০১:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

ঈদে জবাই হোক অহংকার, লোভ, হিংসার পশু

কোরবানি মানেই শুধু গরু-ছাগল জবাই নয়। এটি এক আত্মত্যাগের প্রতীক, এক আত্মশুদ্ধির উপলক্ষ। আমরা সবাই বাইরের পশুকে কোরবানি দিতে জানি, কিন্তু নিজের ভেতরের পশুটাকে কি আমরা চিনতে পারি? এই ঈদে আসুন, পশুর চামড়ার নয়, নিজের হৃদয়ের খোলস ছিঁড়ে সেই ভেতরের পশুটাকে আল্লাহর নামে কোরবানি দেই।

আমাদের সবার ভিতরে একেকটি পশু বাস করে। কেউ অহংকারে ডুবে থাকে, কেউ হিংসা, কেউ লোভে, কেউ বা হানাহানিতে। ঈদের এই পবিত্র মুহূর্তে আসুন একেকটা নফসের পশুকে চিনে তাকে কোরবানি দেই। নিজেদের ভুলত্রুটি গুলো শুধরে নিয়ে সুন্দর জীবন গড়ি।আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, “তাদের মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে” (সূরা হজ্জ: ৩৭)। অর্থাৎ, পশু জবাইয়ের বাহ্যিকতা নয়, মূল কথা হচ্ছে আপনার আন্তরিকতা, আপনার আত্মিক পরিবর্তন। সেই লক্ষ্যেই এই লেখা—চিনে নিন আপনার ভেতরের পশুগুলো, আর এবার ঈদে তাদেরই কোরবানি দিন।

১. সবার আগে অহংকারের পশুটিকে কোরবানি দিন-
অহংকার এমন এক রোগ, যা মানুষকে অন্ধ করে ফেলে। নিজেকে বড় ভাবতে ভাবতে সে ভুলে যায়—সবচেয়ে বড় সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র আল্লাহ। এই ঈদে আসুন আমরা সবাই আত্মসমালোচনা করি। নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝে নিজেকে শুধরে নেই। যত বড় আমরা হই না কেন, আল্লাহর বান্দা হিসেবেই নিজেদের বিনম্রভাবে প্রকাশ করাই মানবিকতা।

২. লোভ-লালসার পশু ত্যাগ করুন:
লোভ মানুষকে অমানুষ বানায়। একটার পর একটা চাওয়ার শেষ নেই। এই লোভের জন্যই মানুষ অন্যের হক নষ্ট করে, ঘুষ খায়, অন্যায় করে। ঈদুল আজহা শেখায়—ত্যাগে আছে শান্তি। আসুন, নিজের লোভকে নিয়ন্ত্রণ করে হালাল রিজিক ও পরিশ্রমের গুরুত্ব উপলব্ধি করি।

৩. হিংসা ও ঈর্ষার পশুকে জবাই করুন:
হিংসা মানুষের ভিতরের এক অদৃশ্য আগুন, যা মানুষকে ধ্বংস করে। ঈর্ষায় আমরা অন্যের সুখ মেনে নিতে পারি না, ফলে নিজের শান্তিও হারিয়ে ফেলি। কোরবানির এই মুহূর্তে হিংসার পশুকে আল্লাহর নামে জবাই করে, অন্তরকে প্রশান্ত করুন। মনে রাখবেন, অন্যের ভালোতে আনন্দিত হওয়াও এক বড় মানুষ হওয়ার লক্ষণ।

৪. মানুষের ক্ষতি না করে উপকারে এগিয়ে যান:
পশুত্বের একটি রূপ হলো—পরের ক্ষতি করে নিজের লাভ খোঁজা। সমাজে অনেকেই আছেন, যারা অন্যকে ঠকিয়ে বড় হতে চান। ঈদের সময়টুকু হোক নিজের মানসিকতা পর্যালোচনার সময়। এবার শপথ হোক—কোনোদিন অন্যের ক্ষতি করবো না, বরং সাধ্যমতো মানুষের উপকার করবো।

৫. মিথ্যার পশুকে জবাই করুন, সত্যকে আলিঙ্গন করুন:
মিথ্যা মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা ও দুর্নীতির সূচনা। আজকাল অনেকে সত্যকে পেছনে ফেলে মিথ্যাকে কৌশল হিসেবে দেখে। ঈদের শিক্ষা হলো—সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকা। চাইলেই আমরা এই পশুটাকে জবাই করতে পারি, কেবল নিজেকে একটু কষ্ট দিয়ে, একটু দায়িত্ববান হয়ে।

