১১:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১)

হৈরব ও ভৈরব

‘মন অন্নময়, কি বুঝছস, অন্ন নাই তো মনই নাই; শ্যাষম্যাষ হ্যা অন্নেই ধরছে টান, তো মন পামু কই’ কিছুক্ষণের জন্যে থামে হৈরব। কথার ফাঁকে ফাঁকে সবসময় এইভাবে জিরিয়ে নেয়। একটা পিনপিনে নীলমাছি তার ফেকো মুখে গোঁত্তা খায়। হাতের চেটোয় মুখ মুছে সে আবার বলে, ‘মন আছিল যেমুন হিজল, নাভিজলে গেন্দুবয়রা হয়া খারায়া রইছে, রাও নাই, মাইনসে খুশিমতো কাটতাছে ডালা, মাছ জিয়ানের লাইগা ভেঁসালে ফালাইতাছে, ফালাইতাছে তো ফালাইতাছেই, তো হইছেডা কি, গজগজ কইরা আবার ডালা গজায়া উঠছে, পাতায় পাতায় যুবতী হয়া উঠছে, ফুল উজায়া উঠছে, ফুলরে ফুল, আরে ফুল, ফুল বলে দেইখা যা!

হইবো না ক্যান, প্রাণ হইলো গিয়া তর জলময়, জলের সার হইলো গিয়া প্রাণ। জলের তো আর অভাব নাই, পিরতিপুরুষ আশীব্বাদে হেই প্রাণটুকুই যেমুন রইছে অখন, মন নাই, বুঝছস ভৈরব, হ্যা মন আর নাই-‘

হৈরবের ছেলে ভৈরব। ভৈরব আড়চোখে বাবাকে দেখে। ঝাঁ ঝাঁ ফাগুনে রোদ তার কপালের ঘামে চিড়িক মারে। টানের সময় দলদলে পচানির ভেতর বুড়ো কাউঠার বুজবুজি তোলা তার ঢের ঢের দেখা আছে, গুচ্ছের কাঠ নিয়ে ফাড়াফাড়িতে ব্যস্ত সে; নৌকোর চিড়খাওয়া গোছার কিছু কিছু না বদলালেই নয়। একটা কাঠের ফালি হাতে নিয়ে সে জিজ্ঞেস করে, ‘চলবো, দেইখ্যা দ্যানদি ‘এই নিকি তর কাঠ, আরে আমার কপাল, হ্যায় কয় নাওয়ের গোছা বানাইব, ব্যাডায় একখান! আকাঠ-কুকাঠ দিয়া ব্যাক কাম চলেনিরে বোদাই?’

ভৈরব শুকনো গলায় বললে, ‘চলবো না ক্যান, চালাইলেই চলবো! ব্যাক মাইনসে চালাইতাছে না?’

‘ক্যান, গাদামের খাম আছিল না একখান?’

‘গাদামের খাম আপনে কই দ্যাখলেন?’

‘তর মায়েরে বুলা, জিগায়া দ্যাখ থুইছে কই।’

ডাকতে হয় না, যোগমায়া নিজেই এসে দাঁড়ায়।

যোগমায়ার মূর্তি দেখে হৈরব আন্দাজ করে তার হিসেবের কোথাও জট আছে: আজকাল অনেক কিছুই সে গুলিয়ে ফেলে, মনে রাখতে পারে না ঠিকমতো।

‘অতিসাইরায় কয়কি?’ যোগমায়া ফুঁসে উঠে বলে, ‘ক্যান, মুনশির কাছে না বেচলা গেল বছর। পুরা মাস খাতির জমায়া বয়া আছিলা ঘরে, আরাম করছিলা মনে থাকবো ক্যান!’

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১)

১২:০০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

হৈরব ও ভৈরব

‘মন অন্নময়, কি বুঝছস, অন্ন নাই তো মনই নাই; শ্যাষম্যাষ হ্যা অন্নেই ধরছে টান, তো মন পামু কই’ কিছুক্ষণের জন্যে থামে হৈরব। কথার ফাঁকে ফাঁকে সবসময় এইভাবে জিরিয়ে নেয়। একটা পিনপিনে নীলমাছি তার ফেকো মুখে গোঁত্তা খায়। হাতের চেটোয় মুখ মুছে সে আবার বলে, ‘মন আছিল যেমুন হিজল, নাভিজলে গেন্দুবয়রা হয়া খারায়া রইছে, রাও নাই, মাইনসে খুশিমতো কাটতাছে ডালা, মাছ জিয়ানের লাইগা ভেঁসালে ফালাইতাছে, ফালাইতাছে তো ফালাইতাছেই, তো হইছেডা কি, গজগজ কইরা আবার ডালা গজায়া উঠছে, পাতায় পাতায় যুবতী হয়া উঠছে, ফুল উজায়া উঠছে, ফুলরে ফুল, আরে ফুল, ফুল বলে দেইখা যা!

হইবো না ক্যান, প্রাণ হইলো গিয়া তর জলময়, জলের সার হইলো গিয়া প্রাণ। জলের তো আর অভাব নাই, পিরতিপুরুষ আশীব্বাদে হেই প্রাণটুকুই যেমুন রইছে অখন, মন নাই, বুঝছস ভৈরব, হ্যা মন আর নাই-‘

হৈরবের ছেলে ভৈরব। ভৈরব আড়চোখে বাবাকে দেখে। ঝাঁ ঝাঁ ফাগুনে রোদ তার কপালের ঘামে চিড়িক মারে। টানের সময় দলদলে পচানির ভেতর বুড়ো কাউঠার বুজবুজি তোলা তার ঢের ঢের দেখা আছে, গুচ্ছের কাঠ নিয়ে ফাড়াফাড়িতে ব্যস্ত সে; নৌকোর চিড়খাওয়া গোছার কিছু কিছু না বদলালেই নয়। একটা কাঠের ফালি হাতে নিয়ে সে জিজ্ঞেস করে, ‘চলবো, দেইখ্যা দ্যানদি ‘এই নিকি তর কাঠ, আরে আমার কপাল, হ্যায় কয় নাওয়ের গোছা বানাইব, ব্যাডায় একখান! আকাঠ-কুকাঠ দিয়া ব্যাক কাম চলেনিরে বোদাই?’

ভৈরব শুকনো গলায় বললে, ‘চলবো না ক্যান, চালাইলেই চলবো! ব্যাক মাইনসে চালাইতাছে না?’

‘ক্যান, গাদামের খাম আছিল না একখান?’

‘গাদামের খাম আপনে কই দ্যাখলেন?’

‘তর মায়েরে বুলা, জিগায়া দ্যাখ থুইছে কই।’

ডাকতে হয় না, যোগমায়া নিজেই এসে দাঁড়ায়।

যোগমায়ার মূর্তি দেখে হৈরব আন্দাজ করে তার হিসেবের কোথাও জট আছে: আজকাল অনেক কিছুই সে গুলিয়ে ফেলে, মনে রাখতে পারে না ঠিকমতো।

‘অতিসাইরায় কয়কি?’ যোগমায়া ফুঁসে উঠে বলে, ‘ক্যান, মুনশির কাছে না বেচলা গেল বছর। পুরা মাস খাতির জমায়া বয়া আছিলা ঘরে, আরাম করছিলা মনে থাকবো ক্যান!’