১২:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

ইসরায়েলি হামলায় কোণঠাসা ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব

সংক্ষেপ

  • ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক শীর্ষ নেতৃত্বে একক প্রহারে বড় ধস
    •তেহরানের পাল্টা সামরিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে সীমিত
    • পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে
    • উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা
    • হিজবুল্লাহসহ আঞ্চলিক মিত্ররা দুর্বল অবস্থায়

রাতভর জোড়া আঘাতে সংঘাতের নতুন মাত্রা

দুবাইয়ের নিরাপত্তা সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইসরায়েল একযোগে তেহরানসহ কয়েকটি শহরে পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদর দফতরে হামলা চালায়। এতে অন্তত ২০ জন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু একে “দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের শুরু” বলে উল্লেখ করেছেন, যার লক্ষ্য তেহরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরির পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া।

তেহরানের সীমিত প্রতিক্রিয়া-সামর্থ্য

হামাসের ২০২৩ সালের আক্রমণের পর থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার, ড্রোন ঘাঁটি ও আঞ্চলিক প্রভাবশক্তি ধারাবাহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বাস্তবতায় তেহরান সমপর্যায়ের পাল্টা হামলা চালানোর সক্ষমতা অনেকটাই হারিয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। তবু কার্নেগি মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রের মোহানাদ হাজ আলি সতর্ক করেছেন—“আত্মসমর্পণ ইরানের টিকে থাকার পথ নয়”; তাদের দুর্বল মনে করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

No photo description available.

পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি

গালফ রিসার্চ সেন্টারের আবদেল আজিজ আল-সাগেরের মতে, তেহরান গোপনে সমৃদ্ধকরণ স্থগিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা কমানোর পথ খুঁজতে পারে। বিকল্প না পেলে তারা পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) থেকে সরে গিয়ে দ্রুত ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের ঝুঁকিপূর্ণ পথে হাঁটতে পারে—যা কার্যত যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এ প্রসঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই সামরিক হুমকি দিয়েছেন, যাতে ইরান “পারমাণবিক অস্ত্রের আশা সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে।”

নেতৃত্বের ভেতরে আতঙ্ক ও জনঅসন্তোষের শঙ্কা

দীর্ঘদিনের মুদ্রাপতন, মূল্যস্ফীতি ও নিপীড়নের ফলে জমে থাকা জনরোষ আবারও বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর অনেকে মনে করেন, ২০২০-তে কাসেম সোলাইমানি হত্যার পর থেকেই ‘সাম্রাজ্য খসে পড়া’ শুরু হয়েছে। এখন প্রশ্ন—আরও দমনপীড়ন কি পরিস্থিতি সামাল দেবে, নাকি উত্তেজনা বাড়াবে?

ইরান-ইসরায়েল বন্ধু থেকে যেভাবে চরম শত্রু হয়ে উঠলো - BBC News বাংলা

আঞ্চলিক মিত্রদের নিস্তেজ অবস্থান

লেবাননের হিজবুল্লাহ-সহ ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা নিজ নিজ যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত বছরের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষে সংগঠনের নেতৃত্ব ও যোদ্ধা—দুয়োরই—বড় ধাক্কা খেয়েছে। ফলে ইরান চাইলেও তারা সরাসরি প্রতিশোধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারছে না; লেবাননে আরেক দফা ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

উপসাগরীয় উদ্বেগ ও সমাধানের পথ

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত সরাসরি উপসাগরীয় আকাশপথ ও মার্কিন ঘাঁটিসমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোকেও জড়িয়ে ফেলতে পারে। তাই উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলো নিজেদের সরকারি বক্তব্য সতর্কভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখছে। বিশ্লেষক সার্কিস নাওমে মন্তব্য করেছেন, “ইরানি সাম্রাজ্য পড়তির মুখে। সামরিক নয়, কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমেই তারা পতনের ধরন নির্ধারণ করতে পারে।”

