০১:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে বহুদলীয় গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে: নাহিদ ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াত আমিরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত, অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা নির্বাচনপ্রত্যাশীদের জন্য অনলাইনে কর রিটার্ন দাখিলে বিশেষ ব্যবস্থা এনবিআরের মাকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে তারেক রহমান

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৪৮)

অচল সিকি

শালবন পার হয়ে ওরা এইবার সরু পিচের রাস্তায় উঠলো। দুপুরের রোদ ধু ধু করছে। কাঠ কুড়োনো রোদে ঝলসানো কালো কালো ছেলেরা হাঁ করে দেখছে ওদের। জেবুন্নেসা বললে, ‘কি কুক্ষণেই এই ভূতে ধরেছিলো, তোমার এই শালবন বিহারে ভুলেও যদি আর কখনো আসি। উহ্, মানুষ আবার এতো হাঁটতে পারে!’

পা টনটন করছিলো এনামুলেরও। পাহাড়ি অঞ্চলে ওদের এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলো না, একমাত্র সান্ত্বনা এটাই। যাদের সঙ্গে নিজেদের

গাড়ি-ঘোড়া থাকে তাদের কথা আলাদা। ওদের যখন সে সামর্থ্য নেই তখন আবার খেদ কেন।

চারিদিকে আগুনের হলকা ছুটছে। চৈত্র মাস। লালমাটির চিড়বিড়ে ধুলোয় আশ্যাওড়ার পাতাগুলো ঢেকে গিয়েছে। দু’একটি নাম-না-জানা পাখি অন্তহীন খাঁ খাঁ পার্বত্য উষ্ণতার গায়ে মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা সবুজ দাগ কেটে উড়ে যাচ্ছে। জেবুন্নেসার মুখের দিকে তাকিয়ে এক সময় ভারি মায়া হলো এনামুলের, তেতে পুড়ে লাল হয়ে গিয়েছে বেচারির মুখ। এতো ঘামা ঘেমেছে যে দেখে মনে হয় যেন এইমাত্র নেয়ে উঠেছে। এনামুল নরোম করে ওর হাত ধরলো। বললে, ‘গাছতলায় বসে একটু জিরিয়ে নেবে রানী।’

‘থামলে আর হাঁটতে পারবো না, একটানা যতো দূর পারা যায় চলো।’

‘ঠিক কথা! দ্যাখো না, কথায় কথায় নিছক কম পথ হাঁটিনি আমরা!’

এরপর রীতিমতো পাল্লা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো দু’জন।

এদিককার রাস্তাগুলো জনপ্রাণীশূন্য। এখানে সেখানে দু’একটা শালশিমুল দম বন্ধ করে থমকে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে এক একটা মিলিটারি গাড়ি রাজ্যির ধুলো উড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। এক একবার খুব ভালো লাগছিলো এনামুলের। ভগ্নস্তূপের আড়ালে দাঁড়িয়ে যেন অসংখ্য জ্ঞানীর আত্মা তাদের আশীর্বাদ করেছে, সৌভাগ্যের পথ বেয়ে তারা ফিরে চলেছে উজ্জ্বল আনন্দলোকের দিকে। হয়তো এইসব রক্তিম ধুলোয় ঢাকা পথ ধরে একদিন জরা মৃত্যু পরিত্রাণের নিদারুণ চিন্তা নিয়ে বিহারে ফিরে গিয়েছে শান্ত মৌন ভিক্ষুর দল। এমনি করেই নিঃশব্দে সব মানুষ একদিন গল্প হয়ে যায়।

পাঁচ বছর পর আবার এলে কি দেখা যাবে? আকাশে চুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সামনের এই তালগাছটার হয়তো কোনো চিহ্নই থাকবে না। লেখার প্রবল ইচ্ছে নেশার মতো এনামুলের ভেতরে আবর্তিত হচ্ছিলো; শালবন বিহারের ভাঙা তৈজসপত্রগুলো যতো হাস্যকরই মনে হোক না কেন তার, সবকিছু মিলিয়ে একটা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৪৮)

