আজ আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোধী দিবস উপলক্ষে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) সরকারকে অবিলম্বে নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর আইনগত সংস্কার ও বিচারপ্রাপ্তির পথে থাকা মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছে। ব্লাস্ট বলেছে, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা বছরের পর বছর বিচার ও ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় থেকে ন্যায়্যতা পান না—এ অবস্থা অবিলম্বে বদলাতে হবে।
আইনি সংস্কার ও ওপিসিএটি অনুসমর্থনের দাবি
ওপিসিএটি অনুসমর্থন: ব্লাস্ট জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী সনদের ঐচ্ছিক প্রোটোকল (ওপিসিএটি) দ্রুত অনুসমর্থনের অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে আটককেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাধীন ‘ন্যাশনাল প্রিভেন্টিভ মেকানিজম’ গঠিত হয়।
স্থানীয় আইন হালনাগাদ: ২০১৩ সালের ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন’ ও ১৮৯৮ সালের দণ্ডবিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধিসহ সংশ্লিষ্ট আইন যুগোপযোগী করে তদন্ত-বিচার ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা শক্তিশালী করার দাবি জানানো হয়েছে।
দৃষ্টান্তমূলক মামলার দীর্ঘসূত্রতা
ব্লাস্ট উল্লেখ করেছে, তাদের সহায়তায় করা কয়েকটি আলোচিত মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে—
- ২০১১ সালের একটি চাঞ্চল্যকর পুলিশ নির্যাতন মামলা আজও প্রক্রিয়াধীন, যা বিচার-বিলম্বের জ্বলন্ত উদাহরণ।
- ২০১৪ সালে হেফাজতে মৃত্যু-সংক্রান্ত আরেকটি মামলা উচ্চ আদালতে আপিল পর্যায়েই আটকে আছে। মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা ভুক্তভোগী পরিবারকে অনিশ্চয়তায় রাখছে এবং নির্যাতন বন্ধে প্রতিবন্ধক তৈরি করছে।
সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা
বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ স্পষ্টই নির্যাতন নিষিদ্ধ করে নাগরিকদের সমতা, জীবনের অধিকার, গ্রেপ্তার-রিমান্ডে ন্যায়্য আচরণ ও নিরপেক্ষ বিচারের নিশ্চয়তা দেয়। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ ইউএনসিএটি অনুস্বাক্ষর করলেও সনদের ২০, ২১ ও ২২ ধারা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, ফলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে ঘাটতি রয়েছে।
ওপিসিএটি অনুসমর্থনের গুরুত্ব
ওপিসিএটি অনুসমর্থন হলে—
- স্বাধীন তদারক কাঠামো গঠন করে আটককেন্দ্রে নিয়মিত পরিদর্শন নিশ্চিত করা যাবে।
- আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে জবাবদিহি জোরদার হবে।
- নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
ব্লাস্টের সুপারিশ
- নির্যাতন-বিরোধী আইন ও বিধি দ্রুত সংস্কার ও কার্যকর প্রয়োগ।
- চলমান নির্যাতন-সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বা দ্রুতগতির আদালত গঠন।
- তদন্ত সংস্থা, পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্ট দায়বদ্ধতার আওতায় এনে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা।
- ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও মানসিক সহায়তা।
- ওপিসিএটি অনুসমর্থন ও জাতীয় প্রতিরোধ-প্রণালী অবিলম্বে গঠন।