০২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

দেশে ডেঙ্গুর নতুন রোগির ৯৫% এখন ঢাকার বাইরে

বাংলাদেশে চলতি বছরের (১ জানুয়ারি – ১১ জুন ২০২৫) মধ্যে ৫ হাজার ৩০৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এবং সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ২৩ জনে পৌঁছেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৮ জন নতুন রোগী ভর্তি হওয়ায় এ-সংখ্যা ২০২৫ সালে একদিনে সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) দৈনিক বুলেটিন ও সংবাদ সংস্থা বাসসের তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে।

স্থানিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, নতুন রোগীদের প্রায় ৯৫ শতাংশ এখন ঢাকার বাইরে—বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর জেলাগুলোতে থোকায় থোকায় সংক্রমণ বাড়ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম একটি প্রতিবেদনে (বরগুনা জেলা) এক দিনে দু’জন বয়স্ক রোগীর মৃত্যু আলাদাভাবে নথিভুক্ত হয়েছে, যদিও এগুলো এখনো কেন্দ্রীয় হিসাবের সঙ্গে সমন্বয় নাও হতে পারে।

পরীক্ষা: কিট মজুদ ও বাস্তব চ্যালেঞ্জ

ডিজিএইচএস জরুরি ভিত্তিতে ৫ হাজার এনএস১ কিট সরবরাহ করার অনুরোধ পাঠিয়েছে; পাশাপাশি ৫০ হাজার কিট আমদানির প্রক্রিয়া চলেছে, যা সপ্তাহের মধ্যেই পৌঁছানোর কথা।রুটিন রোগনির্ণয়ের বাইরে কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে কেবল মার্চ–এপ্রিলে ৬ ০২৫টি র‍্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট (আরডিটি) কিট ইতিমধ্যে মজুদ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও এর অংশীদাররা, যাতে প্রত্যন্ত এলাকায়ও পরীক্ষা থেমে না থাকে।

জাতীয় পর্যায়ের চাহিদার তুলনায় এই মজুদ অপ্রতুল—বিশেষ করে মফস্বল হাসপাতালগুলোতে এনএস১-এর ঘাটতি দেখা দিচ্ছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। ইউনিসেফ ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার কিট সরবরাহ করলেও সেগুলোর বড় অংশই ইতিমধ্যে ব্যবহার হয়ে গেছে।

পরীক্ষার অগ্রগতি

ডিজিএইচএস জানিয়েছে, বর্তমানে রাজধানী ও বিভাগীয় শহর মিলিয়ে দিনে গড়ে দেড়-দুই হাজার এনএস১ ও আইজিএম/আইজিজি টেস্ট হচ্ছে; বরিশাল মেডিকেল কলেজ ল্যাবে গত সপ্তাহেই নমুনা জমার সংখ্যা ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এই দ্রুত প্রবাহ অব্যাহত রাখতে কিট-সরবরাহের পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে ল্যাব-টেকনিশিয়ানদের পুনঃপ্রশিক্ষণ (রিফ্রেশার) শিগগিরই শুরু হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

টিকা: মজুদ কোথায় দাঁড়িয়ে

১) টিকা অনুমোদন ও নীতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৫ মে ২০২৪-এ টাকেদা TAK-003 (কিউডেঙ্গা) টিকাকে প্রাক-যোগ্যতা দিয়েছে, ৬-১৬ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য ২ ডোজ ব্যবস্থায়।
বাংলাদেশ জাতীয় টিকাদান পরামর্শক কমিটির (নিটাগ) সুপারিশের অপেক্ষায়; অনুমোদন পেলে প্রথম পর্যায়ে শহরঘেঁষা জেলাগুলিতে পরীক্ষামূলক কর্মসূচি চলবে বলে ডিজিএইচএস মহাপরিচালক জানিয়েছেন।
২) মজুদ-অর্ডারের অবস্থা

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা  জানিয়েছেন, সরকার জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ২ লক্ষ কিউডেঙ্গা ডোজ সংগ্রহের আলোচনা চালাচ্ছে, এবং প্রস্তুতকারক টাকেদা ‘চতুর্থ ত্রৈমাসিক – ২০২৫’-এর আগে সরবরাহ সূচি দিতে সম্মত হয়েছে।

