার সুযোগ প্রাক্তন এফবিআই পরিচালক কমি মামলার সমালোচনা: একটি ফেডারেল বিচারকের তীব্র মন্তব্য পাকিস্তানের বর্তমান বাংলাদেশ নীতি কি পুরোনো ক্ষতকে আরও আঘাত করছে ভ্যাটিকান সিটি ও গুরুদ্বারা গুরু নানক দরবার দুবাইয়ের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় সংহতির উদযাপন ঢাবিতে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষকের পদ বাতিলের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কোরিয়ান সিনেমায় হাস্যরসের জয়যাত্রা: কেন কোরিয়ান দর্শক আবার হাসছে নেটফ্লিক্সের ‘As You Stood By’ মৃগয়া, বন্ধুত্ব এবং নারীদের নেতৃত্বে থ্রিলারের মাধ্যমে হত্যা অনুসন্ধান ইয়ামামোটোর ঐতিহাসিক ওয়ার্ল্ড সিরিজ: ডজার্সকে এনে দিলো যুগান্তকারী বিজয়

বাংলাদেশে হামের টিকার বাইরে এখনো ৫ লাখ শিশু

বিশ্বব্যাপী সাফল্যের পর বাংলাদেশে টিকার গুরুত্ব আরও বাড়ছে

বিশ্বব্যাপী হামের টিকা ৯ কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে। কিন্তু বাংলাদেশে এই টিকা কতটা কার্যকর হয়েছে? প্রতি বছর কী পরিমাণ শিশু এখনো হামের ঝুঁকিতে রয়েছে? এবং দেশ কীভাবে আরও উন্নত টিকাদান কাঠামোর মাধ্যমে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে?

বাংলাদেশে হামের প্রকোপ: অতীত থেকে বর্তমান

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে হামের প্রকোপ ভয়াবহ ছিল। প্রতি বছর গড়ে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ শিশু হামে আক্রান্ত হতো। এর মধ্যে প্রায় ৫% শিশুর মৃত্যু হতো মারাত্মক জটিলতা, নিউমোনিয়া বা ডায়রিয়ার কারণে। বিশেষ করে দূরবর্তী ও পাহাড়ি অঞ্চলে এই রোগে মৃত্যুর হার ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি।

বর্তমানে, দেশের হামের প্রকোপ অনেক কমলেও প্রতি বছর এখনো গড়ে ২,০০০-৩,৫০০ শিশু হামে আক্রান্ত হচ্ছে, এবং কিছু এলাকায় মৃত্যু ঘটে চলেছে, বিশেষ করে যেখানে টিকা কভারেজ এখনো শতভাগ হয়নি।

টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অর্জন

বাংলাদেশ ১৯৭৯ সালে Expanded Programme on Immunisation (EPI) চালু করে। ২০০৫ সালের পর থেকে দেশের টিকা কভারেজ ৮৫ শতাংশের ওপরে পৌঁছায়, যা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে উন্নত। UNICEF ও WHO-এর সহায়তায় পরিচালিত প্রচার অভিযানের ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও হামের টিকা পৌঁছেছে।

২০২২ সালে ‘Catch-Up Campaign’-এর মাধ্যমে ৯ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী প্রায় ২ কোটি শিশুকে হামের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়। এই পদক্ষেপ বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারির পর টিকাদান ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চ্যালেঞ্জ: এখনো ঝুঁকিতে আছে হাজারো শিশু

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকার বস্তিপার্বত্য চট্টগ্রামচা-বাগান এলাকাও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখনো হামের টিকা থেকে বঞ্চিত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এসব এলাকায় সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতির কারণে টিকাদান কর্মসূচি পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব এলাকায় একটি আঞ্চলিক প্রাদুর্ভাব (outbreak) ঘটলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে, কারণ হাম একটি বায়ুবাহিত ভাইরাস—যার সংক্রমণ হার অত্যন্ত উচ্চ।

কী করণীয়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে হামের টিকা শতভাগ শিশুদের মাঝে পৌঁছাতে হলে কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরি:

  • ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ঘনঘন মোবাইল টিকাদান ক্যাম্প স্থাপন
  • স্থানীয় সামাজিক নেতাদের নিয়ে সচেতনতা অভিযান
  • স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা
  • EPI কর্মসূচিতে প্রযুক্তিগত আপগ্রেড, যাতে শিশুদের টিকা গ্রহণের তথ্য ডিজিটালভাবে ট্র্যাক করা যায়

প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর বিরুদ্ধে নতুন যাত্রা

বাংলাদেশে হামের টিকার কারণে গত দুই দশকে হাজার হাজার শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে, তবে এখনো দেশজুড়ে প্রতি বছর ,০০০-৩,৫০০ নতুন সংক্রমণ ঘটছে। বিশ্ব যেমন দেখিয়েছে, টিকাদানই একমাত্র পথ যা এই ভাইরাসকে নির্মূল করতে পারে।

বিশ্বে যেখানে টিকাদানের মাধ্যমে ৯ কোটি প্রাণ রক্ষা হয়েছে, বাংলাদেশেও একটি শক্তিশালী, ন্যায্য ও সর্বজনীন টিকাদান কাঠামোই পারে হামের মতো রোগকে চিরতরে হারাতে।

ফ্যাক্টবক্স: বাংলাদেশে হামের টিকার প্রভাব ও বর্তমান চিত্র

বিষয় তথ্য
EPI চালু ১৯৭৯ সালে
হামের বার্ষিক সংক্রমণ (১৯৯০) ২০,০০০+ শিশু
হামের বার্ষিক সংক্রমণ (২০২৩) আনুমানিক ২,৫০০ শিশু
মৃত্যুহার (অতীতে) প্রায় ৫%
বর্তমান টিকা কভারেজ আনুমানিক ৮৭%
হামে আক্রান্ত প্রধান অঞ্চল চা-বাগান, পার্বত্য এলাকা, বস্তি ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প
টিকাদান কর্মসূচির সফলতা প্রতি বছর ৩০ লাখ+ শিশুকে টিকা প্রদান
জনপ্রিয় সংবাদ

আমেরিকায় প্রযুক্তি কর্মী তৈরির দৌড়, তবে  কি আগে চাকরি পাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা?

