০৬:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে গড়া আইএসের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দাবি মালয়েশিয়ার পুলিশের হোটেলে হামলা ও নারীদের হেনস্তার ভিডিও ভাইরালের পর যুবদল নেতা বহিষ্কার, কী জানা যাচ্ছে সালমান শাহ: চার বছরের রাজত্বে অমর এক নায়ক মব ভায়োলেন্সে দ্বৈত-সঙ্কেত দামে আগুন, ফুটিয়েও আতঙ্ক: বিশুদ্ধ পানির জন্য ঢাকার অসহায় লড়াই হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহত ইতালীয় নাগরিকদের পরিচয়, শোক, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এ বছর গ্রামীণ ও উপশহর এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার কেন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে? চেকিয়ার জাতীয় ব্ল্যাকআউট: তদন্তে নেমেছে কর্তৃপক্ষ ঢাকা জনঘনত্বের দিক থেকে ৩০ কোটি মানুষের নগরী? সোশ্যাল মিডিয়া: এক প্রজন্মকে হতাশা, অমনোযোগ, অলসতা ও বৈষম্য’র দিকে ঠেলে দেওয়া

টানা বৃষ্টিতে সবজি ও ফসলের অবস্থা: কোন কোন এলাকা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, বাজারে মূল্যবৃদ্ধি

টানা বৃষ্টি ও দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবল বর্ষণ ও থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা এবং নিম্নচাপের কারণে এই বৃষ্টি আরও কয়েক দিন চলতে পারে।

বৃষ্টির প্রভাব: জলাবদ্ধতা ও ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ

টানা বৃষ্টির ফলে দেশের বহু জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। নিচু এলাকার জমি তলিয়ে গেছে। সবজি চাষের জন্য এই জলাবদ্ধতা মারাত্মক ক্ষতিকর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রাথমিক জরিপে জানা যাচ্ছে, দেশের নিম্নাঞ্চল যেমন ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের কিছু অংশ এবং বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের হাওর এলাকার অনেক মাঠে পানি জমে গেছে।

কোন কোন ফসল ও সবজি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত?

কাঁচা মরিচ: টানা বৃষ্টিতে মরিচ গাছ পচে যাচ্ছে। কুমিল্লা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার মরিচ চাষিরা বড় ক্ষতির মুখে।

শাক-সবজি: লাল শাক, পুঁই শাক, ঢেঁড়স, ঝিঙে, করলা, বেগুনের ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকা অঞ্চলের সবজি খেত জলমগ্ন।

শিম ও কুমড়া জাতীয় সবজি: এই ফলন্ত লতানো ফসলগুলোর শিকড় পচে যাচ্ছে।

কুমড়া, লাউ, চালকুমড়া: বেশি পানি সহ্য করতে পারে না, ফলে গাছ মারা যাচ্ছে।

আলু বীজতলা ও আদা ক্ষেত: অনেক জায়গায় পানি জমে থাকায় বীজ পচে যাচ্ছে। রংপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু অংশে এই ক্ষতি হচ্ছে।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জের নিচু জমি

নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী

চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, পটিয়া

কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ

সিলেটের হাওর এলাকা (ধান ছাড়া অন্য শাকসবজি খেতে পানি জমে নষ্ট হচ্ছে)

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিছু নিচু এলাকায় সবজি ক্ষতি হচ্ছে

বাজারে সরবরাহে প্রভাব
সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে সরবরাহে। বৃষ্টির কারণে:

ক্ষেতে গিয়ে সবজি তোলা ও আনা সম্ভব হচ্ছে না।

যেসব ক্ষেত বেঁচে আছে, সেখান থেকেও কম পরিমাণে তোলা হচ্ছে।

যানবাহন চলাচলে সমস্যা হওয়ায় পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমে গেছে।

সংরক্ষণ করা সবজির গুণগত মানও নষ্ট হচ্ছে।

বাজারে দরে কী প্রভাব পড়বে?

পাইকারি বাজারে ইতিমধ্যেই অনেক সবজির দাম ২০-৩০% বেড়ে গেছে।

ঢাকাসহ বড় শহরে ঢেঁড়স, করলা, শিম, বেগুন, কাঁচা মরিচের দাম প্রতিকেজি ১০-২০ টাকা বেশি হয়ে গেছে।

নিত্যকার শাক (লাল শাক, পুঁই শাক) সহজলভ্য নয়, দাম দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা।

পরের সপ্তাহে যদি বৃষ্টি না কমে বা জলাবদ্ধতা না নেমে যায়, দাম আরও বাড়তে পারে।

বিশেষ করে রমজানের বাজারে সবজির চাহিদা বাড়বে, তখন দাম নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হবে।

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বাজার বিশ্লেষকের মত

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন:

“যতক্ষণ না বৃষ্টি থামে এবং মাঠ শুকায়, নতুন করে চাষ বা ক্ষেত থেকে সবজি তোলা সম্ভব নয়। ফলে সাময়িকভাবে সরবরাহ সংকট হতেই থাকবে।”

একজন বাজার বিশ্লেষক জানিয়েছেন:

“যদি এই বৃষ্টি সপ্তাহখানেক চলতে থাকে, কাঁচা মরিচ, ঢেঁড়স, বেগুনের দাম শহরে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। শাকের দামও দুই-তিনগুণ হয়ে যেতে পারে।”

সরকার বা প্রশাসনের উদ্যোগ
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে:

জরুরি পর্যবেক্ষণ চলছে।

যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের তালিকা করা হচ্ছে।

পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।

ক্ষতিপূরণ বা পুনরায় বীজ-সার সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

টানা বৃষ্টি দেশের সবজি চাষের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে। কিছু এলাকায় ফসল একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে আবহাওয়া স্বাভাবিক না হলে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাবে এবং দাম আরও বাড়বে। সরকার ও কৃষকদের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।

বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে গড়া আইএসের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দাবি মালয়েশিয়ার পুলিশের

টানা বৃষ্টিতে সবজি ও ফসলের অবস্থা: কোন কোন এলাকা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, বাজারে মূল্যবৃদ্ধি

০৩:০০:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

টানা বৃষ্টি ও দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবল বর্ষণ ও থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা এবং নিম্নচাপের কারণে এই বৃষ্টি আরও কয়েক দিন চলতে পারে।

বৃষ্টির প্রভাব: জলাবদ্ধতা ও ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ

টানা বৃষ্টির ফলে দেশের বহু জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। নিচু এলাকার জমি তলিয়ে গেছে। সবজি চাষের জন্য এই জলাবদ্ধতা মারাত্মক ক্ষতিকর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রাথমিক জরিপে জানা যাচ্ছে, দেশের নিম্নাঞ্চল যেমন ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের কিছু অংশ এবং বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের হাওর এলাকার অনেক মাঠে পানি জমে গেছে।

কোন কোন ফসল ও সবজি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত?

কাঁচা মরিচ: টানা বৃষ্টিতে মরিচ গাছ পচে যাচ্ছে। কুমিল্লা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার মরিচ চাষিরা বড় ক্ষতির মুখে।

শাক-সবজি: লাল শাক, পুঁই শাক, ঢেঁড়স, ঝিঙে, করলা, বেগুনের ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকা অঞ্চলের সবজি খেত জলমগ্ন।

শিম ও কুমড়া জাতীয় সবজি: এই ফলন্ত লতানো ফসলগুলোর শিকড় পচে যাচ্ছে।

কুমড়া, লাউ, চালকুমড়া: বেশি পানি সহ্য করতে পারে না, ফলে গাছ মারা যাচ্ছে।

আলু বীজতলা ও আদা ক্ষেত: অনেক জায়গায় পানি জমে থাকায় বীজ পচে যাচ্ছে। রংপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু অংশে এই ক্ষতি হচ্ছে।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জের নিচু জমি

নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী

চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, পটিয়া

কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ

সিলেটের হাওর এলাকা (ধান ছাড়া অন্য শাকসবজি খেতে পানি জমে নষ্ট হচ্ছে)

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিছু নিচু এলাকায় সবজি ক্ষতি হচ্ছে

বাজারে সরবরাহে প্রভাব
সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে সরবরাহে। বৃষ্টির কারণে:

ক্ষেতে গিয়ে সবজি তোলা ও আনা সম্ভব হচ্ছে না।

যেসব ক্ষেত বেঁচে আছে, সেখান থেকেও কম পরিমাণে তোলা হচ্ছে।

যানবাহন চলাচলে সমস্যা হওয়ায় পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমে গেছে।

সংরক্ষণ করা সবজির গুণগত মানও নষ্ট হচ্ছে।

বাজারে দরে কী প্রভাব পড়বে?

পাইকারি বাজারে ইতিমধ্যেই অনেক সবজির দাম ২০-৩০% বেড়ে গেছে।

ঢাকাসহ বড় শহরে ঢেঁড়স, করলা, শিম, বেগুন, কাঁচা মরিচের দাম প্রতিকেজি ১০-২০ টাকা বেশি হয়ে গেছে।

নিত্যকার শাক (লাল শাক, পুঁই শাক) সহজলভ্য নয়, দাম দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা।

পরের সপ্তাহে যদি বৃষ্টি না কমে বা জলাবদ্ধতা না নেমে যায়, দাম আরও বাড়তে পারে।

বিশেষ করে রমজানের বাজারে সবজির চাহিদা বাড়বে, তখন দাম নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হবে।

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বাজার বিশ্লেষকের মত

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন:

“যতক্ষণ না বৃষ্টি থামে এবং মাঠ শুকায়, নতুন করে চাষ বা ক্ষেত থেকে সবজি তোলা সম্ভব নয়। ফলে সাময়িকভাবে সরবরাহ সংকট হতেই থাকবে।”

একজন বাজার বিশ্লেষক জানিয়েছেন:

“যদি এই বৃষ্টি সপ্তাহখানেক চলতে থাকে, কাঁচা মরিচ, ঢেঁড়স, বেগুনের দাম শহরে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। শাকের দামও দুই-তিনগুণ হয়ে যেতে পারে।”

সরকার বা প্রশাসনের উদ্যোগ
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে:

জরুরি পর্যবেক্ষণ চলছে।

যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের তালিকা করা হচ্ছে।

পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।

ক্ষতিপূরণ বা পুনরায় বীজ-সার সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

টানা বৃষ্টি দেশের সবজি চাষের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে। কিছু এলাকায় ফসল একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে আবহাওয়া স্বাভাবিক না হলে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাবে এবং দাম আরও বাড়বে। সরকার ও কৃষকদের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।