বর্তমানে দেশে কোনো ডেঙ্গু-টিকার রিজার্ভ নেই; অর্থাৎ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে রোগ-প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও লার্ভা ধ্বংস অভিযানই প্রধান ভরসা।

কেন গুরুত্ব বাড়ছে

অতীত প্রবণতা: ২০২৪-এ মোট ২০ হাজার ৫৫০ জন আক্রান্ত হলেও চলতি বছর মাত্র পাঁচ মাসেই সে সংখ্যা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

জেলাভিত্তিক বিস্তার: ঢাকার বাইরে রোগীর অনুপাত গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

আবহাওয়াজনিত কারণ: অনিয়মিত বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা এডিস মশার প্রজনন বাড়াচ্ছে, বিশেষত জুন–সেপ্টেম্বর মৌসুমে।

সামনে কী দরকার

কিট সরবরাহ নিশ্চিত করা—দ্রুত আমদানির পথে থাকা ৫০ হাজার এনএস১ কিট জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বণ্টন।

শিগগির টিকা-সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ—নিটাগ সুপারিশ সম্পন্ন করে পাইলট ভ্যাকসিনেশন চালু।

মশা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় উদ্যোগ—ওয়ার্ডভিত্তিক উৎস ধ্বংস অভিযান ও স্কুল-কলেজে সচেতনতা কর্মসূচি।

ডিজিটাল রিপোর্টিং—হাসপাতাল ও ল্যাব থেকে প্রতিদিনের পরীক্ষার তথ্য রিয়েল-টাইমে ডেটাবেসে আপলোড করে হটস্পট মানচিত্র প্রস্তুত করা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পরীক্ষার গতি বাড়ানো এবং দ্রুত দরিদ্র পরিবারের নাগালের মধ্যে টিকা আনা-ই হবে এ-মুহূর্তে ডেঙ্গু মোকাবিলার টার্নিং-পয়েন্ট।

দেশে ডেঙ্গুর নতুন রোগির ৯৫% এখন ঢাকার বাইরে

০৭:৩৩:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

বাংলাদেশে চলতি বছরের (১ জানুয়ারি – ১১ জুন ২০২৫) মধ্যে ৫ হাজার ৩০৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এবং সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ২৩ জনে পৌঁছেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৮ জন নতুন রোগী ভর্তি হওয়ায় এ-সংখ্যা ২০২৫ সালে একদিনে সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) দৈনিক বুলেটিন ও সংবাদ সংস্থা বাসসের তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে।

স্থানিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, নতুন রোগীদের প্রায় ৯৫ শতাংশ এখন ঢাকার বাইরে—বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর জেলাগুলোতে থোকায় থোকায় সংক্রমণ বাড়ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম একটি প্রতিবেদনে (বরগুনা জেলা) এক দিনে দু’জন বয়স্ক রোগীর মৃত্যু আলাদাভাবে নথিভুক্ত হয়েছে, যদিও এগুলো এখনো কেন্দ্রীয় হিসাবের সঙ্গে সমন্বয় নাও হতে পারে।

পরীক্ষা: কিট মজুদ ও বাস্তব চ্যালেঞ্জ

ডিজিএইচএস জরুরি ভিত্তিতে ৫ হাজার এনএস১ কিট সরবরাহ করার অনুরোধ পাঠিয়েছে; পাশাপাশি ৫০ হাজার কিট আমদানির প্রক্রিয়া চলেছে, যা সপ্তাহের মধ্যেই পৌঁছানোর কথা।রুটিন রোগনির্ণয়ের বাইরে কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে কেবল মার্চ–এপ্রিলে ৬ ০২৫টি র‍্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট (আরডিটি) কিট ইতিমধ্যে মজুদ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও এর অংশীদাররা, যাতে প্রত্যন্ত এলাকায়ও পরীক্ষা থেমে না থাকে।

