অচল সিকি
কথা বলতে বলতে বুড়োর গলা ধরে এলো। পাতলা ছানি পড়া চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আট বছরের মেয়ে, তার বিয়ে, স্বামীর ঘর, বারো বছরে বিধবা হওয়া, বারো বছরের বিধবার স্বামীর স্মৃতিকে আগলে বেড়ানো, এসব যেন এক উদ্ভট রূপকথা। মৃত স্বামীর প্রতি প্রেম, না বিবাহিত জীবনের প্রতি আতঙ্ক, কোন্টা? এনামুলের স্বভাব এই রকম, সবকিছু যাচাই করে নিতে ভালোবাসে। যাচাই করাটা তার পুরনো অভ্যাসের একটি। সে জেবুন্নেসার কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললে, ‘চা খাবে?’
‘তুমি?’
‘তুমি খেলে আমিও খাই!’
কেৎলিতে পানি চাপালো বুড়ো। কাঠের চুলোয় ফুঁ দিতেই একরাশ ধোঁয়া গলগলিয়ে কুগুলি পাকালো চতুর্দিকে।
এনামুল জেবুন্নেসার কানে প্রায় মুখ দিয়ে বললে, ‘বিস্কুট খাওয়া যাক, কি বলো?’
‘একদম বাজে।’
‘বাজে মানে জানো, এর নাম কুকিস।’
জেবুন্নেসা হেসে উল্টে পড়লো। বললে, ‘তোমার না, কোনো বাছবিচার নেই-‘
‘কু-কিস্, শুনে লজ্জা পাচ্ছো নাকি, নাও না, এখানে তো আর কেউ আমাদের দেখতে আসছে না! এই মেয়েমানুষ জাতটাই একটা ল্যাঠা। ভাঙা হাঁড়ি-কলসি সের দরে কিনে কুড়মুড়িয়ে সাফাচাঁট করতে পারো তোমরা, যতো লজ্জা কুকিসে!’
‘কাকে কি বলছো’-চাপা স্বরে তিরস্কার করলো জেবুন্নেসা।
লজ্জা পেলো এনামুল, উচিত হয় নি কথাটা তোলা। সে বললে, ‘আমি কোনো কিছু মনে রেখে একথা তুলিনি, সত্যি বলছি!’ তারপর কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে সে বললে, ‘রানী বিশ্বাস করো-‘
মাহমুদুল হক 



















