০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

এশিয়ায় ডলারের বিকল্প অনুসন্ধানের এ সময়ে কী করতে পারে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সামনে নতুন মুদ্রা বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

এশিয়ার মুদ্রাবাজারে ডলারের বিকল্প অনুসন্ধান যখন জোরালো হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের জন্যও এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি, উচ্চ আমদানি নির্ভরতা, বৈদেশিক ঋণের বেড়ে যাওয়া দায়ভার, বৈদেশিক রিজার্ভে চাপ — সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ডলারের একচেটিয়া ভূমিকা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশকে এখনই গ্রহণ করতে হবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল।

বহুমাত্রিক রিজার্ভ গঠন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বর্তমানে প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ ডলার নির্ভরতা রয়েছে। এ অবস্থায় ইউরো, ইউয়ান, ইয়েন ও সৌদি রিয়ালসহ বাণিজ্য অংশীদারদের মুদ্রায় ধীরে ধীরে রিজার্ভ বহুমুখীকরণ করতে হবে।

  • স্বল্পমেয়াদে টার্গেট: ডলারের অংশ ৭৫% থেকে ৬৫%-এ নামিয়ে আনা।
  • মধ্যমেয়াদে টার্গেট: ৫০%-এর নিচে নিয়ে আসা।
  • নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা বিবেচনার নীতি গ্রহণ।

বাণিজ্যে মুদ্রা বিনিময় চুক্তি (Currency Swap Agreement) বৃদ্ধি:

  • চীনের সঙ্গে ইউয়ানে লেনদেন শুরু করা হয়েছে।
  • ভারতের সঙ্গে রুপিতে আংশিক বাণিজ্য চালু করার বিষয়ে অগ্রগতি জরুরি।
  • জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবের সঙ্গেও মুদ্রা বিনিময় চুক্তি সম্প্রসারণ।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেমে মাল্টি-কারেন্সি একাউন্ট চালু:

  • ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য ইউয়ান, ইউরো, ইয়েন ভিত্তিক ট্রেড ফাইন্যান্স সুবিধা।
  • এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রার সুযোগ তৈরি।

বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিমালা সংস্কার:

  • এশীয় মুদ্রায় বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণের সুযোগ বাড়ানো।
  • বন্ড মার্কেটে ইউয়ান বা ইয়েন ভিত্তিক বন্ড ইস্যু করার ব্যবস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের করণীয় বিশ্লেষণ

 মুদ্রানীতির সমন্বয়:

  • ডলারের ওপর অতিনির্ভরতা কমানোর জন্য ধারাবাহিক হেজিং নীতি প্রণয়ন।
  • বিদেশি ঋণ অনুমোদনে মুদ্রা বৈচিত্র্য বিবেচনা।
  • রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় মাল্টি-কারেন্সি পোর্টফোলিও তৈরি।

আইন ও নীতিমালা সংস্কার:

  • ফরেক্স রেগুলেশন আপডেট করে বহুমুদ্রা ব্যবস্থার অনুমোদন।
  • নতুন মুদ্রা একাউন্ট পরিচালনায় কর সুবিধা পুনর্বিবেচনা।

বাজার অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ:

  • আন্তঃব্যাংক মাল্টি-কারেন্সি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি।
  • ফরেক্স মার্কেটে তরলতা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি হস্তক্ষেপের সক্ষমতা বাড়ানো।

প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন:

  • ব্যাংক কর্মকর্তাদের বহুমুদ্রা লেনদেনের প্রশিক্ষণ।
  • রিস্ক ম্যানেজমেন্ট টুলস আধুনিকায়ন।

ব্যবসায়ীদের জন্য করণীয় ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা

বহুমুদ্রায় আর্থিক পরিকল্পনা:

  • শুধুমাত্র ডলারে নয়, ইউয়ান, ইউরো বা রুপিতেও ব্যবসার বৈদেশিক অংশের লেনদেন পরিচালনা।
  • রপ্তানিমুখী ব্যবসায় হেজিং পলিসি তৈরি।

নতুন এলসি পদ্ধতির গ্রহণ:

  • এলসি খোলার সময় মুদ্রা বৈচিত্র্য বিবেচনা করে দরদাম স্থির করা।
  • একাধিক মুদ্রায় পেমেন্ট অপশন চালু।

বিনিয়োগ পরিকল্পনায় নতুন ঝুঁকি মডেল:

  • ডলার ফ্লাকচুয়েশন এভয়েড করার জন্য বিনিয়োগের কারেন্সি ঝুঁকি অ্যানালাইসিস।
  • স্ট্র্যাটেজিক হেজিং ও ফরোয়ার্ড কন্ট্রাক্ট ব্যবহার।

বৈশ্বিক বাজারে নেটওয়ার্ক তৈরি:

  • এশিয়ার বড় বাজারে (চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়া) সরাসরি ব্যাংকিং পার্টনার তৈরি।
  • আন্তর্জাতিক মাল্টি-কারেন্সি প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় হওয়া।

