০৩:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
বগুড়ার গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ ডায়াবেটিসের নীরব বিস্তার: কাজের চাপ, চিনি আর স্ক্রিনটাইমের জটিল ফাঁদে বাংলাদেশ গ্রে’স অ্যানাটমি’ তারকা জেমস পিকেন্স জুনিয়রের প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা, স্ক্রিনিংয়ের আহ্বান শীর্ষ বিদেশি শিক্ষার্থীর কাছে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আকর্ষণীয়, তবু অনিশ্চয়তা বাড়ছে বেলেমের কপ৩০–এ যুক্তরাষ্ট্র অনুপস্থিত, জলবায়ু নেতৃত্বে আলোচনায় চীন রাস্তা মেরামতে নতুন সহকারী এআই, দুর্ঘটনা কমাতে দৌড়াচ্ছে ডেটা ফেনীতে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে আগুন, তদন্তে পুলিশ সেনকাকু ঘিরে চীনা টহল রেকর্ড সময় ধরে, জাপানের উদ্বেগ বাড়ছে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ককটেল বিস্ফোরণ, আহত এক পথচারী গাজীপুরে আবার গ্রামীণ ব্যাংকে হামলা — এক সপ্তাহে ৫ জেলার ৬টি শাখায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা

এবারের বাজেটে উৎপাদন ও রফতানি সহায়ক নয় কেন

বাংলাদেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে “রুটিন” আখ্যা দিয়ে শীর্ষ ব্যবসায়ী, পরিকল্পনাবিদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছেন—এই বাজেট রপ্তানি-বৃদ্ধি ও শিল্প-উৎপাদনের জন্য জরুরি কাঠামোগত সংস্কারের দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এলডিসি উত্তরণের ঠিক আগে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

শিল্পপতিদের সরাসরি হুঁশিয়ারি

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী মনে করেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন ও নতুন তিনটি বন্দরের সমমানের উন্নয়ন, অপ্রতিরোধ্য বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ এবং এক শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স প্রত্যাহার—এই তিনটি পদক্ষেপ ছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও রপ্তানিমুখী শিল্প দাঁড়াতে পারবে না।” তিনি ৯০ দিনের জরুরি কর্মপরিকল্পনা বাজেটে দেখতে চেয়েছিলেন, যা অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

রপ্তানি নির্ভরতা: এক ঝুঁকির ওপর ৮০ শতাংশ

আজও তৈরি-পোশাক (আরএমজি) একাই দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি নিয়ে যায়, যা দামে ওঠা-নামা ও বাজার পাল্টানোর ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলতায় বাধা ও নতুন ট্যারিফের শক-ঝড়ে এই একক নির্ভরতা বড় ধাক্কা খেতে পারে।

লজিস্টিক্সের সূচকে পিছিয়ে

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক ‘কানেক্টিং টু কম্পিট ২০২৩’ প্রতিবেদনে ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের লজিস্টিক পারফরম্যান্স সূচক (এলপিআই) স্কোর মাত্র ২.৬; অবস্থান ৮৮তম। ধীর কাস্টমস, দুর্বল অবকাঠামো ও ট্র্যাক-অ্যান্ড-ট্রেস ব্যবস্থার ঘাটতি পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ। অর্থাৎ পণ্য বানালেও দ্রুত ও কম খরচে বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে পারছে না বাংলাদেশ।

 লক্ষ্য আছেপদক্ষেপ নেই’—সিপিডি

বাজেটের উদ্দেশ্য ইতিবাচক হলেও বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট উপায় নেই বলে মত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর। সংস্থাটির মতে, প্রতিশ্রুত সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বা বৈষম্য ঘোচাতে যে নীতি বলা হয়েছে, তা পূরণে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও সংস্কারপন্থী করনীতি অনুপস্থিত। তাদের বিশ্লেষণে, এক শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স এসএমইদের কার্যকর করহার ১০ শতাংশের ওপর তুলে দিচ্ছে, যা রপ্তানি-মুখী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য “অবিচারসুলভ”।

সরকারের ভর্তুকি পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে আইএমএফ | undefined

