শহরে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু
চলমান মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা লাঘব করতে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশের শহর ও পৌর এলাকায় টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম জোরদার করেছে। ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট স্থানে টিসিবির ট্রাক থেকে সীমিত মূল্যে চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও ছোলা বিক্রি করা হচ্ছে। শহরের নিম্নআয়ের মানুষের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে এসব পণ্য কিনতে দেখা গেছে।
ঢাকার গাবতলী এলাকায় টিসিবির লাইনে দাঁড়ানো বাসচালক হুমায়ুন কবির বলেন, “বাজারে তেলের দাম ২০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। টিসিবির তেল ১০০ টাকায় পেয়ে কিছুটা স্বস্তি। কিন্তু পরিবার নিয়ে এক লিটার তেলে ক’দিন চলে?”
শহরকেন্দ্রিক বণ্টনে অসন্তোষ
যদিও শহর ও পৌর এলাকায় টিসিবির কার্যক্রম দৃশ্যমান, কিন্তু গ্রামীণ অঞ্চলে টিসিবির এই উদ্যোগ নেই বললেই চলে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, টিসিবির বিক্রির ৮০ শতাংশই শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বাজারমূল্যের চড়া দামেই চাল, ডাল, তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের গ্রামে তো টিসিবির ট্রাক আসে না। বাজারে ১ কেজি ডাল ১৬০ টাকা, চাল ৭০ টাকা। এভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে না।”
কৃষিপণ্য উৎপাদকরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত
গ্রামীণ অর্থনীতির বড় একটি অংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল। অথচ বাজারে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অপরদিকে, শহরে সেই কৃষিপণ্য দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে, উৎপাদক কৃষক যেমন বঞ্চিত, তেমনি সাধারণ ভোক্তাও চাপে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদ ড. নুরুল আমিন মনে করেন, “শহরকেন্দ্রিক নীতির কারণে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী উপেক্ষিত হচ্ছে। টিসিবির কার্যক্রম গ্রামের হাট-বাজারেও বিস্তৃত করা উচিত। অন্যথায় এক ধরনের খাদ্য বৈষম্য তৈরি হবে।”
সমাধানের প্রস্তাব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামীণ অঞ্চলে টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্র বাড়ানো, ইউনিয়ন পর্যায়ে ট্রাকসেল চালু করা এবং স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হতদরিদ্র পরিবারকে সুলভমূল্যে পণ্য বিতরণের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ ও সরকারিভাবে সংগ্রহের ব্যবস্থা করলে শহর-গ্রামের বৈষম্য কিছুটা কমবে।