০৮:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল আবুল খায়ের গ্রুপ “ওরা করলে, আমরা প্রস্তুত”: পাকিস্তানের পারমাণবিক পরীক্ষা ইস্যুতে রাজনাথ সিংয়ের হুঁশিয়ারি বেঙ্গালুরুর জেলে আইএস জঙ্গি ও সিরিয়াল ধর্ষকের মোবাইল ব্যবহার ফাঁস, তদন্তে নেমেছে কর্ণাটক সরকার পাকিস্তানে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের অভূতপূর্ব পদোন্নতি — এখন দেশের প্রথম ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ বর্তমানের সব জাতীয় সংকটই সরকারের সাজানো নাটক: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের সঙ্গে টাকা ও ট্যারিফ বিরোধে আন্তর্জাতিক সালিশিতে আদানি পাওয়ার” ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে আধুনিক প্রশিক্ষণের ওপর জোর নতুন বেতন কমিশন গঠন করবে পরবর্তী সরকার: সালেহউদ্দিন আহমেদ নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর পাঁচ মামলায় জামিন প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবিতে সহানুভূতির আহ্বান জানালেন জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পারওয়ার

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৯১)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
  • 227

নজরুল

তারপর বহুদিন কবির কোনো চিঠি পাই নাই। ইনাইয়া-বিনাইয়া কবিকে কত কী লিখিয়াছি, কবি নিরুত্তর। হঠাৎ একখানা পত্র পাইলাম, কবি আমাকে ফরিদপুরের অবসরপ্রাপ্ত হেডমাস্টার নরেন্দ্র রায় মহাশয়ের পুত্রবধূ এবং তাঁর নাতি-নাতকুরদের বিষয়ে সমস্ত খবর লিখিয়া পাঠাইতে অনুরোধ করিয়াছেন। নরেন্দ্রবাবুর এক নাতি আমারই সহপাঠী ছিল। তাহার সঙ্গে গিয়া তাহার মায়ের সঙ্গে দেখা করিলাম।

ভদ্রমহিলা আমাকে আপন ছেলের মতোই গ্রহণ করিলেন। আমি তাঁহাকে মাসিমা বলিয়া ডাকিলাম। তাঁহাদের বাসায় গিয়া শুনতে পাইলাম, মাসিমার বড় বোন বিরজাসুন্দরী দেবীকে কবি মা বলিয়া ডাকেন। কবির বিষয়ে তিনি আরও অনেক কথা বলিলেন। সেই হইতে মাসিমা হইলেন কবির সঙ্গে আমার পরিচয়ের নূতন যোগসূত্র। কবি আমাকে পত্র লিখিতেন না। কিন্তু মাসিমার বড়বোন বিরজাসুন্দরী দেবীর নিকট হইতে নিয়মিত পত্র পাইতেন। সেইসব পত্র শুধু নজরুলের কথাতেই ভরতি থাকিত।

মাসিমা কবির প্রায় অধিকাংশ কবিতাই মুখস্থ বলিতে পারিতেন। নজরুলের প্রশংসা যে দিন খুব বেশি করিতাম, সেদিন মাসিমা আমাকে না-খাওয়াইয়া কিছুতেই আসিতে দিতেন না। মাসিমার গৃহটি ছিল রক্ষণশীল হিন্দু-পরিবারের। আজ বিস্ময় মনে হয়, কি করিয়া একজন মুসলিম কবির আরবি-ফারসি মিশ্রিত কবিতাগুলি গৃহ-বন্দিনী একটি হিন্দু-মহিলার মনে প্রভাব বিস্তার করিতে পারিয়াছিল।

নজরুলের রচিত ‘মহরম’ কবিতাটি কতবার আমি মাসিমাকে আবৃত্তি করিতে শুনিয়াছি। মাসিমার আবৃত্তি ছিল বড় মধুর। তাঁর চেহারাটি প্রতিমার মতো ঝকমক করিত। একবার আমি নজরুলের উপর একটি কবিতা রচনা করিয়া মাসিমাকে শুনাইয়াছিলাম। সেদিন মাসিমা আমাকে পিঠা খাওয়াইয়াছিলেন। সেই কবিতার ক’টি লাইন মনে আছে-

নজরুল ইসলাম।

তসলিম ওই নাম।

বাংলার বাদলায় ঘনঘোর ঝনঝায়,

কাঁপাইয়া সূর্য ও চন্দ্রের কক্ষ,

দামামার দমদম লোহুময় গান গায়; সেই কালে মহাবীর তোমারে যে হেরিলাম,

আলোড়িত আসমান ধরণীর বক্ষ;

নজরুল ইসলাম।

নজরুল কাব্য-প্রতিভার যবনিকার অন্তরালে আমার এই মাসিমার এবং তাঁর বোনদের স্নেহসুধার দান যে কতখানি, তাহা কেহ কোনোদিন জানিতে পারিবে না। বৃক্ষ যখন শাখাবাহু বিস্তার করিয়া ফুলে-ফলে সমস্ত ধরণীকে সজ্জিত করে তখন সকলের দৃষ্টি সেই বৃক্ষটির উপর। যে গোপন মাটির স্তন্যধারা সেই বৃক্ষটিকে দিনে দিনে জীবনরস দান করে; কে তাহার সন্ধান রাখে?

