০৭:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫
বাড়ছে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: বিশেষ ঝুঁকিতে থাকলেও ছেলেরা কেন সহায়তা চায় না? বাংলাদেশের পান পাতা: বিদেশে রফতানি ও চ্যালেঞ্জ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা: উপাচার্যকে ঘিরে ছাত্রদের ‘মেধা’ মন্তব্য ভাইরাল বাংলাদেশে আনুপাতিক ভোটব্যবস্থা: সম্ভাবনা, শঙ্কা ও সমঝোতার চ্যালেঞ্জ সংস্কার প্রশ্নে সমালোচনার মুখে বিএনপি, জবাবে যা বলছেন নেতারা দ্বিতীয় ওয়ানডের নাটক: সিরিজে সমতায় বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ, সেখানে যা ঘটেছিল প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-২৭) কিং কোবরা: বাংলাদেশের লুকানো বন-সম্রাট কি হারিয়ে যাচ্ছে? নিয়মের জালে ভারত: কেন আইন ভাঙাই নিত্যনৈমিত্তিক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ, সেখানে যা ঘটেছিল

  • Sarakhon Report
  • ১২:৩৬:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
  • 12

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার ঘিরে একজন শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক হট্টগোলের পরিবেশ তৈরি হয়। এরপর ওই শিক্ষকের সাক্ষাৎকারের বোর্ড বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

উপাচার্যের উপস্থিতিতেই ওই শিক্ষককে ঘিরে হট্টগোলের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তীকে ঘিরে হট্টগোল করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। ওই দিন তার পদোন্নতির সাক্ষাৎকারের জন্য সময় নির্ধারিত ছিল।

তবে শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তীর অভিযোগ, মিথ্যা মামলার দোহাই দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মব তৈরি করে তাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে।

যদিও কুশল বরণ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ থাকায় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তার পদন্নোতির সাক্ষাৎকার আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক শামিম উদ্দিন খান।

মি. খান বিবিসি বাংলাকে জানান, “তার বিরুদ্ধে মামলা আছে এটি আমাদের জানা ছিল না। ছাত্রদের কাছ থেকে অভিযোগ আসার পরে তার নামটা বোর্ড থেকে উইড্রো করছি। পরবর্তীতে বোর্ড দেয়া হবে।”

চট্টগ্রামের আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের সময়কার একটি মামলায় এই শিক্ষক আসামি বলে আন্দোলনকারীদের দাবি। তবে মি. চক্রবর্তীর দাবি, সেদিনের কোনো ঘটনার সাথে তিনি জড়িত নন।

তার দাবি, “আলিফ হত্যার দিন আমি চট্টগ্রামেই ছিলাম না। অসুস্থ অবস্থায় ঢাকায় ছিলাম।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত না থাকলেও হিন্দু অধিকার বিষয়ক বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন।

২০২৪ এর অক্টোবরে চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিতে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়েও সরব ছিলেন।

ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিসে হট্টগোলের একটি ভিডিও শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তীকে ঘিরে কয়েকজনকে হট্টগোল করতে দেখা যায়।

ভিডিওতে তাদের কয়েকজনকে ওই শিক্ষকের সাথে তর্ক করতে এবং তাকে পদোন্নতি দেয়া যাবে না বলে চিৎকার করতে দেখা যায়।

এই সময় উপাচার্যের উদ্দেশ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়, ”আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি, আপনাকে আমরা বসিয়েছি, আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ্য।”

কয়েকজন যুবকের পাশাপাশি ভিডিওটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কয়েকজন শিক্ষককেও দেখা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকেই সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতির ভাইভা ঘিরে আলোচনা চলছিল। তাকে বরখাস্ত করার দাবি তুলে প্রচারণাও চালানো হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একজন সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে জানান, ইসলামী ছাত্র শিবির, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চসহ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দেয়া শুরু করে। পরে তারা উপাচার্যের সঙ্গেও দেখা করেন।

“সকাল থেকেই পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে ছিল। কুশল চক্রবর্তী উপাচার্যের রুমে ঢুকতেই হট্টগোল শুরু হয়,” বলেন ওই সাংবাদিক।

ছাত্রদের ওই বিক্ষোভে অংশ নেয়া ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আব্দুর রহমান বিবিসি বাংলাকে জানান, অভ্যুত্থানের আগে কুশল বরণ চক্রবর্তী ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন। এ কারণেই তার পদোন্নতির বোর্ড বাতিলের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে তাকে ঘিরে একটা প্রচারণা চলছে এটি জানতেন সংস্কৃত বিভাগের ওই শিক্ষকও।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, “পদোন্নতির পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকার দিতেই শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে যাই আমি। রেজিস্ট্রার ভবনের বাইরে প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষাও করি। একপর্যায়ে ভিসি স্যারের রুমে প্রবেশ করি আমি,” বলেন মি. চক্রবর্তী।

তার দাবি “এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার পদোন্নতির প্রক্রিয়া পেন্ডিং আছে। কিন্তু অপপ্রচার চালিয়ে মব তৈরি করে আমাকে অপদস্ত করা হলো।”

