বাংলাদেশের সামনে নতুন মুদ্রা বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
এশিয়ার মুদ্রাবাজারে ডলারের বিকল্প অনুসন্ধান যখন জোরালো হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের জন্যও এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি, উচ্চ আমদানি নির্ভরতা, বৈদেশিক ঋণের বেড়ে যাওয়া দায়ভার, বৈদেশিক রিজার্ভে চাপ — সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ডলারের একচেটিয়া ভূমিকা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশকে এখনই গ্রহণ করতে হবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল।
বহুমাত্রিক রিজার্ভ গঠন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বর্তমানে প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ ডলার নির্ভরতা রয়েছে। এ অবস্থায় ইউরো, ইউয়ান, ইয়েন ও সৌদি রিয়ালসহ বাণিজ্য অংশীদারদের মুদ্রায় ধীরে ধীরে রিজার্ভ বহুমুখীকরণ করতে হবে।
- স্বল্পমেয়াদে টার্গেট: ডলারের অংশ ৭৫% থেকে ৬৫%-এ নামিয়ে আনা।
- মধ্যমেয়াদে টার্গেট: ৫০%-এর নিচে নিয়ে আসা।
- নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা বিবেচনার নীতি গ্রহণ।
বাণিজ্যে মুদ্রা বিনিময় চুক্তি (Currency Swap Agreement) বৃদ্ধি:
- চীনের সঙ্গে ইউয়ানে লেনদেন শুরু করা হয়েছে।
- ভারতের সঙ্গে রুপিতে আংশিক বাণিজ্য চালু করার বিষয়ে অগ্রগতি জরুরি।
- জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবের সঙ্গেও মুদ্রা বিনিময় চুক্তি সম্প্রসারণ।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেমে মাল্টি-কারেন্সি একাউন্ট চালু:
- ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য ইউয়ান, ইউরো, ইয়েন ভিত্তিক ট্রেড ফাইন্যান্স সুবিধা।
- এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রার সুযোগ তৈরি।
বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিমালা সংস্কার:
- এশীয় মুদ্রায় বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণের সুযোগ বাড়ানো।
- বন্ড মার্কেটে ইউয়ান বা ইয়েন ভিত্তিক বন্ড ইস্যু করার ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের করণীয় বিশ্লেষণ
মুদ্রানীতির সমন্বয়:
- ডলারের ওপর অতিনির্ভরতা কমানোর জন্য ধারাবাহিক হেজিং নীতি প্রণয়ন।
- বিদেশি ঋণ অনুমোদনে মুদ্রা বৈচিত্র্য বিবেচনা।
- রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় মাল্টি-কারেন্সি পোর্টফোলিও তৈরি।
আইন ও নীতিমালা সংস্কার:
- ফরেক্স রেগুলেশন আপডেট করে বহুমুদ্রা ব্যবস্থার অনুমোদন।
- নতুন মুদ্রা একাউন্ট পরিচালনায় কর সুবিধা পুনর্বিবেচনা।
বাজার অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ:
- আন্তঃব্যাংক মাল্টি-কারেন্সি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি।
- ফরেক্স মার্কেটে তরলতা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি হস্তক্ষেপের সক্ষমতা বাড়ানো।
প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন:
- ব্যাংক কর্মকর্তাদের বহুমুদ্রা লেনদেনের প্রশিক্ষণ।
- রিস্ক ম্যানেজমেন্ট টুলস আধুনিকায়ন।
ব্যবসায়ীদের জন্য করণীয় ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা
বহুমুদ্রায় আর্থিক পরিকল্পনা:
- শুধুমাত্র ডলারে নয়, ইউয়ান, ইউরো বা রুপিতেও ব্যবসার বৈদেশিক অংশের লেনদেন পরিচালনা।
- রপ্তানিমুখী ব্যবসায় হেজিং পলিসি তৈরি।
নতুন এলসি পদ্ধতির গ্রহণ:
- এলসি খোলার সময় মুদ্রা বৈচিত্র্য বিবেচনা করে দরদাম স্থির করা।
- একাধিক মুদ্রায় পেমেন্ট অপশন চালু।
বিনিয়োগ পরিকল্পনায় নতুন ঝুঁকি মডেল:
- ডলার ফ্লাকচুয়েশন এভয়েড করার জন্য বিনিয়োগের কারেন্সি ঝুঁকি অ্যানালাইসিস।
- স্ট্র্যাটেজিক হেজিং ও ফরোয়ার্ড কন্ট্রাক্ট ব্যবহার।
বৈশ্বিক বাজারে নেটওয়ার্ক তৈরি:
- এশিয়ার বড় বাজারে (চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়া) সরাসরি ব্যাংকিং পার্টনার তৈরি।
- আন্তর্জাতিক মাল্টি-কারেন্সি প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় হওয়া।