জাতীয় পর্যায়ের চাহিদার তুলনায় এই মজুদ অপ্রতুল—বিশেষ করে মফস্বল হাসপাতালগুলোতে এনএস১-এর ঘাটতি দেখা দিচ্ছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। ইউনিসেফ ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার কিট সরবরাহ করলেও সেগুলোর বড় অংশই ইতিমধ্যে ব্যবহার হয়ে গেছে।

পরীক্ষার অগ্রগতি

ডিজিএইচএস জানিয়েছে, বর্তমানে রাজধানী ও বিভাগীয় শহর মিলিয়ে দিনে গড়ে দেড়-দুই হাজার এনএস১ ও আইজিএম/আইজিজি টেস্ট হচ্ছে; বরিশাল মেডিকেল কলেজ ল্যাবে গত সপ্তাহেই নমুনা জমার সংখ্যা ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এই দ্রুত প্রবাহ অব্যাহত রাখতে কিট-সরবরাহের পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে ল্যাব-টেকনিশিয়ানদের পুনঃপ্রশিক্ষণ (রিফ্রেশার) শিগগিরই শুরু হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

টিকা: মজুদ কোথায় দাঁড়িয়ে

১) টিকা অনুমোদন ও নীতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৫ মে ২০২৪-এ টাকেদা TAK-003 (কিউডেঙ্গা) টিকাকে প্রাক-যোগ্যতা দিয়েছে, ৬-১৬ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য ২ ডোজ ব্যবস্থায়।
বাংলাদেশ জাতীয় টিকাদান পরামর্শক কমিটির (নিটাগ) সুপারিশের অপেক্ষায়; অনুমোদন পেলে প্রথম পর্যায়ে শহরঘেঁষা জেলাগুলিতে পরীক্ষামূলক কর্মসূচি চলবে বলে ডিজিএইচএস মহাপরিচালক জানিয়েছেন।
২) মজুদ-অর্ডারের অবস্থা

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা  জানিয়েছেন, সরকার জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ২ লক্ষ কিউডেঙ্গা ডোজ সংগ্রহের আলোচনা চালাচ্ছে, এবং প্রস্তুতকারক টাকেদা ‘চতুর্থ ত্রৈমাসিক – ২০২৫’-এর আগে সরবরাহ সূচি দিতে সম্মত হয়েছে।

বর্তমানে দেশে কোনো ডেঙ্গু-টিকার রিজার্ভ নেই; অর্থাৎ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে রোগ-প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও লার্ভা ধ্বংস অভিযানই প্রধান ভরসা।

কেন গুরুত্ব বাড়ছে

অতীত প্রবণতা: ২০২৪-এ মোট ২০ হাজার ৫৫০ জন আক্রান্ত হলেও চলতি বছর মাত্র পাঁচ মাসেই সে সংখ্যা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

জেলাভিত্তিক বিস্তার: ঢাকার বাইরে রোগীর অনুপাত গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

আবহাওয়াজনিত কারণ: অনিয়মিত বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা এডিস মশার প্রজনন বাড়াচ্ছে, বিশেষত জুন–সেপ্টেম্বর মৌসুমে।

সামনে কী দরকার

কিট সরবরাহ নিশ্চিত করা—দ্রুত আমদানির পথে থাকা ৫০ হাজার এনএস১ কিট জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বণ্টন।

শিগগির টিকা-সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ—নিটাগ সুপারিশ সম্পন্ন করে পাইলট ভ্যাকসিনেশন চালু।

মশা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় উদ্যোগ—ওয়ার্ডভিত্তিক উৎস ধ্বংস অভিযান ও স্কুল-কলেজে সচেতনতা কর্মসূচি।

ডিজিটাল রিপোর্টিং—হাসপাতাল ও ল্যাব থেকে প্রতিদিনের পরীক্ষার তথ্য রিয়েল-টাইমে ডেটাবেসে আপলোড করে হটস্পট মানচিত্র প্রস্তুত করা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পরীক্ষার গতি বাড়ানো এবং দ্রুত দরিদ্র পরিবারের নাগালের মধ্যে টিকা আনা-ই হবে এ-মুহূর্তে ডেঙ্গু মোকাবিলার টার্নিং-পয়েন্ট।