অচল সিকি
যে রাস্তা ধরে তারা এতোক্ষণ দ্রুত পায়ে হাঁটছিলো এবার সে প্রাচীন অশথ গাছের বীথি ঘেঁষে ধনুকের মতো বাঁক নিলো। বেশ পরিপাটি করে ছায়া বিছানো। ছায়ার ঢল নেমেছে এখানে। ঝিরঝিরে বাতাস আর বনটিয়ার তীব্র ডাক, ওরা দু’জন পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
অশথ গাছের তলায় সারি সারি খড়ের চাল। সব জনশূন্য। চাঙ্গিনীর হাট।
জেবুন্নেসা বললে, ‘এইবার একটু জিরিয়ে নেই এখানে।’
‘বেশতো।’
‘কিন্তু মানুষ দেখছি না ধারেকাছে।’
‘ঐতো।’ এনামুল হাত বাড়িয়ে অশীতিপর এক বৃদ্ধকে দেখালো। গালে হাত দিয়ে সামনের ধু ধু রোদে-জ্বলা খোলা প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে ঠায় বসে আছে বুড়োটা। ওরা গিয়ে সামনের বাঁশের বেঞ্চিতে বসলো।
এনামুল বললে, ‘একগ্লাস ঠাণ্ডা পানি হবে নানামিয়া?’
এতোক্ষণ লক্ষ্য করেনি বলে চমকে উঠলো বুড়ো। ‘বহেন বাপ বহেন, পানি দিতাছি
এনামুল মুগ্ধ চোখে একটা লালচে বয়মের দিকে তাকিয়ে থাকে, শৈশবের কথা মনে পড়ে যায় আচমকা, যেন স্বপ্ন। কালিতে জুবড়ানো কেৎলি, কানাভাঙা পানির কলসি, ঘামাচিওলা চার পাঁচটা বেঁটে বেঁটে দেশী কাচের গেলাস তার চোখের সামনে নৃত্য করে। লালচে বয়েমে ভরা বিস্কুট; এবিস্কুট, কুকিস। এই বিস্কুট তাকে দীর্ঘ অতীতের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
দু’জনেই ঢকঢক করে পানি খেলো। নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে বুড়োটা। আসবার সময় তারা এপথে আসেনি। এটা হাট, কে জানে কবে কবে বসে।
এনামুল বললে, ‘স্টেশন এখান থেকে কতোদূর?’
‘মাইল দেরেক হৈবো আঁরি।’
জেবুন্নেসা ছেলেমানুষের মতো জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা এদিকটা এমন ফাঁকা কেন, মানুষজন দেখাই যায় না।’
মাহমুদুল হক 



