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সতর্ক বার্তা

২০২৩ সালের আর্টিকেল IV পর্যালোচনায় আইএমএফ স্পষ্ট করে বলেছে—বাণিজ্য উদারীকরণ ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ছাড়া রপ্তানি বৈচিত্র্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে না। বাজেটে শুল্ক-কোটার সুরক্ষা কিছুটা কমানো হলেও ‘সিঙ্গেল-উইন্ডো’ বা অনলাইন ল্যান্ড পোর্টাল চালুর মতো কাঠামোগত সংস্কারের খসড়া অনুপস্থিত।

পাঁচটি তাৎক্ষণিক সংস্কার পরামর্শ

১) ৯০ দিনের অ্যাকশন প্ল্যান—বন্দর, কাস্টমস ও গ্যাস সংযোগে নির্দিষ্ট টাইমলাইন প্রকাশ।
২) সিঙ্গেল-উইন্ডো সার্ভিস—রপ্তানি ও আমদানি ছাড়পত্রের কাগুজে প্রক্রিয়া এক প্ল্যাটফর্মে আনা।
৩) শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাস—স্থানীয় বাজার সুরক্ষার বদলে বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে অংশগ্রহণকে পুরস্কৃত করা।
৪) শক্তি নিরাপত্তা—স্পট এলএনজি-নির্ভরতা কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস চুক্তি ও নবায়নযোগ্য উৎসে তহবিল বাড়ানো।
৫) করজাল সম্প্রসারণ ও টার্নওভার ট্যাক্স পর্যালোচনা—লভ্যাংশের ওপর করকে কেন্দ্রীয় করা, বিক্রয়ের ওপর নয়।

বাজেটের ঘাটতি বা মুদ্রাস্ফীতি সামাল দেওয়া একটি বাস্তবতা; তবে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানি-ভিত্তিক উৎপাদনে কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া পথ নেই। আন্তর্জাতিক সূচক, আইএমএফের শর্ত ও দেশীয় ব্যবসায়ীদের একক স্বর—সবই একই বার্তা দিচ্ছে: বহুমুখী রপ্তানি ও দক্ষ লজিস্টিক্স না থাকলে এলডিসি-উত্তর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সঙ্কুচিত হবে, কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও সীমিত হয়ে পড়বে। এখনই সাহসী পদক্ষেপ নিলে বাজেট সত্যিকার অর্থে উৎপাদন-বান্ধব ও রপ্তানি-স্থিতিশীল হতে পারে—আর না হলে ‘রুটিন বাজেট’-এর সীমানা বেঁধে দেবে আগামীর প্রবৃদ্ধি।

জনপ্রিয় সংবাদ

বগুড়ার গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ

এবারের বাজেটে উৎপাদন ও রফতানি সহায়ক নয় কেন

০৩:৫৪:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে “রুটিন” আখ্যা দিয়ে শীর্ষ ব্যবসায়ী, পরিকল্পনাবিদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছেন—এই বাজেট রপ্তানি-বৃদ্ধি ও শিল্প-উৎপাদনের জন্য জরুরি কাঠামোগত সংস্কারের দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এলডিসি উত্তরণের ঠিক আগে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

শিল্পপতিদের সরাসরি হুঁশিয়ারি

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী মনে করেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন ও নতুন তিনটি বন্দরের সমমানের উন্নয়ন, অপ্রতিরোধ্য বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ এবং এক শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স প্রত্যাহার—এই তিনটি পদক্ষেপ ছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও রপ্তানিমুখী শিল্প দাঁড়াতে পারবে না।” তিনি ৯০ দিনের জরুরি কর্মপরিকল্পনা বাজেটে দেখতে চেয়েছিলেন, যা অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

রপ্তানি নির্ভরতা: এক ঝুঁকির ওপর ৮০ শতাংশ

আজও তৈরি-পোশাক (আরএমজি) একাই দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি নিয়ে যায়, যা দামে ওঠা-নামা ও বাজার পাল্টানোর ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলতায় বাধা ও নতুন ট্যারিফের শক-ঝড়ে এই একক নির্ভরতা বড় ধাক্কা খেতে পারে।