তিনি জানান, প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে তাকে বাসায় পৗেঁছে দেওয়া হয়।

শুক্রবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল
শুক্রবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল

যদিও হট্টগোল শুরুর দায় শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তীকেই দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “ছাত্রদের যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সেটাতে আসলে ঘি ঢালার মতো হয়েছিল, যখন ছাত্ররাও ভিসি স্যারের সাথে আলোচনা করছিল, তখন আমাদের সহকর্মী কুশল বিনা অনুমতিতে হঠাৎ উপাচার্যের রুমে ঢুকে যান।”

তিনি বলছেন, টিচার সিলেকশন বোর্ড অন্য বোর্ডের মতোই স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তবে, এই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিতে আঘাত হেনেছে।

যদিও উপাচার্যের রুমে যাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন বলে দাবি ওই শিক্ষকের।

মি. চক্রবর্তীর বলছেন, “পরিস্থিতি দেখে করণীয় ঠিক করতে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য স্যারকে বারবার ফোন করার পরও তারা ফোন রিসিভ করেননি। প্রক্টরও কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে বাধ্য হয়েই আমি উপাচার্যের রুমে প্রবেশ করি।”

“আমি না গেলে অনুপস্থিতির কারণে আমার পদোন্নতির প্রক্রিয়া অটোমেটিক বাতিল হয়ে যেত,” বলছেন মি. চক্রবর্তী।

এদিকে এই ঘটনার পর পদোন্নতি বোর্ড থেকে কুশল বরণ চক্রবর্তীর নাম বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) বিবিসি বাংলাকে জানান, “নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তাদের প্ল্যানিং কমিটি ডেট দিয়েছে। আমরা যখন জানলাম যে তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। ছাত্রদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ আসলো তখন তার নাম আপাতত প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।”

“তবে বাকি যারা ছিল তাদের সিলেকশন বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে”, জানান মি. খান।

গত বছরের অক্টোবরে চট্টগ্রামে সনাতন সম্প্রদায়ের সমাবেশ
গত বছরের অক্টোবরে চট্টগ্রামে সনাতন সম্প্রদায়ের সমাবেশ

এই ঘটনাকে অনাকাঙ্খিত বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান লিটন মিত্র।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “পদোন্নতি পাওয়ার সব ধরনের যোগ্যতা ফুলফিল করে বলেই কুশল বরণ চক্রবর্তীর নাম প্ল্যানিং কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু সমাধান হবে বলেই আশা করি।”

এদিকে এই ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তীকে নিয়ে নানা আলোচনা চলছে সামাজিক মাধ্যমে। ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তোলা তার কয়েকটি ছবি দিয়ে পোস্টও দিয়েছেন কেউ কেউ।

যদিও মি. চক্রবর্তী বলছেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কথা বললেও দেশ বিরোধী কোনো কাজে যুক্ত নন। তার দাবি, “অ্যাকাডেমিক কয়েকটি ছবি ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।”

বিবিসি নিউজ বাংলা

বাড়ছে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: বিশেষ ঝুঁকিতে থাকলেও ছেলেরা কেন সহায়তা চায় না?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ, সেখানে যা ঘটেছিল

১২:৩৬:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার ঘিরে একজন শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক হট্টগোলের পরিবেশ তৈরি হয়। এরপর ওই শিক্ষকের সাক্ষাৎকারের বোর্ড বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

উপাচার্যের উপস্থিতিতেই ওই শিক্ষককে ঘিরে হট্টগোলের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তীকে ঘিরে হট্টগোল করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। ওই দিন তার পদোন্নতির সাক্ষাৎকারের জন্য সময় নির্ধারিত ছিল।

তবে শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তীর অভিযোগ, মিথ্যা মামলার দোহাই দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মব তৈরি করে তাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে।

যদিও কুশল বরণ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ থাকায় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তার পদন্নোতির সাক্ষাৎকার আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক শামিম উদ্দিন খান।

মি. খান বিবিসি বাংলাকে জানান, “তার বিরুদ্ধে মামলা আছে এটি আমাদের জানা ছিল না। ছাত্রদের কাছ থেকে অভিযোগ আসার পরে তার নামটা বোর্ড থেকে উইড্রো করছি। পরবর্তীতে বোর্ড দেয়া হবে।”

চট্টগ্রামের আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের সময়কার একটি মামলায় এই শিক্ষক আসামি বলে আন্দোলনকারীদের দাবি। তবে মি. চক্রবর্তীর দাবি, সেদিনের কোনো ঘটনার সাথে তিনি জড়িত নন।

তার দাবি, “আলিফ হত্যার দিন আমি চট্টগ্রামেই ছিলাম না। অসুস্থ অবস্থায় ঢাকায় ছিলাম।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত না থাকলেও হিন্দু অধিকার বিষয়ক বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন।

২০২৪ এর অক্টোবরে চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিতে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়েও সরব ছিলেন।

ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিসে হট্টগোলের একটি ভিডিও শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তীকে ঘিরে কয়েকজনকে হট্টগোল করতে দেখা যায়।