৬. তওবার দরজায় নিজেকে সঁপে দিন:
আল্লাহ আমাদের অনেকবার সুযোগ দেন ফিরে আসার। কোরবানি সেই সুবর্ণ সময়, যখন আমরা কৃত পাপের জন্য অনুশোচনা করতে পারি। হিংসা, লোভ, মিথ্যা—এসব থেকে ফিরে এসে যদি আপনি আল্লাহর দরবারে তওবা করেন, তাহলে তিনিই আপনাকে ক্ষমা করবেন। তওবা করাই হলো পশু কোরবানির অন্তরাত্মা।

৭. অসততা ও প্রতারণার পথ ছেড়ে দিন:
সততা এক মূল্যবান গুণ। ব্যবসা, চাকরি, সম্পর্ক—যেখানেই থাকুন না কেন, সৎ থাকা আপনাকে শান্তি এনে দেবে। ঈদের পবিত্র সময়ে প্রতারণার পশুকে জবাই করে দিন। মনে রাখবেন, যে অন্যকে ঠকায়, সে আসলে নিজের বিবেককেই প্রতারণা করে।

৮. অপব্যয় ও বিলাসিতার পশু ত্যাগ করুন:
কোরবানি মানেই প্রচার বা প্রতিযোগিতা নয়। এটা হৃদয়ের ত্যাগের প্রতীক। ঈদের সময় আমরা এমন অনেক কিছু করি, যা শুধু লোক দেখানোর জন্য। দামী পশু কিনে ছবি তুলে পোস্ট করা ঈদের শিক্ষা নয়। আসুন, অপচয় না করে গরিবের মুখে হাসি ফোটাই। সেটিই হবে সবচেয়ে বড় কোরবানি।

৯. নিজের গণ্ডি ছেড়ে অন্যের কথাও ভাবুন:
একমাত্র নিজের পরিবার, নিজের স্বার্থ—এই চক্রেই আমরা ঘুরে বেড়াই। কিন্তু সত্যিকারের মানুষ তো সে-ই, যে নিজের সীমার বাইরে গিয়ে অন্যের দুঃখ অনুভব করতে পারে। ঈদের শিক্ষা হোক—একটু ভালো খেয়েছি তো পাশের দরিদ্র পরিবারটাও যেন কিছু পায়, সেটাও ভাবা।

১০. পরনিন্দা ও গীবতের পশু জবাই করুন:
মুখের গিবত কখনো রক্তপাত করে না, কিন্তু হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। কোরবানির সময় এই মুখের পশুটিকে জবাই করা খুব জরুরি। কথায়, হাসিতে, আলোচনা বা আড্ডায়—কাউকে ছোট না করে, তার অনুপস্থিতিতেও তার সম্মান রক্ষা করা আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব।

১১. মানবসেবাকে ঈদের রূপ দিন:
ঈদে একটি গরিব শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে পারা কি কম আনন্দের? একটা দরিদ্র পরিবারে কিছু মাংস পৌঁছে দেওয়াই বা কম কী? এটাই তো কোরবানির চেতনা। সমাজের জন্য কিছু করা মানেই আল্লাহর পথে কোরবানি। আসুন, এই ঈদে মানবিকতা ও সেবার পশুটিকে মুক্ত করি।

১২. ভেতরের পশুকে চিনুন এবং দমন করুন:
আমরা অনেক সময় বাহ্যিক ইবাদত নিয়ে ব্যস্ত থাকি, কিন্তু অন্তরের ভেতরের পশুটিকে উপেক্ষা করি। সেই পশু আমাদের লজ্জা, রাগ, বিদ্বেষ, অপমানবোধ। এই ঈদে নিজেকে প্রশ্ন করুন—আমার ভেতরে কোন পশু বাস করছে? তাকে চিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবাই করুন।

১৩. নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন:
অর্থ, পোশাক, সামাজিক মর্যাদা নয়—একজন প্রকৃত মানুষ হলো, যে অন্যের দুঃখ বুঝতে পারে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, সত্যকে ভালোবাসে। কোরবানির পশু আপনাকে মানুষ বানাবে না, যদি না আপনি নিজেকে পরিবর্তন করেন। ঈদের পরে যদি আপনি আগের মতোই থাকেন, তবে পশু কোরবানি আপনার কিছুই বদলায়নি।

ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা হলো ত্যাগ। আমরা কোরবানি দেই গরু, ছাগল বা উটের—তবে প্রকৃত কোরবানি কি কেবল এই প্রাণীর রক্ত ঝরানোতে সীমাবদ্ধ? প্রকৃত কোরবানি হলো নিজের ভেতরের সেই পশুটিকে জবাই করা, যে অহংকার করে, হিংসা করে, মিথ্যা বলে, অন্যের ক্ষতি করে।ঈদুল আজহার ত্যাগ আমাদের শুধু পশু জবাইয়ের শিক্ষা দেয় না, দেয় আত্মজবাইয়ের শিক্ষা। এই আত্মজবাই মানে নিজের ভেতরের পশুকে কোরবানি করা। এবার কোরবানির ঈদ হোক আত্মসচেতনতা, আত্মশুদ্ধি ও মানুষের জন্য ভালোবাসার উৎসব।

শেষ কথা:
একজন গরীব মানুষকে এক কেজি মাংস দেওয়ার মাঝে যেমন আনন্দ, তেমনি নিজের অহংকারকে আল্লাহর নামে জবাই করার মাঝেও শান্তি আছে। কোরবানি শুধু গরু বা ছাগলের নয়—মনের পশুর। আল্লাহ যেন আমাদের সেই ত্যাগ কবুল করেন।
এবারের কোরবানি হোক অন্যরকম। শুধু দেহের জন্য নয়, আত্মার জন্যও হোক এই উৎসর্গ। গরু বা ছাগল নয়, মনের পশুকেই আগে জবাই দিন। তাহলেই ঈদ হবে পূর্ণ, ত্যাগ হবে অর্থবহ, আর আপনি হবেন সত্যিকারের একজন আল্লাহভক্ত মানুষ।

🔸লেখক: মীর আব্দুল আলীম জীবনমুখী লেখক, মহাসচিব, কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ। www.mirabdulalim.com

ঈদে জবাই হোক অহংকার, লোভ, হিংসার পশু

০৮:০০:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫
কোরবানি মানেই শুধু গরু-ছাগল জবাই নয়। এটি এক আত্মত্যাগের প্রতীক, এক আত্মশুদ্ধির উপলক্ষ। আমরা সবাই বাইরের পশুকে কোরবানি দিতে জানি, কিন্তু নিজের ভেতরের পশুটাকে কি আমরা চিনতে পারি? এই ঈদে আসুন, পশুর চামড়ার নয়, নিজের হৃদয়ের খোলস ছিঁড়ে সেই ভেতরের পশুটাকে আল্লাহর নামে কোরবানি দেই।

আমাদের সবার ভিতরে একেকটি পশু বাস করে। কেউ অহংকারে ডুবে থাকে, কেউ হিংসা, কেউ লোভে, কেউ বা হানাহানিতে। ঈদের এই পবিত্র মুহূর্তে আসুন একেকটা নফসের পশুকে চিনে তাকে কোরবানি দেই। নিজেদের ভুলত্রুটি গুলো শুধরে নিয়ে সুন্দর জীবন গড়ি।আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, “তাদের মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে” (সূরা হজ্জ: ৩৭)। অর্থাৎ, পশু জবাইয়ের বাহ্যিকতা নয়, মূল কথা হচ্ছে আপনার আন্তরিকতা, আপনার আত্মিক পরিবর্তন। সেই লক্ষ্যেই এই লেখা—চিনে নিন আপনার ভেতরের পশুগুলো, আর এবার ঈদে তাদেরই কোরবানি দিন।

১. সবার আগে অহংকারের পশুটিকে কোরবানি দিন-
অহংকার এমন এক রোগ, যা মানুষকে অন্ধ করে ফেলে। নিজেকে বড় ভাবতে ভাবতে সে ভুলে যায়—সবচেয়ে বড় সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র আল্লাহ। এই ঈদে আসুন আমরা সবাই আত্মসমালোচনা করি। নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝে নিজেকে শুধরে নেই। যত বড় আমরা হই না কেন, আল্লাহর বান্দা হিসেবেই নিজেদের বিনম্রভাবে প্রকাশ করাই মানবিকতা।

