চিত্রকর্মের বৈশিষ্ট্য ও নিলাম
১৯২৭ সালে আঁকা ‘লা বেল রাফায়েলা’—তামারা দে লেম্পিকার অন্যতম সেরা নগ্নচিত্র—এই জুনে লন্ডনের সথেবি নিলামে তোলা হবে। আর্ট ডেকো যুগের রূপ-রস ও যৌনতার প্রকট প্রকাশঘেরা এ ছবিটির মূল্য ধরা হয়েছে ছয় থেকে নয় মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত। ছবিতে ছোট চুল-ওয়ালা এক নারী কারাভাজিও ঘরানার তীব্র আলোকরশ্মিতে উদ্ভাসিত; শিমুল-লাল কাপড়ে আংশিক ঢাকা শরীরের লাল লিপস্টিক-এর সাথে রঙ মিলেছে অনবদ্যে। নিলামঘর বলছে, লেম্পিকার তুলি থেকে জন্ম নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ছবির একটি এটি।
রাফায়েলা: মডেল থেকে প্রেমিকা
প্যারিসের বিখ্যাত বোলোন জঙ্গলে এক বিকেলে লেম্পিকা এক তরুণ যৌনকর্মীর মুখোমুখি হন। পরে শিল্পী স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, ‘ও ছিল আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর নারী—দৃষ্টি জুড়ানো কালো চোখ, মোহময় ঠোঁট, অপরূপ দেহ।’ পরিচয় হয়েই তিনি রাফায়েলাকে মডেল হওয়ার অনুরোধ করেন; রাজি হওয়ায় শুরু হয় গভীর সান্নিধ্য। তাঁদের সম্পর্কের ফলেই রাফায়েলা পরপর কয়েকটি মহার্ঘ্য নগ্নচিত্রে অবিনশ্বর হয়েছেন; যার শীর্ষে রয়েছে এই ‘লা বেল রাফায়েলা’।
পুরুষতান্ত্রিক ধারার বিরুদ্ধে লেম্পিকার অবস্থান
ইতিহাস জুড়ে নারী-নগ্নচিত্র প্রধানত পুরুষদের চিত্রকল্প ছিল। লেম্পিকা সেই ঐতিহ্যে যুক্ত করলেন নারীর দৃষ্টিভঙ্গি—নিজস্ব ভঙ্গিতে, নিজস্ব কামনা-বাসনার রঙে। সথেবির ইউরোপীয় আধুনিক শিল্প প্রধান আন্দ্রে জ্লাটিংগার বলেন, ‘নিজের কামনার নারীকে নিজের চোখে এঁকে লেম্পিকা একাধারে শিল্প আর যৌনতায় স্বাধীনতার বার্তা দিয়েছেন। আর্ট ডেকো শতবর্ষে দাঁড়িয়ে তাঁর মূল্য আজ আরও উজ্জ্বল।’
শিল্পীর রঙিন জীবন ও ভ্রমণ
১৮৯৮-এ ওয়ারশ-জন্মী তামারা রোসালিয়া গুৰ্বিক-গর্সকা পরিচিতি পান ‘বারোনেস উইথ এ ব্রাশ’ উপাধিতে। পিতামাতার বিচ্ছেদের পর সেন্ট পিটার্সবার্গে ধনী খালার বাড়িতে বড় হয়ে বিলাসের স্বাদ পেয়েছিলেন। আঠারো বছর বয়সে বিয়ে করেন তাদেউশ লেম্পিকিকে; রুশ বিপ্লবে প্যারিসে পাড়ি দেন। সেখানেই ‘তামারা দে লেম্পিকা’ নাম নিয়ে নতুন এক অভিজাত পরিচয় গড়েন এবং নবধনী-অভিজাত সমাজের আদর্শ প্রতিকৃতি-শিল্পী হয়ে ওঠেন। পরে ওই দাম্পত্য ভেঙে বারোন রাউল কুফনারকে বিয়ে করেন—যিনি আগে নিজের উপপত্নীর পোর্ট্রেট আঁকাতে তাঁকে নিয়োজিত করেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনায় দম্পতি লস অ্যাঞ্জেলেসে গিয়ে স্বল্পকাল হলিউডের মাতামাতি পান; তবে বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদের উত্থানে তাঁর শৌখিন রঙাবরণ তখন আড়ালে সরে যায়। ১৯৬১-তে কুফনার সমুদ্রযাত্রায় আকস্মিক মৃত্যুর পর লেম্পিকা টেক্সাস, শেষে মেক্সিকোর কুয়েরনাভাকায় থিতু হন; ১৯৮০-এ সেখানেই তাঁর মৃত্যু।
আধুনিক দুনিয়ায় নতুন স্বীকৃতি
গত দুই দশকে লেম্পিকার বাজারমূল্য ক্রমেই উর্ধ্বমুখী। শুরুর দিককার সংগ্রাহকদের তালিকায় ছিলেন গায়িকা মাদোনা, বার্বরা স্ট্রেইস্যান্ড, অভিনেতা জ্যাক নিকোলসনের মতো তারকা। ২০২৪-এ তাঁর জীবনভিত্তিক মিউজিক্যাল ‘লেম্পিকা’ ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রদর্শনীও বসেছে। আসন্ন নিলামের আগেই ১৮-২৪ জুন, লন্ডনের সথেবি গ্যালারিতে সর্বসাধারণের জন্য ‘লা বেল রাফায়েলা’ প্রদর্শিত হবে—যার সামনে হয়তো আবারও লম্বা কাতার পড়বে, প্রমাণ করবে শিল্পের যৌবন ফুরোয় না কখনোই।