ভিডিওতে তাদের কয়েকজনকে ওই শিক্ষকের সাথে তর্ক করতে এবং তাকে পদোন্নতি দেয়া যাবে না বলে চিৎকার করতে দেখা যায়।

এই সময় উপাচার্যের উদ্দেশ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়, ”আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি, আপনাকে আমরা বসিয়েছি, আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ্য।”

কয়েকজন যুবকের পাশাপাশি ভিডিওটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কয়েকজন শিক্ষককেও দেখা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকেই সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতির ভাইভা ঘিরে আলোচনা চলছিল। তাকে বরখাস্ত করার দাবি তুলে প্রচারণাও চালানো হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একজন সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে জানান, ইসলামী ছাত্র শিবির, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চসহ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দেয়া শুরু করে। পরে তারা উপাচার্যের সঙ্গেও দেখা করেন।

“সকাল থেকেই পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে ছিল। কুশল চক্রবর্তী উপাচার্যের রুমে ঢুকতেই হট্টগোল শুরু হয়,” বলেন ওই সাংবাদিক।

ছাত্রদের ওই বিক্ষোভে অংশ নেয়া ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আব্দুর রহমান বিবিসি বাংলাকে জানান, অভ্যুত্থানের আগে কুশল বরণ চক্রবর্তী ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন। এ কারণেই তার পদোন্নতির বোর্ড বাতিলের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে তাকে ঘিরে একটা প্রচারণা চলছে এটি জানতেন সংস্কৃত বিভাগের ওই শিক্ষকও।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, “পদোন্নতির পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকার দিতেই শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে যাই আমি। রেজিস্ট্রার ভবনের বাইরে প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষাও করি। একপর্যায়ে ভিসি স্যারের রুমে প্রবেশ করি আমি,” বলেন মি. চক্রবর্তী।

তার দাবি “এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার পদোন্নতির প্রক্রিয়া পেন্ডিং আছে। কিন্তু অপপ্রচার চালিয়ে মব তৈরি করে আমাকে অপদস্ত করা হলো।”

তিনি জানান, প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে তাকে বাসায় পৗেঁছে দেওয়া হয়।

শুক্রবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল
শুক্রবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল

যদিও হট্টগোল শুরুর দায় শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তীকেই দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “ছাত্রদের যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সেটাতে আসলে ঘি ঢালার মতো হয়েছিল, যখন ছাত্ররাও ভিসি স্যারের সাথে আলোচনা করছিল, তখন আমাদের সহকর্মী কুশল বিনা অনুমতিতে হঠাৎ উপাচার্যের রুমে ঢুকে যান।”

তিনি বলছেন, টিচার সিলেকশন বোর্ড অন্য বোর্ডের মতোই স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তবে, এই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিতে আঘাত হেনেছে।

যদিও উপাচার্যের রুমে যাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন বলে দাবি ওই শিক্ষকের।

মি. চক্রবর্তীর বলছেন, “পরিস্থিতি দেখে করণীয় ঠিক করতে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য স্যারকে বারবার ফোন করার পরও তারা ফোন রিসিভ করেননি। প্রক্টরও কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে বাধ্য হয়েই আমি উপাচার্যের রুমে প্রবেশ করি।”

“আমি না গেলে অনুপস্থিতির কারণে আমার পদোন্নতির প্রক্রিয়া অটোমেটিক বাতিল হয়ে যেত,” বলছেন মি. চক্রবর্তী।

এদিকে এই ঘটনার পর পদোন্নতি বোর্ড থেকে কুশল বরণ চক্রবর্তীর নাম বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) বিবিসি বাংলাকে জানান, “নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তাদের প্ল্যানিং কমিটি ডেট দিয়েছে। আমরা যখন জানলাম যে তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। ছাত্রদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ আসলো তখন তার নাম আপাতত প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।”

“তবে বাকি যারা ছিল তাদের সিলেকশন বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে”, জানান মি. খান।

গত বছরের অক্টোবরে চট্টগ্রামে সনাতন সম্প্রদায়ের সমাবেশ
গত বছরের অক্টোবরে চট্টগ্রামে সনাতন সম্প্রদায়ের সমাবেশ

এই ঘটনাকে অনাকাঙ্খিত বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান লিটন মিত্র।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “পদোন্নতি পাওয়ার সব ধরনের যোগ্যতা ফুলফিল করে বলেই কুশল বরণ চক্রবর্তীর নাম প্ল্যানিং কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু সমাধান হবে বলেই আশা করি।”

এদিকে এই ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তীকে নিয়ে নানা আলোচনা চলছে সামাজিক মাধ্যমে। ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তোলা তার কয়েকটি ছবি দিয়ে পোস্টও দিয়েছেন কেউ কেউ।

যদিও মি. চক্রবর্তী বলছেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কথা বললেও দেশ বিরোধী কোনো কাজে যুক্ত নন। তার দাবি, “অ্যাকাডেমিক কয়েকটি ছবি ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।”

বিবিসি নিউজ বাংলা