চলবে…..

 

জনপ্রিয় সংবাদ

জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল আবুল খায়ের গ্রুপ

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৯১)

১১:০০:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

নজরুল

তারপর বহুদিন কবির কোনো চিঠি পাই নাই। ইনাইয়া-বিনাইয়া কবিকে কত কী লিখিয়াছি, কবি নিরুত্তর। হঠাৎ একখানা পত্র পাইলাম, কবি আমাকে ফরিদপুরের অবসরপ্রাপ্ত হেডমাস্টার নরেন্দ্র রায় মহাশয়ের পুত্রবধূ এবং তাঁর নাতি-নাতকুরদের বিষয়ে সমস্ত খবর লিখিয়া পাঠাইতে অনুরোধ করিয়াছেন। নরেন্দ্রবাবুর এক নাতি আমারই সহপাঠী ছিল। তাহার সঙ্গে গিয়া তাহার মায়ের সঙ্গে দেখা করিলাম।

ভদ্রমহিলা আমাকে আপন ছেলের মতোই গ্রহণ করিলেন। আমি তাঁহাকে মাসিমা বলিয়া ডাকিলাম। তাঁহাদের বাসায় গিয়া শুনতে পাইলাম, মাসিমার বড় বোন বিরজাসুন্দরী দেবীকে কবি মা বলিয়া ডাকেন। কবির বিষয়ে তিনি আরও অনেক কথা বলিলেন। সেই হইতে মাসিমা হইলেন কবির সঙ্গে আমার পরিচয়ের নূতন যোগসূত্র। কবি আমাকে পত্র লিখিতেন না। কিন্তু মাসিমার বড়বোন বিরজাসুন্দরী দেবীর নিকট হইতে নিয়মিত পত্র পাইতেন। সেইসব পত্র শুধু নজরুলের কথাতেই ভরতি থাকিত।

মাসিমা কবির প্রায় অধিকাংশ কবিতাই মুখস্থ বলিতে পারিতেন। নজরুলের প্রশংসা যে দিন খুব বেশি করিতাম, সেদিন মাসিমা আমাকে না-খাওয়াইয়া কিছুতেই আসিতে দিতেন না। মাসিমার গৃহটি ছিল রক্ষণশীল হিন্দু-পরিবারের। আজ বিস্ময় মনে হয়, কি করিয়া একজন মুসলিম কবির আরবি-ফারসি মিশ্রিত কবিতাগুলি গৃহ-বন্দিনী একটি হিন্দু-মহিলার মনে প্রভাব বিস্তার করিতে পারিয়াছিল।

নজরুলের রচিত ‘মহরম’ কবিতাটি কতবার আমি মাসিমাকে আবৃত্তি করিতে শুনিয়াছি। মাসিমার আবৃত্তি ছিল বড় মধুর। তাঁর চেহারাটি প্রতিমার মতো ঝকমক করিত। একবার আমি নজরুলের উপর একটি কবিতা রচনা করিয়া মাসিমাকে শুনাইয়াছিলাম। সেদিন মাসিমা আমাকে পিঠা খাওয়াইয়াছিলেন। সেই কবিতার ক’টি লাইন মনে আছে-

নজরুল ইসলাম।

তসলিম ওই নাম।

বাংলার বাদলায় ঘনঘোর ঝনঝায়,

কাঁপাইয়া সূর্য ও চন্দ্রের কক্ষ,

দামামার দমদম লোহুময় গান গায়; সেই কালে মহাবীর তোমারে যে হেরিলাম,

আলোড়িত আসমান ধরণীর বক্ষ;

নজরুল ইসলাম।

নজরুল কাব্য-প্রতিভার যবনিকার অন্তরালে আমার এই মাসিমার এবং তাঁর বোনদের স্নেহসুধার দান যে কতখানি, তাহা কেহ কোনোদিন জানিতে পারিবে না। বৃক্ষ যখন শাখাবাহু বিস্তার করিয়া ফুলে-ফলে সমস্ত ধরণীকে সজ্জিত করে তখন সকলের দৃষ্টি সেই বৃক্ষটির উপর। যে গোপন মাটির স্তন্যধারা সেই বৃক্ষটিকে দিনে দিনে জীবনরস দান করে; কে তাহার সন্ধান রাখে?

চলবে…..