বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে। এক সময়ের ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ এখন অনেকটাই কমে এসেছে। গত ১০ মাসে এই রিজার্ভ ১৮ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যেই ওঠানামা করেছে। প্রবল রেমিট্যান্স প্রবাহ, রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা, আবার কখনও ঋণ পরিশোধ ও আমদানি ব্যয়ের বাড়তি চাপ—সব মিলিয়ে রিজার্ভ ঘিরে তৈরি হয়েছে একটি জটিল অথচ সতর্কতার মিশ্র চিত্র।
বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাসের শেষে BPM6 হিসাব অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে। এপ্রিল মাসে এই রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ এক মাসেই প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে গত ১০ মাস ধরে এই রিজার্ভ ১৮ থেকে ২২ বিলিয়নের ঘরেই ওঠানামা করছে।
গত ১০ মাসের ওঠানামা: সময়ক্রম
- জুলাই ২০২৪: অর্থবছরের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। আকুর দায় পরিশোধের পর তা ২০ বিলিয়নের ঘরে নেমে আসে।
- অগাস্ট থেকে অক্টোবর: এই তিন মাসে রিজার্ভ আরও কমে ১৯ দশমিক ৮৩ বিলিয়নে দাঁড়ায়।
- নভেম্বর ২০২৪: ১৮ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারে রিজার্ভ নামে, যা ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
- ডিসেম্বর ২০২৪: হঠাৎ করে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ২১ দশমিক ৩৯ বিলিয়নে।
- এপ্রিল ২০২৫: সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার।
- মে ২০২৫: আকুর দায় পরিশোধের পর ফের কমে ২০ দশমিক ৫৪ বিলিয়নে।
রেমিট্যান্স ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি, তবুও রিজার্ভ বাড়ছে না কেন?
চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ২৮% এবং রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ১০%। এই দুই খাতে বাড়তি আয় হয়েছে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এর পরও রিজার্ভে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি আসেনি। কারণ অনুসন্ধান করলে পাওয়া যায়:
- প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI): গত ১০ মাসে কমেছে ৩৭ কোটি ডলার।
- বিদেশি অনুদান: কমেছে ১৮৬ কোটি ডলার।
- মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি ঋণ: কমেছে ১৩৬ কোটি ডলার।
- সামগ্রিকভাবে: এই তিনটি খাতে মোট ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের বাড়তি আমদানি ব্যয়, বিদেশি ঋণ পরিশোধ ও সেবা খাতের ব্যয়। গত তিন বছরে বড় পরিমাণ ঋণ পরিশোধের ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেও তা রিজার্ভে বড় উল্লম্ফন ঘটাতে পারেনি।