বাংলাদেশে হামের টিকার বাইরে এখনো ৫ লাখ শিশু

০৪:০৪:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

বিশ্বব্যাপী সাফল্যের পর বাংলাদেশে টিকার গুরুত্ব আরও বাড়ছে

বিশ্বব্যাপী হামের টিকা ৯ কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে। কিন্তু বাংলাদেশে এই টিকা কতটা কার্যকর হয়েছে? প্রতি বছর কী পরিমাণ শিশু এখনো হামের ঝুঁকিতে রয়েছে? এবং দেশ কীভাবে আরও উন্নত টিকাদান কাঠামোর মাধ্যমে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে?

বাংলাদেশে হামের প্রকোপ: অতীত থেকে বর্তমান

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে হামের প্রকোপ ভয়াবহ ছিল। প্রতি বছর গড়ে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ শিশু হামে আক্রান্ত হতো। এর মধ্যে প্রায় ৫% শিশুর মৃত্যু হতো মারাত্মক জটিলতা, নিউমোনিয়া বা ডায়রিয়ার কারণে। বিশেষ করে দূরবর্তী ও পাহাড়ি অঞ্চলে এই রোগে মৃত্যুর হার ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি।

বর্তমানে, দেশের হামের প্রকোপ অনেক কমলেও প্রতি বছর এখনো গড়ে ২,০০০-৩,৫০০ শিশু হামে আক্রান্ত হচ্ছে, এবং কিছু এলাকায় মৃত্যু ঘটে চলেছে, বিশেষ করে যেখানে টিকা কভারেজ এখনো শতভাগ হয়নি।

টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অর্জন

বাংলাদেশ ১৯৭৯ সালে Expanded Programme on Immunisation (EPI) চালু করে। ২০০৫ সালের পর থেকে দেশের টিকা কভারেজ ৮৫ শতাংশের ওপরে পৌঁছায়, যা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে উন্নত। UNICEF ও WHO-এর সহায়তায় পরিচালিত প্রচার অভিযানের ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও হামের টিকা পৌঁছেছে।

২০২২ সালে ‘Catch-Up Campaign’-এর মাধ্যমে ৯ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী প্রায় ২ কোটি শিশুকে হামের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়। এই পদক্ষেপ বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারির পর টিকাদান ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চ্যালেঞ্জ: এখনো ঝুঁকিতে আছে হাজারো শিশু

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকার বস্তিপার্বত্য চট্টগ্রামচা-বাগান এলাকাও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখনো হামের টিকা থেকে বঞ্চিত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এসব এলাকায় সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতির কারণে টিকাদান কর্মসূচি পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব এলাকায় একটি আঞ্চলিক প্রাদুর্ভাব (outbreak) ঘটলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে, কারণ হাম একটি বায়ুবাহিত ভাইরাস—যার সংক্রমণ হার অত্যন্ত উচ্চ।

কী করণীয়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে হামের টিকা শতভাগ শিশুদের মাঝে পৌঁছাতে হলে কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরি:

  • ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ঘনঘন মোবাইল টিকাদান ক্যাম্প স্থাপন
  • স্থানীয় সামাজিক নেতাদের নিয়ে সচেতনতা অভিযান
  • স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা
  • EPI কর্মসূচিতে প্রযুক্তিগত আপগ্রেড, যাতে শিশুদের টিকা গ্রহণের তথ্য ডিজিটালভাবে ট্র্যাক করা যায়

প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর বিরুদ্ধে নতুন যাত্রা

বাংলাদেশে হামের টিকার কারণে গত দুই দশকে হাজার হাজার শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে, তবে এখনো দেশজুড়ে প্রতি বছর ,০০০-৩,৫০০ নতুন সংক্রমণ ঘটছে। বিশ্ব যেমন দেখিয়েছে, টিকাদানই একমাত্র পথ যা এই ভাইরাসকে নির্মূল করতে পারে।

বিশ্বে যেখানে টিকাদানের মাধ্যমে ৯ কোটি প্রাণ রক্ষা হয়েছে, বাংলাদেশেও একটি শক্তিশালী, ন্যায্য ও সর্বজনীন টিকাদান কাঠামোই পারে হামের মতো রোগকে চিরতরে হারাতে।

ফ্যাক্টবক্স: বাংলাদেশে হামের টিকার প্রভাব ও বর্তমান চিত্র

বিষয় তথ্য
EPI চালু ১৯৭৯ সালে
হামের বার্ষিক সংক্রমণ (১৯৯০) ২০,০০০+ শিশু
হামের বার্ষিক সংক্রমণ (২০২৩) আনুমানিক ২,৫০০ শিশু
মৃত্যুহার (অতীতে) প্রায় ৫%
বর্তমান টিকা কভারেজ আনুমানিক ৮৭%
হামে আক্রান্ত প্রধান অঞ্চল চা-বাগান, পার্বত্য এলাকা, বস্তি ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প
টিকাদান কর্মসূচির সফলতা প্রতি বছর ৩০ লাখ+ শিশুকে টিকা প্রদান