০৩:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
নারায়ণগঞ্জে কৃষক দল নেতার ওপর ছুরিকাঘাত: মাদককারবারীদের হামলার অভিযোগ রাজধানীসহ চার জেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন বগুড়ার গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ ডায়াবেটিসের নীরব বিস্তার: কাজের চাপ, চিনি আর স্ক্রিনটাইমের জটিল ফাঁদে বাংলাদেশ গ্রে’স অ্যানাটমি’ তারকা জেমস পিকেন্স জুনিয়রের প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা, স্ক্রিনিংয়ের আহ্বান শীর্ষ বিদেশি শিক্ষার্থীর কাছে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আকর্ষণীয়, তবু অনিশ্চয়তা বাড়ছে বেলেমের কপ৩০–এ যুক্তরাষ্ট্র অনুপস্থিত, জলবায়ু নেতৃত্বে আলোচনায় চীন রাস্তা মেরামতে নতুন সহকারী এআই, দুর্ঘটনা কমাতে দৌড়াচ্ছে ডেটা ফেনীতে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে আগুন, তদন্তে পুলিশ সেনকাকু ঘিরে চীনা টহল রেকর্ড সময় ধরে, জাপানের উদ্বেগ বাড়ছে

এশিয়ায় ডলারের বিকল্প অনুসন্ধানের এ সময়ে কী করতে পারে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সামনে নতুন মুদ্রা বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

এশিয়ার মুদ্রাবাজারে ডলারের বিকল্প অনুসন্ধান যখন জোরালো হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের জন্যও এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি, উচ্চ আমদানি নির্ভরতা, বৈদেশিক ঋণের বেড়ে যাওয়া দায়ভার, বৈদেশিক রিজার্ভে চাপ — সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ডলারের একচেটিয়া ভূমিকা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশকে এখনই গ্রহণ করতে হবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল।

বহুমাত্রিক রিজার্ভ গঠন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বর্তমানে প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ ডলার নির্ভরতা রয়েছে। এ অবস্থায় ইউরো, ইউয়ান, ইয়েন ও সৌদি রিয়ালসহ বাণিজ্য অংশীদারদের মুদ্রায় ধীরে ধীরে রিজার্ভ বহুমুখীকরণ করতে হবে।

  • স্বল্পমেয়াদে টার্গেট: ডলারের অংশ ৭৫% থেকে ৬৫%-এ নামিয়ে আনা।
  • মধ্যমেয়াদে টার্গেট: ৫০%-এর নিচে নিয়ে আসা।
  • নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা বিবেচনার নীতি গ্রহণ।

বাণিজ্যে মুদ্রা বিনিময় চুক্তি (Currency Swap Agreement) বৃদ্ধি:

  • চীনের সঙ্গে ইউয়ানে লেনদেন শুরু করা হয়েছে।
  • ভারতের সঙ্গে রুপিতে আংশিক বাণিজ্য চালু করার বিষয়ে অগ্রগতি জরুরি।
  • জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবের সঙ্গেও মুদ্রা বিনিময় চুক্তি সম্প্রসারণ।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেমে মাল্টি-কারেন্সি একাউন্ট চালু:

  • ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য ইউয়ান, ইউরো, ইয়েন ভিত্তিক ট্রেড ফাইন্যান্স সুবিধা।
  • এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রার সুযোগ তৈরি।

বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিমালা সংস্কার:

  • এশীয় মুদ্রায় বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণের সুযোগ বাড়ানো।
  • বন্ড মার্কেটে ইউয়ান বা ইয়েন ভিত্তিক বন্ড ইস্যু করার ব্যবস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের করণীয় বিশ্লেষণ

 মুদ্রানীতির সমন্বয়:

  • ডলারের ওপর অতিনির্ভরতা কমানোর জন্য ধারাবাহিক হেজিং নীতি প্রণয়ন।
  • বিদেশি ঋণ অনুমোদনে মুদ্রা বৈচিত্র্য বিবেচনা।
  • রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় মাল্টি-কারেন্সি পোর্টফোলিও তৈরি।

আইন ও নীতিমালা সংস্কার:

  • ফরেক্স রেগুলেশন আপডেট করে বহুমুদ্রা ব্যবস্থার অনুমোদন।
  • নতুন মুদ্রা একাউন্ট পরিচালনায় কর সুবিধা পুনর্বিবেচনা।

বাজার অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ:

  • আন্তঃব্যাংক মাল্টি-কারেন্সি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি।
  • ফরেক্স মার্কেটে তরলতা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি হস্তক্ষেপের সক্ষমতা বাড়ানো।

প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন:

  • ব্যাংক কর্মকর্তাদের বহুমুদ্রা লেনদেনের প্রশিক্ষণ।
  • রিস্ক ম্যানেজমেন্ট টুলস আধুনিকায়ন।

ব্যবসায়ীদের জন্য করণীয় ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা

বহুমুদ্রায় আর্থিক পরিকল্পনা:

  • শুধুমাত্র ডলারে নয়, ইউয়ান, ইউরো বা রুপিতেও ব্যবসার বৈদেশিক অংশের লেনদেন পরিচালনা।
  • রপ্তানিমুখী ব্যবসায় হেজিং পলিসি তৈরি।

নতুন এলসি পদ্ধতির গ্রহণ:

  • এলসি খোলার সময় মুদ্রা বৈচিত্র্য বিবেচনা করে দরদাম স্থির করা।
  • একাধিক মুদ্রায় পেমেন্ট অপশন চালু।

বিনিয়োগ পরিকল্পনায় নতুন ঝুঁকি মডেল:

  • ডলার ফ্লাকচুয়েশন এভয়েড করার জন্য বিনিয়োগের কারেন্সি ঝুঁকি অ্যানালাইসিস।
  • স্ট্র্যাটেজিক হেজিং ও ফরোয়ার্ড কন্ট্রাক্ট ব্যবহার।

বৈশ্বিক বাজারে নেটওয়ার্ক তৈরি:

  • এশিয়ার বড় বাজারে (চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়া) সরাসরি ব্যাংকিং পার্টনার তৈরি।
  • আন্তর্জাতিক মাল্টি-কারেন্সি প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় হওয়া।
জনপ্রিয় সংবাদ

নারায়ণগঞ্জে কৃষক দল নেতার ওপর ছুরিকাঘাত: মাদককারবারীদের হামলার অভিযোগ

এশিয়ায় ডলারের বিকল্প অনুসন্ধানের এ সময়ে কী করতে পারে বাংলাদেশ

১০:০০:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের সামনে নতুন মুদ্রা বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

এশিয়ার মুদ্রাবাজারে ডলারের বিকল্প অনুসন্ধান যখন জোরালো হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের জন্যও এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি, উচ্চ আমদানি নির্ভরতা, বৈদেশিক ঋণের বেড়ে যাওয়া দায়ভার, বৈদেশিক রিজার্ভে চাপ — সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ডলারের একচেটিয়া ভূমিকা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশকে এখনই গ্রহণ করতে হবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল।

বহুমাত্রিক রিজার্ভ গঠন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বর্তমানে প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ ডলার নির্ভরতা রয়েছে। এ অবস্থায় ইউরো, ইউয়ান, ইয়েন ও সৌদি রিয়ালসহ বাণিজ্য অংশীদারদের মুদ্রায় ধীরে ধীরে রিজার্ভ বহুমুখীকরণ করতে হবে।

  • স্বল্পমেয়াদে টার্গেট: ডলারের অংশ ৭৫% থেকে ৬৫%-এ নামিয়ে আনা।
  • মধ্যমেয়াদে টার্গেট: ৫০%-এর নিচে নিয়ে আসা।
  • নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা বিবেচনার নীতি গ্রহণ।

বাণিজ্যে মুদ্রা বিনিময় চুক্তি (Currency Swap Agreement) বৃদ্ধি:

  • চীনের সঙ্গে ইউয়ানে লেনদেন শুরু করা হয়েছে।
  • ভারতের সঙ্গে রুপিতে আংশিক বাণিজ্য চালু করার বিষয়ে অগ্রগতি জরুরি।
  • জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবের সঙ্গেও মুদ্রা বিনিময় চুক্তি সম্প্রসারণ।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেমে মাল্টি-কারেন্সি একাউন্ট চালু:

  • ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য ইউয়ান, ইউরো, ইয়েন ভিত্তিক ট্রেড ফাইন্যান্স সুবিধা।
  • এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রার সুযোগ তৈরি।

বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিমালা সংস্কার:

  • এশীয় মুদ্রায় বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণের সুযোগ বাড়ানো।
  • বন্ড মার্কেটে ইউয়ান বা ইয়েন ভিত্তিক বন্ড ইস্যু করার ব্যবস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের করণীয় বিশ্লেষণ

 মুদ্রানীতির সমন্বয়:

  • ডলারের ওপর অতিনির্ভরতা কমানোর জন্য ধারাবাহিক হেজিং নীতি প্রণয়ন।
  • বিদেশি ঋণ অনুমোদনে মুদ্রা বৈচিত্র্য বিবেচনা।
  • রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় মাল্টি-কারেন্সি পোর্টফোলিও তৈরি।

আইন ও নীতিমালা সংস্কার:

  • ফরেক্স রেগুলেশন আপডেট করে বহুমুদ্রা ব্যবস্থার অনুমোদন।
  • নতুন মুদ্রা একাউন্ট পরিচালনায় কর সুবিধা পুনর্বিবেচনা।

বাজার অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ:

  • আন্তঃব্যাংক মাল্টি-কারেন্সি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি।
  • ফরেক্স মার্কেটে তরলতা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি হস্তক্ষেপের সক্ষমতা বাড়ানো।

প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন:

  • ব্যাংক কর্মকর্তাদের বহুমুদ্রা লেনদেনের প্রশিক্ষণ।
  • রিস্ক ম্যানেজমেন্ট টুলস আধুনিকায়ন।

ব্যবসায়ীদের জন্য করণীয় ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা

বহুমুদ্রায় আর্থিক পরিকল্পনা:

  • শুধুমাত্র ডলারে নয়, ইউয়ান, ইউরো বা রুপিতেও ব্যবসার বৈদেশিক অংশের লেনদেন পরিচালনা।
  • রপ্তানিমুখী ব্যবসায় হেজিং পলিসি তৈরি।

নতুন এলসি পদ্ধতির গ্রহণ:

  • এলসি খোলার সময় মুদ্রা বৈচিত্র্য বিবেচনা করে দরদাম স্থির করা।
  • একাধিক মুদ্রায় পেমেন্ট অপশন চালু।

বিনিয়োগ পরিকল্পনায় নতুন ঝুঁকি মডেল:

  • ডলার ফ্লাকচুয়েশন এভয়েড করার জন্য বিনিয়োগের কারেন্সি ঝুঁকি অ্যানালাইসিস।
  • স্ট্র্যাটেজিক হেজিং ও ফরোয়ার্ড কন্ট্রাক্ট ব্যবহার।

বৈশ্বিক বাজারে নেটওয়ার্ক তৈরি:

  • এশিয়ার বড় বাজারে (চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়া) সরাসরি ব্যাংকিং পার্টনার তৈরি।
  • আন্তর্জাতিক মাল্টি-কারেন্সি প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় হওয়া।