ইসরায়েলি হামলায় কোণঠাসা ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব

০৫:১০:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

সংক্ষেপ

  • ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক শীর্ষ নেতৃত্বে একক প্রহারে বড় ধস
    •তেহরানের পাল্টা সামরিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে সীমিত
    • পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে
    • উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা
    • হিজবুল্লাহসহ আঞ্চলিক মিত্ররা দুর্বল অবস্থায়

রাতভর জোড়া আঘাতে সংঘাতের নতুন মাত্রা

দুবাইয়ের নিরাপত্তা সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইসরায়েল একযোগে তেহরানসহ কয়েকটি শহরে পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদর দফতরে হামলা চালায়। এতে অন্তত ২০ জন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু একে “দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের শুরু” বলে উল্লেখ করেছেন, যার লক্ষ্য তেহরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরির পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া।

তেহরানের সীমিত প্রতিক্রিয়া-সামর্থ্য

হামাসের ২০২৩ সালের আক্রমণের পর থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার, ড্রোন ঘাঁটি ও আঞ্চলিক প্রভাবশক্তি ধারাবাহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বাস্তবতায় তেহরান সমপর্যায়ের পাল্টা হামলা চালানোর সক্ষমতা অনেকটাই হারিয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। তবু কার্নেগি মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রের মোহানাদ হাজ আলি সতর্ক করেছেন—“আত্মসমর্পণ ইরানের টিকে থাকার পথ নয়”; তাদের দুর্বল মনে করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

No photo description available.

পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি

গালফ রিসার্চ সেন্টারের আবদেল আজিজ আল-সাগেরের মতে, তেহরান গোপনে সমৃদ্ধকরণ স্থগিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা কমানোর পথ খুঁজতে পারে। বিকল্প না পেলে তারা পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) থেকে সরে গিয়ে দ্রুত ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের ঝুঁকিপূর্ণ পথে হাঁটতে পারে—যা কার্যত যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এ প্রসঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই সামরিক হুমকি দিয়েছেন, যাতে ইরান “পারমাণবিক অস্ত্রের আশা সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে।”

নেতৃত্বের ভেতরে আতঙ্ক ও জনঅসন্তোষের শঙ্কা

দীর্ঘদিনের মুদ্রাপতন, মূল্যস্ফীতি ও নিপীড়নের ফলে জমে থাকা জনরোষ আবারও বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর অনেকে মনে করেন, ২০২০-তে কাসেম সোলাইমানি হত্যার পর থেকেই ‘সাম্রাজ্য খসে পড়া’ শুরু হয়েছে। এখন প্রশ্ন—আরও দমনপীড়ন কি পরিস্থিতি সামাল দেবে, নাকি উত্তেজনা বাড়াবে?

ইরান-ইসরায়েল বন্ধু থেকে যেভাবে চরম শত্রু হয়ে উঠলো - BBC News বাংলা

আঞ্চলিক মিত্রদের নিস্তেজ অবস্থান

লেবাননের হিজবুল্লাহ-সহ ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা নিজ নিজ যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত বছরের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষে সংগঠনের নেতৃত্ব ও যোদ্ধা—দুয়োরই—বড় ধাক্কা খেয়েছে। ফলে ইরান চাইলেও তারা সরাসরি প্রতিশোধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারছে না; লেবাননে আরেক দফা ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

উপসাগরীয় উদ্বেগ ও সমাধানের পথ

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত সরাসরি উপসাগরীয় আকাশপথ ও মার্কিন ঘাঁটিসমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোকেও জড়িয়ে ফেলতে পারে। তাই উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলো নিজেদের সরকারি বক্তব্য সতর্কভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখছে। বিশ্লেষক সার্কিস নাওমে মন্তব্য করেছেন, “ইরানি সাম্রাজ্য পড়তির মুখে। সামরিক নয়, কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমেই তারা পতনের ধরন নির্ধারণ করতে পারে।”