০২:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
শিক্ষার্থী-শিক্ষকের প্রেমের গল্প নিয়ে বিতর্কে বন্ধ হলো দক্ষিণ কোরিয়ার কে-ড্রামা পাকিস্তানে সীমাহীন শ্রমিক শোষণ আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাসাদে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক: ক্লিওপেট্রা ও সিজারের কথোপকথন হিউএনচাঙ (পর্ব-১৪৯) বাংলাদেশে ইভ টিজিং- নারী মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতার সংকট এপি’র প্রতিবেদন: হাসিনা-বিরোধী বিদ্রোহের পরিণতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ মধুমতী নদী: দক্ষিনের যোগাযোগ পথ মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল ধ্বংস করা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর চিরসবুজ নায়িকা মৌসুমী: রূপালী পর্দার এক যুগের প্রতীক কাপ্তাই লেকের মাছের বৈচিত্র্য ও মাছ ধরার রীতি – পার্বত্য চট্টগ্রামের জলে জীবনের গল্প

কীভাবে ইউএই ওপেককে ভাঙতে পারে

মে-এর শেষ দিনে ওপেক প্লাস ঘোষণা করে, জুলাইয়ে অপরিশোধিত তেল উত্তোলন দিনে আরও ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল বাড়ানো হবে। টানা তিন মাসের এই বৃদ্ধি বিশ্ব চাহিদার ১ দশমিক ২ শতাংশ। দেখলে মনে হতে পারে—কার্টেল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। বাস্তবে ৬৫ বছরের ইতিহাসে এটি তাদের সবচেয়ে জটিল সংকটের শুরু হতে পারে।

রেকর্ড উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনের বাস্তবতা

বিশ্বজুড়ে তেলের চাহিদা আগামী দশকে চূড়ায় পৌঁছে কমে যেতে পারে—এই আশঙ্কায় সদস্যরা দ্রুত মজুদ বিক্রি করতে চাইছে। তেল-নির্ভর অর্থনীতি বদলাতেও বিপুল ব্যয় দরকার। ফলে কার্টেলের মূল নীতি—কোটা মেনে চলা—অনেকে ভাঙছে। সৌদি আরব শৃঙ্খলা রক্ষা করতে চাইলেও সবচেয়ে বড় “উপাত্ত-চালাক” সংযুক্ত আরব আমিরাতকে তেমন কিছু বলছে না।

চাহিদা ও বাজারের অবস্থা

গোষ্ঠী দাবি করছে—“ভাল মৌলিক পরিস্থিতি” তেলের বেশি সরবরাহ চায়। কিন্তু নিজস্ব পূর্বাভাসসহ অধিকাংশ বিশ্লেষণই ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের ক্ষতি ধরেই চাহিদা কমিয়ে দেখিয়েছে। ওপেক বহির্ভূত দেশগুলোও ঝাঁকে ঝাঁকে তেল তুলছে; বাজার মূলত তেলে ভাসছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখার চেষ্টা?

আরও একটি ব্যাখ্যা—মার্কিন প্রেসিডেন্ট সস্তা পেট্রল চান, তাই উপসাগরীয় দেশগুলো উৎপাদন বাড়িয়ে তাঁকে সন্তুষ্ট রাখছে। আবার কেউ বলেন, বাজারে হারানো শেয়ার পুনর্দখলই আসল লক্ষ্য। তবে অতিরিক্ত সরবরাহ যদি দাম ৫০ ডলারের নিচে নামিয়ে দেয়, অনেক সদস্যই বিদ্রোহ করতে পারে।

কোটা লঙ্ঘন ও শৃঙ্খলা সমস্যা

ইরাক কিছুটা কমালেও কাজাখস্তান এখনো কোটা ভাঙছে; তাদের উৎপাদনের বড় অংশ বহুজাতিক কোম্পানির হাতে। তবে সবচেয়ে জটিল শিষ্য ইউএই। সরকারি হিসাবে দেশটি দিনে ২.৯ মিলিয়ন ব্যারেল তোলে—ঠিক কোটার সমান। অথচ ট্যাঙ্কার ট্র্যাকার বলছে শুধু রপ্তানিই প্রায় ২.৮ মিলিয়ন; স্থানীয় শোধনাগার আর মজুদ ধরলে প্রকৃত উৎপাদন আরও বেশি।

ইউএই এর গোপন অতিরিক্ত উৎপাদন

স্বাধীন তথ্য না থাকায় সঠিক হিসাব অসম্ভব। “সেকেন্ডারি সোর্স” নামের আট ব্যবসায়িক কনসালটেন্সির গড় পরিসংখ্যান ওপেক ব্যবহার করে, যা অনেকেই ‘চাপা পড়া’ সংখ্যা বলে মানেন। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) এপ্রিলের উৎপাদন ৩.৩ মিলিয়ন ব্যারেল ধরেছে; অন্য গবেষকরা ৩.৪ মিলিয়নও বলছেন।

