১০:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

নেপোলিয়নের যুদ্ধজয়ের রান্না: একটি মুরগি আর কিছু কল্পনার গল্প

যুদ্ধের মাঝখানে এক ঐতিহাসিক রান্নার জন্ম

১৮০০ সালের গ্রীষ্মে ইতালির ছোট্ট গ্রাম মারেংগোর কাছে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অস্ট্রিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। হঠাৎ হামলায় ফরাসি বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়লেও সন্ধ্যার আগে তারা পাল্টা আক্রমণে বিজয় ছিনিয়ে নেয়। ঠিক তখনই সামনে আসে একটি ভিন্ন সমস্যা—জেনারেল নেপোলিয়নের রাতের খাবার!

বাজার বন্ধ, খাবারের সরবরাহ ছত্রভঙ্গ, আর রান্নাঘর প্রায় খালি। এমন দুঃসময়ে নেপোলিয়নের ব্যক্তিগত রাঁধুনি ডুনান্দ যা পেলেন, তাই নিয়েই রান্নায় নেমে পড়লেন—একটা মুরগি, কিছু টমেটো, অলিভ তেল, রসুন, একটু সাদা মদ আর বুনো মাশরুম। সব উপাদান একসঙ্গে চুলায় দিয়ে ধীরে ধীরে রান্না করলেন। ফলাফল—একটি মোটা স্বাদের, খাঁটি যুদ্ধকালীন খাবার।

নেপোলিয়ন সেই খাবার এতটাই উপভোগ করলেন যে কথিত আছে, পরবর্তী সব বিজয়ের পর তিনি এই খাবারই চাইতেন। সেই গল্প সত্য হোক বা না হোক, “চিকেন মারেংগো” আজও রান্নার ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।

রেসিপি: চিকেন মারেংগো

এই রান্নাটি এমন এক সময়ের স্বাদ বহন করে, যখন রেসিপি কাগজে লেখা নয়, মনে রাখা হতো। সোজাসাপ্টা কিন্তু স্তরযুক্ত স্বাদ—ভাজা মুরগি, নরম পেঁয়াজ, পাকা টমেটো, সাদা মদের আভাস আর মাশরুমের মাটির গন্ধ। সবকিছু মিলে তৈরি হয় গাঢ়, ঘন, অথচ মার্জিত এক ঝোল।

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

  • হাড়সহ ও চামড়াসহ ৮টি মুরগির রান
  • লবণ ও গুঁড়ো গোলমরিচ পরিমাণমতো
  • ½ কাপ ময়দা (মুরগি গড়াতে)
  • ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
  • ১টি ছোট পেঁয়াজ বা বড় শ্যালট, কুচি করা
  • ৩ কাপ স্লাইস করা বাটন বা ক্রিমিনি মাশরুম
  • ৩ কোয়া রসুন, কুচানো
  • ১ কাপ সাদা শুকনা মদ
  • ১ ক্যান টুকরো টমেটো
  • ১½ কাপ চিকেন স্টক
  • ১ চা চামচ শুকনা থাইম
  • ১টি তেজপাতা
  • ½টি কমলার খোসার গ্রেট (ঐচ্ছিক, কিন্তু স্বাদে আলো আনে)
  • সামান্য কুচি করা পার্সলি (সাজাতে)
  • ঐতিহাসিক গল্প অনুযায়ী ঐচ্ছিক উপকরণ: একটি ভাজা ডিম, কিছু রসুন ভাজা কাঁঠালের টোস্ট বা হালকা ভাজা চিংড়ি

প্রস্তুত প্রণালী:

মুরগির রানের উপর হালকা করে ময়দা ছড়িয়ে দিন ও ভালোভাবে লবণ-মরিচ মেখে নিন।

একটি ভারী প্যানে বা ডাচ ওভেনে অলিভ অয়েল গরম করে মুরগির দুই পাশ সোনালি করে ভেজে তুলে রাখুন।

ওই প্যানে পেঁয়াজ, মাশরুম ও রসুন দিয়ে নরম ও ক্যারামেলাইজ হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।

এবার সাদা মদ ঢেলে দিয়ে প্যানে লেগে থাকা ভাজা অংশ ঘষে ছাড়িয়ে দিন—এখানেই স্বাদের মূল রহস্য।

এরপর টমেটো, স্টক, থাইম, তেজপাতা আর কমলার খোসা দিন। ভালোভাবে নেড়ে মেশান।

মুরগিগুলো আবার প্যানে বসিয়ে দিন, ঢেকে হালকা আঁচে প্রায় ৪০ মিনিট রান্না করুন।

তেজপাতা তুলে ফেলে দিন, স্বাদ দেখে লবণ-ঘাটতি ঠিক করুন।

উপর থেকে পার্সলি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন। ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাইলে ভাজা ডিম বা টোস্ট যোগ করুন।

গরম গরম পরিবেশন করুন, সঙ্গে রাখতে পারেন রুটি, ভাত কিংবা মাখনের মতো মসৃণ ম্যাশড পটেটো।

এই যুদ্ধজয়ের রাঁধুনি তৈরি করেছিল কেবল এক বেলা পেট ভরানোর জন্য। কিন্তু তারই হাত ধরে জন্ম নিয়েছিল এক চিরন্তন রান্না, যা আজও রান্নাঘরে জ্বলন্ত আগ্রহ জাগায়।

নেপোলিয়নের যুদ্ধজয়ের রান্না: একটি মুরগি আর কিছু কল্পনার গল্প

০১:৩০:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

যুদ্ধের মাঝখানে এক ঐতিহাসিক রান্নার জন্ম

১৮০০ সালের গ্রীষ্মে ইতালির ছোট্ট গ্রাম মারেংগোর কাছে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অস্ট্রিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। হঠাৎ হামলায় ফরাসি বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়লেও সন্ধ্যার আগে তারা পাল্টা আক্রমণে বিজয় ছিনিয়ে নেয়। ঠিক তখনই সামনে আসে একটি ভিন্ন সমস্যা—জেনারেল নেপোলিয়নের রাতের খাবার!

