নতুন গবেষণার উদ্বোধন
২০২৫ সালের ২৫ জুন ঢাকায় আইসিডিডিআর, বি এবং সহযোগী সংস্থাগুলোর যৌথ উদ্যোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এই গবেষণায় শহরের বস্তি এবং পোশাক কারখানায় কর্মরত নারীদের স্বাস্থ্যসেবা, জ্ঞান, আচরণ ও জীবনের মান নিয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়।
গবেষণার শিরোনাম ছিল: “বাংলাদেশি শহরে অনানুষ্ঠানিক বসতিতে বসবাসকারী কর্মজীবী নারীদের প্রজননস্বাস্থ্য জ্ঞান, মনোভাব ও চর্চা উন্নয়নের কৌশল”। এটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছে আইসিডিডিআর, বি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য সংস্থা ‘উইমেন ভয়েস’।
গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম
গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল শহরের বস্তি এবং পোশাক কারখানায় কর্মরত নারীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞানে কী ধরনের অগ্রগতি আনা যায় এবং কীভাবে টেকসই স্বাস্থ্য কৌশল বাস্তবায়ন করা যায়, তা বোঝা। গবেষণায় ঢাকা ও গাজীপুরের কয়েকটি গার্মেন্ট শিল্পাঞ্চলে কাজ করা নারীদের অংশগ্রহণে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে প্রজনন স্বাস্থ্য, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক স্বাস্থ্য, হাইজিন এবং গর্ভনিরোধক ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
গবেষণায় উল্লেখযোগ্য ফলাফল
গবেষণায় দেখা গেছে:
- কর্মজীবী নারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য জ্ঞান ও অভ্যাসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে।
- প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে:
- আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য জ্ঞান বেড়েছে ২৪.৭০%
- অনানুষ্ঠানিক খাতে ২৭.৬৬% বৃদ্ধি
- স্বাস্থ্যবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষমতা বেড়েছে ২১.২৪%:
- আনুষ্ঠানিক খাতে ১৮.২৫%
- অনানুষ্ঠানিক খাতে ২৩.৪৩%
- সঠিক স্বাস্থ্যচর্চা অনুশীলনে:
- আনুষ্ঠানিক খাতে ১৬.৯৭% উন্নতি
- অনানুষ্ঠানিক খাতে ১৫.৪১% উন্নতি
- নারীদের কর্মস্থলে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা:
- আনুষ্ঠানিক খাতে ১১.৫৮% বৃদ্ধি
তাছাড়া, কর্মস্থলভিত্তিক কার্যক্রম যেমন সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ এবং গর্ভনিরোধক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমের ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে।
বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা গল্প
গবেষণায় অংশ নেওয়া ২৮ বছর বয়সী এক গার্মেন্ট কর্মী জানান, তিনি একাধিকবার গর্ভধারণ করেছেন এবং অর্থের অভাবে প্রসব করাতে বাধ্য হয়েছেন, যার ফলে ঋণে জড়িয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা পাওয়ার ফলে পরিবার পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন।
গবেষণার গুরুত্ব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত
গবেষণা উপস্থাপনকালে আইসিডিডিআর, বি’র গবেষক ড. তাসনিম তোহা বলেন, “এই ফলাফল ভবিষ্যতের জন্য একটি দিকনির্দেশনা। বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী সময়ে নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও বেড়েছে এবং এই গবেষণা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।”
গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক ড. ফারহানা হোসেন বলেন, “পোশাক শিল্পে কর্মরত নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই ধরনের কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চালানো প্রয়োজন।”
সরকারের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব নূরুল আলম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, “গবেষণার ফলাফল আমাদের নীতিনির্ধারণে সাহায্য করবে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ইতোমধ্যে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে।”
আইসিডিডিআর, বি’র পপুলেশন হেলথ ডিভিশনের পরিচালক ড. জোহরা খালেদ জানান, এই গবেষণা শুধু একাডেমিক পর্যায়ের নয়, এটি বাস্তব প্রয়োগ ও শহরের শ্রমজীবী নারীদের উন্নয়নে কার্যকর কৌশল তৈরি করতে সহায়ক হবে।