এশিয়ায় ডলারের বিকল্প অনুসন্ধানের এ সময়ে কী করতে পারে বাংলাদেশ

১০:০০:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের সামনে নতুন মুদ্রা বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

এশিয়ার মুদ্রাবাজারে ডলারের বিকল্প অনুসন্ধান যখন জোরালো হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের জন্যও এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি, উচ্চ আমদানি নির্ভরতা, বৈদেশিক ঋণের বেড়ে যাওয়া দায়ভার, বৈদেশিক রিজার্ভে চাপ — সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ডলারের একচেটিয়া ভূমিকা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশকে এখনই গ্রহণ করতে হবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল।

বহুমাত্রিক রিজার্ভ গঠন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বর্তমানে প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ ডলার নির্ভরতা রয়েছে। এ অবস্থায় ইউরো, ইউয়ান, ইয়েন ও সৌদি রিয়ালসহ বাণিজ্য অংশীদারদের মুদ্রায় ধীরে ধীরে রিজার্ভ বহুমুখীকরণ করতে হবে।

  • স্বল্পমেয়াদে টার্গেট: ডলারের অংশ ৭৫% থেকে ৬৫%-এ নামিয়ে আনা।
  • মধ্যমেয়াদে টার্গেট: ৫০%-এর নিচে নিয়ে আসা।
  • নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা বিবেচনার নীতি গ্রহণ।

বাণিজ্যে মুদ্রা বিনিময় চুক্তি (Currency Swap Agreement) বৃদ্ধি:

  • চীনের সঙ্গে ইউয়ানে লেনদেন শুরু করা হয়েছে।
  • ভারতের সঙ্গে রুপিতে আংশিক বাণিজ্য চালু করার বিষয়ে অগ্রগতি জরুরি।
  • জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবের সঙ্গেও মুদ্রা বিনিময় চুক্তি সম্প্রসারণ।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেমে মাল্টি-কারেন্সি একাউন্ট চালু:

  • ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য ইউয়ান, ইউরো, ইয়েন ভিত্তিক ট্রেড ফাইন্যান্স সুবিধা।
  • এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রার সুযোগ তৈরি।

বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিমালা সংস্কার:

  • এশীয় মুদ্রায় বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণের সুযোগ বাড়ানো।
  • বন্ড মার্কেটে ইউয়ান বা ইয়েন ভিত্তিক বন্ড ইস্যু করার ব্যবস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের করণীয় বিশ্লেষণ

 মুদ্রানীতির সমন্বয়:

  • ডলারের ওপর অতিনির্ভরতা কমানোর জন্য ধারাবাহিক হেজিং নীতি প্রণয়ন।
  • বিদেশি ঋণ অনুমোদনে মুদ্রা বৈচিত্র্য বিবেচনা।
  • রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় মাল্টি-কারেন্সি পোর্টফোলিও তৈরি।

আইন ও নীতিমালা সংস্কার:

  • ফরেক্স রেগুলেশন আপডেট করে বহুমুদ্রা ব্যবস্থার অনুমোদন।
  • নতুন মুদ্রা একাউন্ট পরিচালনায় কর সুবিধা পুনর্বিবেচনা।

বাজার অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ:

  • আন্তঃব্যাংক মাল্টি-কারেন্সি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি।
  • ফরেক্স মার্কেটে তরলতা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি হস্তক্ষেপের সক্ষমতা বাড়ানো।

প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন:

  • ব্যাংক কর্মকর্তাদের বহুমুদ্রা লেনদেনের প্রশিক্ষণ।
  • রিস্ক ম্যানেজমেন্ট টুলস আধুনিকায়ন।

ব্যবসায়ীদের জন্য করণীয় ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা

বহুমুদ্রায় আর্থিক পরিকল্পনা:

  • শুধুমাত্র ডলারে নয়, ইউয়ান, ইউরো বা রুপিতেও ব্যবসার বৈদেশিক অংশের লেনদেন পরিচালনা।
  • রপ্তানিমুখী ব্যবসায় হেজিং পলিসি তৈরি।

নতুন এলসি পদ্ধতির গ্রহণ:

  • এলসি খোলার সময় মুদ্রা বৈচিত্র্য বিবেচনা করে দরদাম স্থির করা।
  • একাধিক মুদ্রায় পেমেন্ট অপশন চালু।

বিনিয়োগ পরিকল্পনায় নতুন ঝুঁকি মডেল:

  • ডলার ফ্লাকচুয়েশন এভয়েড করার জন্য বিনিয়োগের কারেন্সি ঝুঁকি অ্যানালাইসিস।
  • স্ট্র্যাটেজিক হেজিং ও ফরোয়ার্ড কন্ট্রাক্ট ব্যবহার।

বৈশ্বিক বাজারে নেটওয়ার্ক তৈরি:

  • এশিয়ার বড় বাজারে (চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়া) সরাসরি ব্যাংকিং পার্টনার তৈরি।
  • আন্তর্জাতিক মাল্টি-কারেন্সি প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় হওয়া।