১২:০০:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

অচল সিকি

শালবন পার হয়ে ওরা এইবার সরু পিচের রাস্তায় উঠলো। দুপুরের রোদ ধু ধু করছে। কাঠ কুড়োনো রোদে ঝলসানো কালো কালো ছেলেরা হাঁ করে দেখছে ওদের। জেবুন্নেসা বললে, ‘কি কুক্ষণেই এই ভূতে ধরেছিলো, তোমার এই শালবন বিহারে ভুলেও যদি আর কখনো আসি। উহ্, মানুষ আবার এতো হাঁটতে পারে!’

পা টনটন করছিলো এনামুলেরও। পাহাড়ি অঞ্চলে ওদের এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলো না, একমাত্র সান্ত্বনা এটাই। যাদের সঙ্গে নিজেদের

গাড়ি-ঘোড়া থাকে তাদের কথা আলাদা। ওদের যখন সে সামর্থ্য নেই তখন আবার খেদ কেন।

চারিদিকে আগুনের হলকা ছুটছে। চৈত্র মাস। লালমাটির চিড়বিড়ে ধুলোয় আশ্যাওড়ার পাতাগুলো ঢেকে গিয়েছে। দু’একটি নাম-না-জানা পাখি অন্তহীন খাঁ খাঁ পার্বত্য উষ্ণতার গায়ে মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা সবুজ দাগ কেটে উড়ে যাচ্ছে। জেবুন্নেসার মুখের দিকে তাকিয়ে এক সময় ভারি মায়া হলো এনামুলের, তেতে পুড়ে লাল হয়ে গিয়েছে বেচারির মুখ। এতো ঘামা ঘেমেছে যে দেখে মনে হয় যেন এইমাত্র নেয়ে উঠেছে। এনামুল নরোম করে ওর হাত ধরলো। বললে, ‘গাছতলায় বসে একটু জিরিয়ে নেবে রানী।’

‘থামলে আর হাঁটতে পারবো না, একটানা যতো দূর পারা যায় চলো।’

‘ঠিক কথা! দ্যাখো না, কথায় কথায় নিছক কম পথ হাঁটিনি আমরা!’

এরপর রীতিমতো পাল্লা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো দু’জন।

এদিককার রাস্তাগুলো জনপ্রাণীশূন্য। এখানে সেখানে দু’একটা শালশিমুল দম বন্ধ করে থমকে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে এক একটা মিলিটারি গাড়ি রাজ্যির ধুলো উড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। এক একবার খুব ভালো লাগছিলো এনামুলের। ভগ্নস্তূপের আড়ালে দাঁড়িয়ে যেন অসংখ্য জ্ঞানীর আত্মা তাদের আশীর্বাদ করেছে, সৌভাগ্যের পথ বেয়ে তারা ফিরে চলেছে উজ্জ্বল আনন্দলোকের দিকে। হয়তো এইসব রক্তিম ধুলোয় ঢাকা পথ ধরে একদিন জরা মৃত্যু পরিত্রাণের নিদারুণ চিন্তা নিয়ে বিহারে ফিরে গিয়েছে শান্ত মৌন ভিক্ষুর দল। এমনি করেই নিঃশব্দে সব মানুষ একদিন গল্প হয়ে যায়।

পাঁচ বছর পর আবার এলে কি দেখা যাবে? আকাশে চুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সামনের এই তালগাছটার হয়তো কোনো চিহ্নই থাকবে না। লেখার প্রবল ইচ্ছে নেশার মতো এনামুলের ভেতরে আবর্তিত হচ্ছিলো; শালবন বিহারের ভাঙা তৈজসপত্রগুলো যতো হাস্যকরই মনে হোক না কেন তার, সবকিছু মিলিয়ে একটা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।