সৌদি-আমিরাত উত্তেজনার উৎস

বহু সম্মেলনে সৌদিরা এখন আমিরাতিদের সঙ্গে অনেক ঠান্ডা। ২০২১-এর পর থেকে কোটার ভাগ নিয়ে দুই দেশের টানাপড়েন বেড়েছে; ইউএই একাধিকবার ওপেক ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল। নতুন করে সমালোচনা করলে তারা সত্যিই হাঁটতে পারে—এই ভয় সৌদিদের।

কম দামে টিকে থাকার ইউএই ক্ষমতা

ইউএই-র বাজেট ভারসাম্য করতে তেলের দর লাগবে ব্যারেলপ্রতি মাত্র ৫০ ডলার; সৌদি আরবের প্রয়োজন ৯০ ডলার, কারণ তারা বিলিয়ন-ডলারের রিয়েল-এস্টেট প্রকল্পে ঢালছে। ২০২৭-এর মধ্যে ইউএই আরও ৬২ বিলিয়ন ডলার খরচ করে সক্ষমতা ৫ মিলিয়ন ব্যারেলে নিতে চায় (২০২১-এ ছিল ৩.৬ মিলিয়ন)। কোটা সে অনুযায়ী বাড়েনি।

কোটা পুনর্বিন্যাস বিলম্ব ও ভবিষ্যৎ সংঘাত

গত বছর ৩ লাখ ব্যারেল বাড়তি কোটা ধাপে ধাপে পায় ইউএই; পূর্ণাঙ্গ পুনর্বিন্যাস এ বছর হওয়ার কথা ছিল, তা ২০২৭ পর্যন্ত ঠেকিয়ে দিয়েছে ওপেক প্লাস। আমিরাত এ অবরোধ মানবে না বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। এক পর্যায়ে সৌদি-আমিরাতের প্রকাশ্য সংঘাত অবধারিত, যা কার্টেলকেই অকার্যকর করে দিতে পারে।

ওপেক কি ভাঙবে?

বিশ্ব তেলের বাজারে ওপেক প্লাসের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক কম। সবচেয়ে বড় রফতানিকারক সৌদি আরব ও তৃতীয় স্থানের ইউএই মুখোমুখি হলে উৎপাদন কোটা ধসে পড়তে পারে। এমন অচলাবস্থা চলতে থাকলে ওপেক-এর মৌল কাঠামোই ভেঙে যেতে পারে—যার ধাক্কা পড়বে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে।

শিক্ষার্থী-শিক্ষকের প্রেমের গল্প নিয়ে বিতর্কে বন্ধ হলো দক্ষিণ কোরিয়ার কে-ড্রামা

কীভাবে ইউএই ওপেককে ভাঙতে পারে

১২:৩০:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

মে-এর শেষ দিনে ওপেক প্লাস ঘোষণা করে, জুলাইয়ে অপরিশোধিত তেল উত্তোলন দিনে আরও ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল বাড়ানো হবে। টানা তিন মাসের এই বৃদ্ধি বিশ্ব চাহিদার ১ দশমিক ২ শতাংশ। দেখলে মনে হতে পারে—কার্টেল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। বাস্তবে ৬৫ বছরের ইতিহাসে এটি তাদের সবচেয়ে জটিল সংকটের শুরু হতে পারে।

রেকর্ড উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনের বাস্তবতা

বিশ্বজুড়ে তেলের চাহিদা আগামী দশকে চূড়ায় পৌঁছে কমে যেতে পারে—এই আশঙ্কায় সদস্যরা দ্রুত মজুদ বিক্রি করতে চাইছে। তেল-নির্ভর অর্থনীতি বদলাতেও বিপুল ব্যয় দরকার। ফলে কার্টেলের মূল নীতি—কোটা মেনে চলা—অনেকে ভাঙছে। সৌদি আরব শৃঙ্খলা রক্ষা করতে চাইলেও সবচেয়ে বড় “উপাত্ত-চালাক” সংযুক্ত আরব আমিরাতকে তেমন কিছু বলছে না।

চাহিদা ও বাজারের অবস্থা

গোষ্ঠী দাবি করছে—“ভাল মৌলিক পরিস্থিতি” তেলের বেশি সরবরাহ চায়। কিন্তু নিজস্ব পূর্বাভাসসহ অধিকাংশ বিশ্লেষণই ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের ক্ষতি ধরেই চাহিদা কমিয়ে দেখিয়েছে। ওপেক বহির্ভূত দেশগুলোও ঝাঁকে ঝাঁকে তেল তুলছে; বাজার মূলত তেলে ভাসছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখার চেষ্টা?