২. লোভ-লালসার পশু ত্যাগ করুন:
লোভ মানুষকে অমানুষ বানায়। একটার পর একটা চাওয়ার শেষ নেই। এই লোভের জন্যই মানুষ অন্যের হক নষ্ট করে, ঘুষ খায়, অন্যায় করে। ঈদুল আজহা শেখায়—ত্যাগে আছে শান্তি। আসুন, নিজের লোভকে নিয়ন্ত্রণ করে হালাল রিজিক ও পরিশ্রমের গুরুত্ব উপলব্ধি করি।

৩. হিংসা ও ঈর্ষার পশুকে জবাই করুন:
হিংসা মানুষের ভিতরের এক অদৃশ্য আগুন, যা মানুষকে ধ্বংস করে। ঈর্ষায় আমরা অন্যের সুখ মেনে নিতে পারি না, ফলে নিজের শান্তিও হারিয়ে ফেলি। কোরবানির এই মুহূর্তে হিংসার পশুকে আল্লাহর নামে জবাই করে, অন্তরকে প্রশান্ত করুন। মনে রাখবেন, অন্যের ভালোতে আনন্দিত হওয়াও এক বড় মানুষ হওয়ার লক্ষণ।

৪. মানুষের ক্ষতি না করে উপকারে এগিয়ে যান:
পশুত্বের একটি রূপ হলো—পরের ক্ষতি করে নিজের লাভ খোঁজা। সমাজে অনেকেই আছেন, যারা অন্যকে ঠকিয়ে বড় হতে চান। ঈদের সময়টুকু হোক নিজের মানসিকতা পর্যালোচনার সময়। এবার শপথ হোক—কোনোদিন অন্যের ক্ষতি করবো না, বরং সাধ্যমতো মানুষের উপকার করবো।

৫. মিথ্যার পশুকে জবাই করুন, সত্যকে আলিঙ্গন করুন:
মিথ্যা মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা ও দুর্নীতির সূচনা। আজকাল অনেকে সত্যকে পেছনে ফেলে মিথ্যাকে কৌশল হিসেবে দেখে। ঈদের শিক্ষা হলো—সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকা। চাইলেই আমরা এই পশুটাকে জবাই করতে পারি, কেবল নিজেকে একটু কষ্ট দিয়ে, একটু দায়িত্ববান হয়ে।

৬. তওবার দরজায় নিজেকে সঁপে দিন:
আল্লাহ আমাদের অনেকবার সুযোগ দেন ফিরে আসার। কোরবানি সেই সুবর্ণ সময়, যখন আমরা কৃত পাপের জন্য অনুশোচনা করতে পারি। হিংসা, লোভ, মিথ্যা—এসব থেকে ফিরে এসে যদি আপনি আল্লাহর দরবারে তওবা করেন, তাহলে তিনিই আপনাকে ক্ষমা করবেন। তওবা করাই হলো পশু কোরবানির অন্তরাত্মা।

৭. অসততা ও প্রতারণার পথ ছেড়ে দিন:
সততা এক মূল্যবান গুণ। ব্যবসা, চাকরি, সম্পর্ক—যেখানেই থাকুন না কেন, সৎ থাকা আপনাকে শান্তি এনে দেবে। ঈদের পবিত্র সময়ে প্রতারণার পশুকে জবাই করে দিন। মনে রাখবেন, যে অন্যকে ঠকায়, সে আসলে নিজের বিবেককেই প্রতারণা করে।

৮. অপব্যয় ও বিলাসিতার পশু ত্যাগ করুন:
কোরবানি মানেই প্রচার বা প্রতিযোগিতা নয়। এটা হৃদয়ের ত্যাগের প্রতীক। ঈদের সময় আমরা এমন অনেক কিছু করি, যা শুধু লোক দেখানোর জন্য। দামী পশু কিনে ছবি তুলে পোস্ট করা ঈদের শিক্ষা নয়। আসুন, অপচয় না করে গরিবের মুখে হাসি ফোটাই। সেটিই হবে সবচেয়ে বড় কোরবানি।

