১০:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫
বিনিয়োগে হঠাৎ বিরতি: ১১ মাসের বিদেশি স্থবিরতা  অনেক বোমা, সামান্য পরিবর্তন – ইরান-ইসরায়েলের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে বড় রকমের রূপান্তর আনতে পারেনি হিউএনচাঙ (পর্ব-১৪০) বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া পুতুলশিল্প: চীন ও জাপানের সাফল্য এবং সম্ভাব্য পুনরুত্থান নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন ইলন মাস্ক বাড়ছে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: বিশেষ ঝুঁকিতে থাকলেও ছেলেরা কেন সহায়তা চায় না? বাংলাদেশের পান পাতা: বিদেশে রফতানি ও চ্যালেঞ্জ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা: উপাচার্যকে ঘিরে ছাত্রদের ‘মেধা’ মন্তব্য ভাইরাল বাংলাদেশে আনুপাতিক ভোটব্যবস্থা: সম্ভাবনা, শঙ্কা ও সমঝোতার চ্যালেঞ্জ সংস্কার প্রশ্নে সমালোচনার মুখে বিএনপি, জবাবে যা বলছেন নেতারা

বাংলাদেশে আনুপাতিক ভোটব্যবস্থা: সম্ভাবনা, শঙ্কা ও সমঝোতার চ্যালেঞ্জ

আনুপাতিক ভোটব্যবস্থার মূল ধারণা

আনুপাতিক ভোটব্যবস্থা বা proportional representation (PR) এমন একটি পদ্ধতি যেখানে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি দলের আসনসংখ্যা মোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। কোনো দল যদি মোট ভোটের ৩০ শতাংশ পায়, তবে তারা সংসদে প্রায় ৩০ শতাংশ আসনই পাবে।

বর্তমান ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট’ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশে বর্তমানে ‘first-past-the-post’ একক-জয়ী আসনভিত্তিক (single-member constituency) পদ্ধতি চালু আছে। এখানে যে প্রার্থী সর্বাধিক ভোট পান, তিনি জেতেন—অন্য প্রার্থীদের সব ভোট কার্যত হারিয়ে যায়। এতে দেখা যায়, জাতীয়ভাবে কোনো দল ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে ৬০-৭০ শতাংশ আসনও পেয়ে যায়।

৩. আনুপাতিক পদ্ধতিতে আসন বণ্টন উদাহরণ

  • দল A: ৪০ শতাংশ ভোট → প্রায় ৪০ শতাংশ আসন
  • দল B: ৩০ শতাংশ ভোট → প্রায় ৩০ শতাংশ আসন
  • দল C: ২০ শতাংশ ভোট → প্রায় ২০ শতাংশ আসন

এভাবে ছোট দলগুলোরও সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

 বিশ্বজুড়ে প্রচলিত প্রধান দুটি রূপ

পার্টি-লিস্ট PR

o   ভোটাররা একটি পার্টিকে ভোট দেন।

o   প্রতিটি দল আগেভাগে একটি প্রার্থী-তালিকা জমা দেয়।

o   ভোটের অনুপাতে সেই তালিকা থেকে এমপি মনোনীত হন।

মিক্সড-মেম্বার PR

o   কিছু আসন সরাসরি এলাকার প্রার্থীদের জন্য (যেমন এখন)।

o   বাকি আসন দলগুলোর মোট ভোট অনুপাতে বণ্টিত হয়।

বাংলাদেশে আনুপাতিক পদ্ধতি প্রস্তাবের পটভূমি

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের মতে, সংসদকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক করতে PR চালু জরুরি। তাঁদের যুক্তি—

  • দুই প্রধান দলের বাইরে ছোট দলগুলো ক্রমেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে।
  • জাতীয় ভোটের প্রকৃত রায় সংসদে প্রতিফলিত হয় না।
  • একতরফা পার্লামেন্ট গঠনের ঝুঁকি কমবে।
  • রাজনৈতিক সহাবস্থান ও সমঝোতার সংস্কৃতি বিকশিত হবে।

মাহমুদুর রহমান মান্নার শঙ্কা

নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সতর্ক করে বলেছেন—
“যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারে, তারা জুলাই আন্দোলনের সব দল মিলেও যত ভোট পাবে, তার চেয়ে বেশি পাবে।”

তাঁর মূল যুক্তি

সরকারি প্রভাব ছাড়াই আওয়ামী লীগ তাদের ঐতিহ্যিক ভোট-ব্যাংক (গ্রাম, শহর, স্থায়ী সমর্থক) ধরে রাখতে পারবে।

‘জুলাই আন্দোলন’ (২০২৪-২৫-এর বিরোধী জোট)-এর অংশীদার দলগুলো পৃথক তালিকায় দাঁড়ালে ভোট ছড়িয়ে যাবে।

ফলস্বরূপ, আনুপাতিক পদ্ধতিতেও আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বড় অংশীদার হয়ে উঠতে পারে।

বিরোধীদের সম্ভাব্য কৌশল

  • যৌথ তালিকা (কমন লিস্ট) গঠন করে সম্মিলিত ভোট একত্র করা।
  • স্পষ্ট নীতিগত সমঝোতা ও কৌশলগত জোট গড়া।
  • নির্বাচনী প্রচারে সমন্বিত বার্তা ও ভোটার-আহ্বান নিশ্চিত করা।

