আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে নাটকীয় লড়াইয়ে বাংলাদেশ ২৪৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরও শ্রীলঙ্কাকে ২৩২ রানে থামিয়ে ১৬ রানের জয় তুলে নেয়। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ১–১ এ সমতায় ফিরল; মঙ্গলবার পালেকেলেতে হবে ফাইনাল।
প্রথম ম্যাচের পর প্রেক্ষাপট
শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্ন—প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানে হেরে ০–১ পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ব্যাটিং বিপর্যয় ও বোলারদের ছন্দহীনতায় সমালোচনা ঝড় ওঠে। তাই দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল ‘ডু অর ডাই’।
টস ও শুরুর কৌশল
- বাংলাদেশ টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয়—পূর্বাভাস ছিল রাতের দিকে বল ধীর হবে, তাই স্কোরবোর্ডে চাপ দিতে চেয়েছে দল।
- উইকেটে হালকা ঘাস থাকলেও সকাল–দুপুরের রোদে সেটি দ্রুত শুকোবে—এই অনুমানই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে।
ব্যাটিং বিশ্লেষণ
পর্যায় | ঘটনা | মূল অবদানকারী | স্কোর |
শুরু (১–১৫ ওভার) | তানজিদ হাসান ১০ রানে ফিরলে চাপে পড়ে দল | পারভেজ ইমন–শান্ত ৬৩ রানের জুটি | ৭৫/১ |
মাঝপথ (১৬–৩৫ ওভার) | ইমন ৬৭ (৬৯ বল, ৩ ছয়, ৬ চার); হৃদয় ৫১ (৬৯ বল) | লেগ-স্পিনের বিরুদ্ধে ধৈর্যের নীতি | ১৮৫/৫ |
শেষ (৩৬–৪৬ ওভার) | তানজিম হাসান সাকিব ২১ বলে ঝড়ো ৩৩; জাকের ২৪, শামীম ২২ | ৬ ওভারে ৫৮ রান | ২৪৮/১০ (৪৫.৫ ওভার) |
শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার
আসিথা ফার্নান্দো ৪/৩৫
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৩/৬০
বল হাতে বাংলাদেশের জবাব
দ্রুত আঘাত
- তানজিম সাকিবের ইন-ডকারে পাথুম নিসঙ্কা (৫) এলবিডব্লিউ; সুনির্দিষ্ট লাইন-লেংথে মানসিক চাপ সৃষ্টি।
- তবে কুশল মেন্ডিসের টর্নেডো—মাত্র ২০ বলে ফিফটি, ভেন্যুর দ্রুততম।
টার্নিং পয়েন্ট: তানভির ইসলামের স্পিন-জাল
- আক্রমণ চালু রাখতে অধিনায়ক মেহেদি মিরাজ তানভিরকে আক্রমণে আনেন।
- ধারাবাহিক ফ্লাইট-ভ্যারিয়েশন ও অ্যাঙ্গেলে মেন্ডিস (৫৬) ও নিশান মদুশ্কা দুজনকেই বিদায় করেন।
- মধ্য-ওভারে ৪২ রানে ৪ উইকেট তুলে শ্রীলঙ্কাকে ১৩২/৬-এ থামিয়ে রাখেন।
তানভিরের পরিসংখ্যান
১০-০-৩৯-৫ (মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে)
৪.৩ শেষ মুহূর্তের নাটক
- লিয়ানাগে-চামিরা নবম-উইকেটে ৫৮ রান তুলে জয়-আশা জাগান—শেষ ১৭ বলে দরকার ছিল ২১।
- মুস্তাফিজের স্লোয়ারে লিয়ানাগে (৭৮) ক্যাচ-অ্যান্ড-বোল্ড; পরের ওভারে সাকিবের ইয়র্কারে চামিরার স্টাম্প উড়তেই ম্যাচ শেষ।
শ্রীলঙ্কার ব্যর্থতার অনুধ্যান
- টপ-অর্ডারে নিসঙ্কার ফর্মহীনতা (দুই ম্যাচে ৫ ও ০)।
- মেন্ডিস ঝড়ের পর স্পিন-জালে পড়ে গতি হারানো; মিডল অর্ডারে রোটেশন-অব-স্ট্রাইক ব্যর্থ।
- নিচের দিকে রান-আউট এড়াতে পারলে চাপ কমতে পারত।
বাংলাদেশ কী শিখল—আর পরের ম্যাচে করণীয়
দিক | যা কাজ করেছে | পরের ম্যাচে ফোকাস |
বোলিং পরিকল্পনা | তানভির-মিরাজের ‘সার্কুলার স্পিন’ + তানজিমের নতুন-বল আক্রমণ | পালেকেলেতে বড় বাউন্ডারি, তাই ভ্যারিয়েশন ধরে রাখা |
ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ | সময় নিয়ে ‘অ্যাটাক-শিফট’ (ইমন-হৃদয়) | ২৮–৩৮ ওভারে স্ট্রাইক-রেট বাড়ানো জরুরি |
চাপ-ম্যানেজমেন্ট | মিরাজের অনুপ্রেরণামূলক ফিল্ড-সেটিং | বড় মাঠে বাউন্ডারি-কাট-অফ পরিকল্পনা |
ফিল্ডিং | গভীর থেকে শর্ট-থ্রো, দুটি রান-আউট সুযোগ | স্লিপ-কভার-পয়েন্টে অতিরিক্ত স্লাইডিং অনুশীলন |
সম্ভাব্য একাদশ—তৃতীয় ওয়ানডে (পালেকেলে)
লিটন দাস (উইকেটরক্ষক)
তানজিদ হাসান
নাজমুল হোসেন শান্ত (প্রয়োজনে উদ্বোধনী গতি সামলাতে পারেন)
পারভেজ হোসেন ইমন
তাওহীদ হৃদয়
মুশফিকুর রহিম
মেহেদি হাসান মিরাজ (ক)
মাহমুদউল্লাহ / শামীম হোসেন (কন্ডিশন অনুযায়ী)
তানজিম হাসান সাকিব
তাসকিন আহমেদ / শরিফুল ইসলাম (পিচ অনুযায়ী)
তানভির ইসলাম
কলম্বোর নাটকীয় জয় শুধু সিরিজে সমতা নয়—খেলোয়াড়দের মানসিক দৃঢ়তার বড় উদাহরণ। ব্যাট-বল দু’ফ্রন্টেই ‘ক্লাচ মোমেন্ট’ জিতে বাংলাদেশ দেখাল, চাপের পরিস্থিতিতে কৌশলগত স্থিরতা কতটা কার্যকর। একই ধারায় ডটে থাকলে মঙ্গলবারের ফাইনালে ট্রফি ঢাকার পথেই যেতে পারে।