৯. নিজের গণ্ডি ছেড়ে অন্যের কথাও ভাবুন:
একমাত্র নিজের পরিবার, নিজের স্বার্থ—এই চক্রেই আমরা ঘুরে বেড়াই। কিন্তু সত্যিকারের মানুষ তো সে-ই, যে নিজের সীমার বাইরে গিয়ে অন্যের দুঃখ অনুভব করতে পারে। ঈদের শিক্ষা হোক—একটু ভালো খেয়েছি তো পাশের দরিদ্র পরিবারটাও যেন কিছু পায়, সেটাও ভাবা।

১০. পরনিন্দা ও গীবতের পশু জবাই করুন:
মুখের গিবত কখনো রক্তপাত করে না, কিন্তু হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। কোরবানির সময় এই মুখের পশুটিকে জবাই করা খুব জরুরি। কথায়, হাসিতে, আলোচনা বা আড্ডায়—কাউকে ছোট না করে, তার অনুপস্থিতিতেও তার সম্মান রক্ষা করা আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব।

১১. মানবসেবাকে ঈদের রূপ দিন:
ঈদে একটি গরিব শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে পারা কি কম আনন্দের? একটা দরিদ্র পরিবারে কিছু মাংস পৌঁছে দেওয়াই বা কম কী? এটাই তো কোরবানির চেতনা। সমাজের জন্য কিছু করা মানেই আল্লাহর পথে কোরবানি। আসুন, এই ঈদে মানবিকতা ও সেবার পশুটিকে মুক্ত করি।

১২. ভেতরের পশুকে চিনুন এবং দমন করুন:
আমরা অনেক সময় বাহ্যিক ইবাদত নিয়ে ব্যস্ত থাকি, কিন্তু অন্তরের ভেতরের পশুটিকে উপেক্ষা করি। সেই পশু আমাদের লজ্জা, রাগ, বিদ্বেষ, অপমানবোধ। এই ঈদে নিজেকে প্রশ্ন করুন—আমার ভেতরে কোন পশু বাস করছে? তাকে চিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবাই করুন।

১৩. নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন:
অর্থ, পোশাক, সামাজিক মর্যাদা নয়—একজন প্রকৃত মানুষ হলো, যে অন্যের দুঃখ বুঝতে পারে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, সত্যকে ভালোবাসে। কোরবানির পশু আপনাকে মানুষ বানাবে না, যদি না আপনি নিজেকে পরিবর্তন করেন। ঈদের পরে যদি আপনি আগের মতোই থাকেন, তবে পশু কোরবানি আপনার কিছুই বদলায়নি।

ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা হলো ত্যাগ। আমরা কোরবানি দেই গরু, ছাগল বা উটের—তবে প্রকৃত কোরবানি কি কেবল এই প্রাণীর রক্ত ঝরানোতে সীমাবদ্ধ? প্রকৃত কোরবানি হলো নিজের ভেতরের সেই পশুটিকে জবাই করা, যে অহংকার করে, হিংসা করে, মিথ্যা বলে, অন্যের ক্ষতি করে।ঈদুল আজহার ত্যাগ আমাদের শুধু পশু জবাইয়ের শিক্ষা দেয় না, দেয় আত্মজবাইয়ের শিক্ষা। এই আত্মজবাই মানে নিজের ভেতরের পশুকে কোরবানি করা। এবার কোরবানির ঈদ হোক আত্মসচেতনতা, আত্মশুদ্ধি ও মানুষের জন্য ভালোবাসার উৎসব।

শেষ কথা:
একজন গরীব মানুষকে এক কেজি মাংস দেওয়ার মাঝে যেমন আনন্দ, তেমনি নিজের অহংকারকে আল্লাহর নামে জবাই করার মাঝেও শান্তি আছে। কোরবানি শুধু গরু বা ছাগলের নয়—মনের পশুর। আল্লাহ যেন আমাদের সেই ত্যাগ কবুল করেন।
এবারের কোরবানি হোক অন্যরকম। শুধু দেহের জন্য নয়, আত্মার জন্যও হোক এই উৎসর্গ। গরু বা ছাগল নয়, মনের পশুকেই আগে জবাই দিন। তাহলেই ঈদ হবে পূর্ণ, ত্যাগ হবে অর্থবহ, আর আপনি হবেন সত্যিকারের একজন আল্লাহভক্ত মানুষ।

🔸লেখক: মীর আব্দুল আলীম জীবনমুখী লেখক, মহাসচিব, কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ। www.mirabdulalim.com