বাজার বন্ধ, খাবারের সরবরাহ ছত্রভঙ্গ, আর রান্নাঘর প্রায় খালি। এমন দুঃসময়ে নেপোলিয়নের ব্যক্তিগত রাঁধুনি ডুনান্দ যা পেলেন, তাই নিয়েই রান্নায় নেমে পড়লেন—একটা মুরগি, কিছু টমেটো, অলিভ তেল, রসুন, একটু সাদা মদ আর বুনো মাশরুম। সব উপাদান একসঙ্গে চুলায় দিয়ে ধীরে ধীরে রান্না করলেন। ফলাফল—একটি মোটা স্বাদের, খাঁটি যুদ্ধকালীন খাবার।

নেপোলিয়ন সেই খাবার এতটাই উপভোগ করলেন যে কথিত আছে, পরবর্তী সব বিজয়ের পর তিনি এই খাবারই চাইতেন। সেই গল্প সত্য হোক বা না হোক, “চিকেন মারেংগো” আজও রান্নার ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।

রেসিপি: চিকেন মারেংগো

এই রান্নাটি এমন এক সময়ের স্বাদ বহন করে, যখন রেসিপি কাগজে লেখা নয়, মনে রাখা হতো। সোজাসাপ্টা কিন্তু স্তরযুক্ত স্বাদ—ভাজা মুরগি, নরম পেঁয়াজ, পাকা টমেটো, সাদা মদের আভাস আর মাশরুমের মাটির গন্ধ। সবকিছু মিলে তৈরি হয় গাঢ়, ঘন, অথচ মার্জিত এক ঝোল।

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

  • হাড়সহ ও চামড়াসহ ৮টি মুরগির রান
  • লবণ ও গুঁড়ো গোলমরিচ পরিমাণমতো
  • ½ কাপ ময়দা (মুরগি গড়াতে)
  • ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
  • ১টি ছোট পেঁয়াজ বা বড় শ্যালট, কুচি করা
  • ৩ কাপ স্লাইস করা বাটন বা ক্রিমিনি মাশরুম
  • ৩ কোয়া রসুন, কুচানো
  • ১ কাপ সাদা শুকনা মদ
  • ১ ক্যান টুকরো টমেটো
  • ১½ কাপ চিকেন স্টক
  • ১ চা চামচ শুকনা থাইম
  • ১টি তেজপাতা
  • ½টি কমলার খোসার গ্রেট (ঐচ্ছিক, কিন্তু স্বাদে আলো আনে)
  • সামান্য কুচি করা পার্সলি (সাজাতে)
  • ঐতিহাসিক গল্প অনুযায়ী ঐচ্ছিক উপকরণ: একটি ভাজা ডিম, কিছু রসুন ভাজা কাঁঠালের টোস্ট বা হালকা ভাজা চিংড়ি

প্রস্তুত প্রণালী:

মুরগির রানের উপর হালকা করে ময়দা ছড়িয়ে দিন ও ভালোভাবে লবণ-মরিচ মেখে নিন।

একটি ভারী প্যানে বা ডাচ ওভেনে অলিভ অয়েল গরম করে মুরগির দুই পাশ সোনালি করে ভেজে তুলে রাখুন।

ওই প্যানে পেঁয়াজ, মাশরুম ও রসুন দিয়ে নরম ও ক্যারামেলাইজ হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।

এবার সাদা মদ ঢেলে দিয়ে প্যানে লেগে থাকা ভাজা অংশ ঘষে ছাড়িয়ে দিন—এখানেই স্বাদের মূল রহস্য।

এরপর টমেটো, স্টক, থাইম, তেজপাতা আর কমলার খোসা দিন। ভালোভাবে নেড়ে মেশান।

মুরগিগুলো আবার প্যানে বসিয়ে দিন, ঢেকে হালকা আঁচে প্রায় ৪০ মিনিট রান্না করুন।

তেজপাতা তুলে ফেলে দিন, স্বাদ দেখে লবণ-ঘাটতি ঠিক করুন।

উপর থেকে পার্সলি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন। ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাইলে ভাজা ডিম বা টোস্ট যোগ করুন।

গরম গরম পরিবেশন করুন, সঙ্গে রাখতে পারেন রুটি, ভাত কিংবা মাখনের মতো মসৃণ ম্যাশড পটেটো।

এই যুদ্ধজয়ের রাঁধুনি তৈরি করেছিল কেবল এক বেলা পেট ভরানোর জন্য। কিন্তু তারই হাত ধরে জন্ম নিয়েছিল এক চিরন্তন রান্না, যা আজও রান্নাঘরে জ্বলন্ত আগ্রহ জাগায়।