০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৫০)

অচল সিকি

বুড়ো ফোকলা গালে মাড়ি চিতিয়ে শিশুর মতো ফিক করে হাসলো। তারপর সে অনেক কথাই বললে, যে কথার সব বোঝা যায় না। এ দিকটা চিরকালই এ রকম ফাঁকা। ‘শিয়ালরাজার বাড়ি’ মাঝে মাঝে অনেকেই দেখতে আসে। কেউ কেউ আবার মোটর গাড়ি নিয়েও আসে। তবে চৈত্রমাসের খরদুপুরের মাথায় কেউ আসে না।

একটা মেয়ে ছিলো বুড়োর বছর দু’য়েক আগে ওলাবিবি তাকে খেয়েছে। পেট নিয়ে অনেক জ্বালা তার। সপ্তাহে দু’বার এ-হাট বসে, যা বিক্রিপাট্টা হয় তা সপ্তাহের ঐ দু’দিনে; বাকি পাঁচটা দিন তাকে এইভাবে বসে বসে কাটাতে হয়। ঘরদোর বলতে তার এই চালা ঘরটি। এইখানেই থাকা, এইখানেই খাওয়া, এইখানেই ঘুমানো।

তার কোনো জোয়ান ছেলে আছে কিনা জেবুন্নেসা জানতে চায়। ছেলে আছে, তবে বিয়েশাদি করে কাচ্চাবাচ্চার বাপ হয়েছে তারা, তাদেরই চলে না,

বাপকে আবার কি দেখবে।

যে মেয়েটা মরেছে, সে দিকের-ও কেউ নেই। মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল আট বছর বয়সে। বারো বছরে পড়তে না পড়তে সে তার স্বামী খোয়ায়। সে অনেক বুঝিয়েছে, কিন্তু নিকেয় বসাতে পারে নি মেয়েকে-

জেবুন্নেসা অবাক হয়ে এনামুলকে বলে, ‘নিজেদের চলে না, এটা কোনো কথা হলো? তাই বলে বুড়ো বাপকে দেখবে না।’

অচল বুড়োমানুষের জীবনের কোনো দাম নেই, নিজের কাছেই সে নিজে অচল। পেট নিয়ে বড় জ্বালা, খুদকুঁড়ো যা-ই হোক দু’টি দিয়ে ওটা ভরাতে হয়। চোখে ছানি, ভালো দেখে না। বাত আছে, তাতে আধা পঙ্গু। তার ওপর হাঁপানি কাশি। আগে বেদেনীরা শিং মেরে বদরক্ত ঝেড়ে দিত, আজকাল সিকিটা-আধুলিটা ছাড়া শিং বসাতে চায় না।

নিজের মনে নিজের সঙ্গেই কথা বলে বুড়ো, তারা শুনলো কি শুনলো না সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। বাড়ি বাড়িতে ধান ভেনে, গা-গতর খাটিয়ে মেয়ে তাকে কিভাবে টানতো নাকের জলে চোখের জলে হয়ে সে শুধু সে-ই বৃত্তান্তেই ডুবে থাকে।

একটু থেমে বুড়ো আবার শুরু করে। তার বেশীরভাগ কথাই জড়ানো জড়ানো, বোঝা যায় না। এক রকম ভালো ছিলোই, ভাগ্যে তার সয়নি। বাড়ি বাড়ি গতর ভেনে ভালোই রেখেছিলো মেয়েটা তার বাপকে।’

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

জেন জি এখন সুগন্ধি খুঁজছে

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৫০)

১২:০০:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

অচল সিকি

বুড়ো ফোকলা গালে মাড়ি চিতিয়ে শিশুর মতো ফিক করে হাসলো। তারপর সে অনেক কথাই বললে, যে কথার সব বোঝা যায় না। এ দিকটা চিরকালই এ রকম ফাঁকা। ‘শিয়ালরাজার বাড়ি’ মাঝে মাঝে অনেকেই দেখতে আসে। কেউ কেউ আবার মোটর গাড়ি নিয়েও আসে। তবে চৈত্রমাসের খরদুপুরের মাথায় কেউ আসে না।

একটা মেয়ে ছিলো বুড়োর বছর দু’য়েক আগে ওলাবিবি তাকে খেয়েছে। পেট নিয়ে অনেক জ্বালা তার। সপ্তাহে দু’বার এ-হাট বসে, যা বিক্রিপাট্টা হয় তা সপ্তাহের ঐ দু’দিনে; বাকি পাঁচটা দিন তাকে এইভাবে বসে বসে কাটাতে হয়। ঘরদোর বলতে তার এই চালা ঘরটি। এইখানেই থাকা, এইখানেই খাওয়া, এইখানেই ঘুমানো।

তার কোনো জোয়ান ছেলে আছে কিনা জেবুন্নেসা জানতে চায়। ছেলে আছে, তবে বিয়েশাদি করে কাচ্চাবাচ্চার বাপ হয়েছে তারা, তাদেরই চলে না,

বাপকে আবার কি দেখবে।

যে মেয়েটা মরেছে, সে দিকের-ও কেউ নেই। মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল আট বছর বয়সে। বারো বছরে পড়তে না পড়তে সে তার স্বামী খোয়ায়। সে অনেক বুঝিয়েছে, কিন্তু নিকেয় বসাতে পারে নি মেয়েকে-

জেবুন্নেসা অবাক হয়ে এনামুলকে বলে, ‘নিজেদের চলে না, এটা কোনো কথা হলো? তাই বলে বুড়ো বাপকে দেখবে না।’

অচল বুড়োমানুষের জীবনের কোনো দাম নেই, নিজের কাছেই সে নিজে অচল। পেট নিয়ে বড় জ্বালা, খুদকুঁড়ো যা-ই হোক দু’টি দিয়ে ওটা ভরাতে হয়। চোখে ছানি, ভালো দেখে না। বাত আছে, তাতে আধা পঙ্গু। তার ওপর হাঁপানি কাশি। আগে বেদেনীরা শিং মেরে বদরক্ত ঝেড়ে দিত, আজকাল সিকিটা-আধুলিটা ছাড়া শিং বসাতে চায় না।

নিজের মনে নিজের সঙ্গেই কথা বলে বুড়ো, তারা শুনলো কি শুনলো না সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। বাড়ি বাড়িতে ধান ভেনে, গা-গতর খাটিয়ে মেয়ে তাকে কিভাবে টানতো নাকের জলে চোখের জলে হয়ে সে শুধু সে-ই বৃত্তান্তেই ডুবে থাকে।

একটু থেমে বুড়ো আবার শুরু করে। তার বেশীরভাগ কথাই জড়ানো জড়ানো, বোঝা যায় না। এক রকম ভালো ছিলোই, ভাগ্যে তার সয়নি। বাড়ি বাড়ি গতর ভেনে ভালোই রেখেছিলো মেয়েটা তার বাপকে।’