আনুপাতিক ভোটব্যবস্থা ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ব্যবস্থার সম্ভাবনা জাগায়—বিশেষত ছোট দল ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বরকে সংসদে তুলে ধরতে। তবে এটি কার্যকর করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বচ্ছ সমঝোতা, টেকসই জোট এবং সুস্পষ্ট কৌশল অপরিহার্য; অন্যথায়, ঐতিহাসিকভাবে বৃহৎ ভোট-ব্যাংকধারী দলগুলোই লাভবান হতে পারে।

বিনিয়োগে হঠাৎ বিরতি: ১১ মাসের বিদেশি স্থবিরতা

বাংলাদেশে আনুপাতিক ভোটব্যবস্থা: সম্ভাবনা, শঙ্কা ও সমঝোতার চ্যালেঞ্জ

০৫:২৫:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

আনুপাতিক ভোটব্যবস্থার মূল ধারণা

আনুপাতিক ভোটব্যবস্থা বা proportional representation (PR) এমন একটি পদ্ধতি যেখানে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি দলের আসনসংখ্যা মোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। কোনো দল যদি মোট ভোটের ৩০ শতাংশ পায়, তবে তারা সংসদে প্রায় ৩০ শতাংশ আসনই পাবে।

বর্তমান ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট’ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশে বর্তমানে ‘first-past-the-post’ একক-জয়ী আসনভিত্তিক (single-member constituency) পদ্ধতি চালু আছে। এখানে যে প্রার্থী সর্বাধিক ভোট পান, তিনি জেতেন—অন্য প্রার্থীদের সব ভোট কার্যত হারিয়ে যায়। এতে দেখা যায়, জাতীয়ভাবে কোনো দল ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে ৬০-৭০ শতাংশ আসনও পেয়ে যায়।

৩. আনুপাতিক পদ্ধতিতে আসন বণ্টন উদাহরণ

  • দল A: ৪০ শতাংশ ভোট → প্রায় ৪০ শতাংশ আসন
  • দল B: ৩০ শতাংশ ভোট → প্রায় ৩০ শতাংশ আসন
  • দল C: ২০ শতাংশ ভোট → প্রায় ২০ শতাংশ আসন

এভাবে ছোট দলগুলোরও সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

 বিশ্বজুড়ে প্রচলিত প্রধান দুটি রূপ

পার্টি-লিস্ট PR

o   ভোটাররা একটি পার্টিকে ভোট দেন।

o   প্রতিটি দল আগেভাগে একটি প্রার্থী-তালিকা জমা দেয়।

o   ভোটের অনুপাতে সেই তালিকা থেকে এমপি মনোনীত হন।

মিক্সড-মেম্বার PR

o   কিছু আসন সরাসরি এলাকার প্রার্থীদের জন্য (যেমন এখন)।

o   বাকি আসন দলগুলোর মোট ভোট অনুপাতে বণ্টিত হয়।

বাংলাদেশে আনুপাতিক পদ্ধতি প্রস্তাবের পটভূমি

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের মতে, সংসদকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক করতে PR চালু জরুরি। তাঁদের যুক্তি—

  • দুই প্রধান দলের বাইরে ছোট দলগুলো ক্রমেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে।
  • জাতীয় ভোটের প্রকৃত রায় সংসদে প্রতিফলিত হয় না।
  • একতরফা পার্লামেন্ট গঠনের ঝুঁকি কমবে।
  • রাজনৈতিক সহাবস্থান ও সমঝোতার সংস্কৃতি বিকশিত হবে।

মাহমুদুর রহমান মান্নার শঙ্কা

নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সতর্ক করে বলেছেন—
“যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারে, তারা জুলাই আন্দোলনের সব দল মিলেও যত ভোট পাবে, তার চেয়ে বেশি পাবে।”

তাঁর মূল যুক্তি

সরকারি প্রভাব ছাড়াই আওয়ামী লীগ তাদের ঐতিহ্যিক ভোট-ব্যাংক (গ্রাম, শহর, স্থায়ী সমর্থক) ধরে রাখতে পারবে।

‘জুলাই আন্দোলন’ (২০২৪-২৫-এর বিরোধী জোট)-এর অংশীদার দলগুলো পৃথক তালিকায় দাঁড়ালে ভোট ছড়িয়ে যাবে।

ফলস্বরূপ, আনুপাতিক পদ্ধতিতেও আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বড় অংশীদার হয়ে উঠতে পারে।

বিরোধীদের সম্ভাব্য কৌশল

  • যৌথ তালিকা (কমন লিস্ট) গঠন করে সম্মিলিত ভোট একত্র করা।
  • স্পষ্ট নীতিগত সমঝোতা ও কৌশলগত জোট গড়া।
  • নির্বাচনী প্রচারে সমন্বিত বার্তা ও ভোটার-আহ্বান নিশ্চিত করা।

আনুপাতিক ভোটব্যবস্থা ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ব্যবস্থার সম্ভাবনা জাগায়—বিশেষত ছোট দল ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বরকে সংসদে তুলে ধরতে। তবে এটি কার্যকর করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বচ্ছ সমঝোতা, টেকসই জোট এবং সুস্পষ্ট কৌশল অপরিহার্য; অন্যথায়, ঐতিহাসিকভাবে বৃহৎ ভোট-ব্যাংকধারী দলগুলোই লাভবান হতে পারে।