লজিস্টিক্সের সূচকে পিছিয়ে

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক ‘কানেক্টিং টু কম্পিট ২০২৩’ প্রতিবেদনে ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের লজিস্টিক পারফরম্যান্স সূচক (এলপিআই) স্কোর মাত্র ২.৬; অবস্থান ৮৮তম। ধীর কাস্টমস, দুর্বল অবকাঠামো ও ট্র্যাক-অ্যান্ড-ট্রেস ব্যবস্থার ঘাটতি পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ। অর্থাৎ পণ্য বানালেও দ্রুত ও কম খরচে বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে পারছে না বাংলাদেশ।

 লক্ষ্য আছেপদক্ষেপ নেই’—সিপিডি

বাজেটের উদ্দেশ্য ইতিবাচক হলেও বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট উপায় নেই বলে মত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর। সংস্থাটির মতে, প্রতিশ্রুত সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বা বৈষম্য ঘোচাতে যে নীতি বলা হয়েছে, তা পূরণে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও সংস্কারপন্থী করনীতি অনুপস্থিত। তাদের বিশ্লেষণে, এক শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স এসএমইদের কার্যকর করহার ১০ শতাংশের ওপর তুলে দিচ্ছে, যা রপ্তানি-মুখী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য “অবিচারসুলভ”।

সরকারের ভর্তুকি পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে আইএমএফ | undefined

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সতর্ক বার্তা

২০২৩ সালের আর্টিকেল IV পর্যালোচনায় আইএমএফ স্পষ্ট করে বলেছে—বাণিজ্য উদারীকরণ ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ছাড়া রপ্তানি বৈচিত্র্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে না। বাজেটে শুল্ক-কোটার সুরক্ষা কিছুটা কমানো হলেও ‘সিঙ্গেল-উইন্ডো’ বা অনলাইন ল্যান্ড পোর্টাল চালুর মতো কাঠামোগত সংস্কারের খসড়া অনুপস্থিত।

পাঁচটি তাৎক্ষণিক সংস্কার পরামর্শ

১) ৯০ দিনের অ্যাকশন প্ল্যান—বন্দর, কাস্টমস ও গ্যাস সংযোগে নির্দিষ্ট টাইমলাইন প্রকাশ।
২) সিঙ্গেল-উইন্ডো সার্ভিস—রপ্তানি ও আমদানি ছাড়পত্রের কাগুজে প্রক্রিয়া এক প্ল্যাটফর্মে আনা।
৩) শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাস—স্থানীয় বাজার সুরক্ষার বদলে বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে অংশগ্রহণকে পুরস্কৃত করা।
৪) শক্তি নিরাপত্তা—স্পট এলএনজি-নির্ভরতা কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস চুক্তি ও নবায়নযোগ্য উৎসে তহবিল বাড়ানো।
৫) করজাল সম্প্রসারণ ও টার্নওভার ট্যাক্স পর্যালোচনা—লভ্যাংশের ওপর করকে কেন্দ্রীয় করা, বিক্রয়ের ওপর নয়।

বাজেটের ঘাটতি বা মুদ্রাস্ফীতি সামাল দেওয়া একটি বাস্তবতা; তবে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানি-ভিত্তিক উৎপাদনে কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া পথ নেই। আন্তর্জাতিক সূচক, আইএমএফের শর্ত ও দেশীয় ব্যবসায়ীদের একক স্বর—সবই একই বার্তা দিচ্ছে: বহুমুখী রপ্তানি ও দক্ষ লজিস্টিক্স না থাকলে এলডিসি-উত্তর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সঙ্কুচিত হবে, কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও সীমিত হয়ে পড়বে। এখনই সাহসী পদক্ষেপ নিলে বাজেট সত্যিকার অর্থে উৎপাদন-বান্ধব ও রপ্তানি-স্থিতিশীল হতে পারে—আর না হলে ‘রুটিন বাজেট’-এর সীমানা বেঁধে দেবে আগামীর প্রবৃদ্ধি।