আরও একটি ব্যাখ্যা—মার্কিন প্রেসিডেন্ট সস্তা পেট্রল চান, তাই উপসাগরীয় দেশগুলো উৎপাদন বাড়িয়ে তাঁকে সন্তুষ্ট রাখছে। আবার কেউ বলেন, বাজারে হারানো শেয়ার পুনর্দখলই আসল লক্ষ্য। তবে অতিরিক্ত সরবরাহ যদি দাম ৫০ ডলারের নিচে নামিয়ে দেয়, অনেক সদস্যই বিদ্রোহ করতে পারে।

কোটা লঙ্ঘন ও শৃঙ্খলা সমস্যা

ইরাক কিছুটা কমালেও কাজাখস্তান এখনো কোটা ভাঙছে; তাদের উৎপাদনের বড় অংশ বহুজাতিক কোম্পানির হাতে। তবে সবচেয়ে জটিল শিষ্য ইউএই। সরকারি হিসাবে দেশটি দিনে ২.৯ মিলিয়ন ব্যারেল তোলে—ঠিক কোটার সমান। অথচ ট্যাঙ্কার ট্র্যাকার বলছে শুধু রপ্তানিই প্রায় ২.৮ মিলিয়ন; স্থানীয় শোধনাগার আর মজুদ ধরলে প্রকৃত উৎপাদন আরও বেশি।

ইউএই এর গোপন অতিরিক্ত উৎপাদন

স্বাধীন তথ্য না থাকায় সঠিক হিসাব অসম্ভব। “সেকেন্ডারি সোর্স” নামের আট ব্যবসায়িক কনসালটেন্সির গড় পরিসংখ্যান ওপেক ব্যবহার করে, যা অনেকেই ‘চাপা পড়া’ সংখ্যা বলে মানেন। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) এপ্রিলের উৎপাদন ৩.৩ মিলিয়ন ব্যারেল ধরেছে; অন্য গবেষকরা ৩.৪ মিলিয়নও বলছেন।

সৌদি-আমিরাত উত্তেজনার উৎস

বহু সম্মেলনে সৌদিরা এখন আমিরাতিদের সঙ্গে অনেক ঠান্ডা। ২০২১-এর পর থেকে কোটার ভাগ নিয়ে দুই দেশের টানাপড়েন বেড়েছে; ইউএই একাধিকবার ওপেক ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল। নতুন করে সমালোচনা করলে তারা সত্যিই হাঁটতে পারে—এই ভয় সৌদিদের।

কম দামে টিকে থাকার ইউএই ক্ষমতা

ইউএই-র বাজেট ভারসাম্য করতে তেলের দর লাগবে ব্যারেলপ্রতি মাত্র ৫০ ডলার; সৌদি আরবের প্রয়োজন ৯০ ডলার, কারণ তারা বিলিয়ন-ডলারের রিয়েল-এস্টেট প্রকল্পে ঢালছে। ২০২৭-এর মধ্যে ইউএই আরও ৬২ বিলিয়ন ডলার খরচ করে সক্ষমতা ৫ মিলিয়ন ব্যারেলে নিতে চায় (২০২১-এ ছিল ৩.৬ মিলিয়ন)। কোটা সে অনুযায়ী বাড়েনি।

কোটা পুনর্বিন্যাস বিলম্ব ও ভবিষ্যৎ সংঘাত

গত বছর ৩ লাখ ব্যারেল বাড়তি কোটা ধাপে ধাপে পায় ইউএই; পূর্ণাঙ্গ পুনর্বিন্যাস এ বছর হওয়ার কথা ছিল, তা ২০২৭ পর্যন্ত ঠেকিয়ে দিয়েছে ওপেক প্লাস। আমিরাত এ অবরোধ মানবে না বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। এক পর্যায়ে সৌদি-আমিরাতের প্রকাশ্য সংঘাত অবধারিত, যা কার্টেলকেই অকার্যকর করে দিতে পারে।

ওপেক কি ভাঙবে?

বিশ্ব তেলের বাজারে ওপেক প্লাসের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক কম। সবচেয়ে বড় রফতানিকারক সৌদি আরব ও তৃতীয় স্থানের ইউএই মুখোমুখি হলে উৎপাদন কোটা ধসে পড়তে পারে। এমন অচলাবস্থা চলতে থাকলে ওপেক-এর মৌল কাঠামোই ভেঙে যেতে পারে—যার ধাক্কা পড়বে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে।