শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতারের কার্যালয়ে ঢুকে সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি বোর্ড বাতিলের দাবি তোলেন। হট্টগোলের একপর্যায়ে এক শিক্ষার্থী উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন,
“আপনি মেধার জোরে আসেননি, আমরা আপনাকে বসিয়েছি।”
চার মিনিটের এই মোবাইল ভিডিওটি রাতেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ক্ষোভ ও নিন্দার জন্ম দেয়। প্রকাশ করে দেয় বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবতা ও বিগত আন্দোলনের ছাত্রদের নৈতিক পরিচয়। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষকের অসহায়ত্ব।
কারা ছিল, কেন ছিল
- সংগঠন: ইসলামী ছাত্র শিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলো।
- দাবি: ২০২৪ সালের একটি সহিংসতার মামলার ২০ নম্বর আসামি হওয়ায় কুশল চক্রবর্তীর পদোন্নতি বাতিল এবং তাঁকে চাকরিচ্যুত করা।
ভিডিওতে কারা কী বললেন
বক্তা | বক্তব্য | পরবর্তী অবস্থান |
তাহসান হাবীব (ইতিহাস, ২০১৮–১৯ সেশন) | “স্যার, আপনাকে আমরা বসিয়েছি, কথা শুনতেই হবে।” | পরে দুঃখ প্রকাশ করে উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। |
শাখাওয়াত হোসেন (শিবিরের সাবেক নেতা) | “এখানে আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি।” | জানান, উত্তেজনার বশে বলা কথা ছিল। |
উপাচার্যের প্রতিক্রিয়া
প্রফেসর ইয়াহিয়া আখতার সাংবাদিকদের জানান, ব্যক্তিগত আক্রমণকে তিনি গুরুত্ব দেননি। “এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে; আলোচনার মাধ্যমেই ক্যাম্পাস চালাতে চাই,” বলেন তিনি।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
- বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ঘটনাটিকে “অশোভন ও মর্যাদা–পরিপন্থী” বলে মন্তব্য করেছেন।
- সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লিখেছেন, “আন্তর্জাতিক মানের স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে কথা বলা কাম্য নয়।”
পদোন্নতি বোর্ডের বর্তমান অবস্থা
চাপের মুখে কর্তৃপক্ষ সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল চক্রবর্তীর পদোন্নতি প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট
বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতার সংকট এবং ছাত্ররাজনীতির প্রভাব নিয়ে আগেও বিতর্ক হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে—
স্বচ্ছ নিয়োগ নিশ্চিত না হলে প্রশাসনের নৈতিক কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে।
ছাত্রসংগঠনগুলোর এ ধরেনের নিয়ন্ত্রণ শিক্ষক–শিক্ষার্থী সম্পর্ককে নষ্ট করছে।
ক্যাম্পাসে নিয়মিত সংলাপ ও জবাবদিহি বাড়ালেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
সামনে কী
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ (রোববার) জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকেছে। সেখানে—
- পদোন্নতি বোর্ডের ভবিষ্যৎ,
- ছাত্ররাজনীতি–সংক্রান্ত বিধিবিধান,
- উপাচার্য কার্যালয়ের নিরাপত্তা
নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা আবারও দেখাল, ক্ষমতার বলয়ে যাঁরা নিজেদের সুবিধাভোগী মনে করেন, তাঁরা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকেও প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করতে দ্বিধা করছেন না। শিক্ষাঙ্গনে স্বশাসন ও মেধাভিত্তিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।