ধর্মগুরুর সফলতায় সভাস্থ সকলেই খুব আনন্দিত হলেন আর ধর্মগুরুকে উপাধি দিতে চাইলেন। মহাযানীরা তাঁকে ‘মহাযানদের’ নামে ডাকত, আর হীনযানীরা তাঁকে ‘মোক্ষদেব’ নামে ডাকত।
এর পর দিন, সভাভঙ্গের দিন, এক দুর্ঘটনা হল। হঠাৎ মন্দিরে আগুন লেগে গেল আর সভামণ্ডপের সামনের তোরণের উপর সানাই-ঘর (?) জ্বলে উঠল। আগুন নিভলে রাজা (পোড়া) মন্দিরের উপর উঠে দেখছিলেন। তার পর যখন নেমে আসবেন, তখন হঠাৎ একজন ‘বিধর্মী’ (হিন্দু) ছুরি নিয়ে রাজাকে হত্যা করতে উদ্যত হল। শীলাদিত্য দুই এক পা হটে গিয়ে নীচু হয়ে আততায়ীকে দু-হাত দিরে ধরে ফেললেন। অন্য রাজারা ও অন্যান্য সকলেই আততায়ীকে তখনই মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহারাজা বারণ করে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমি তোমার কী ক্ষতি করেছি, যার জন্যে তুমি এমন কাজ করতে গেলে?’ আততায়ী জবাব দিল, ‘মহারাজ! আপনার পুণ্যের জ্যোতি সকলের উপরই সমানভাবে কিরণ দেয়। আমি হীন, মূর্খ। বিধর্মীদের কথায়, তাদের অনুরোধে, আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে যাচ্ছিলাম।’
রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বিধর্মীরাই বা কেন এ কুকাজ করতে চেয়েছিল?’
সে জবাব দিল, ‘মহারাজ! আপনি সমস্ত দেশের লোক একত্র করেছেন, আর আপনার কোষাগার উন্মুক্ত করে শ্রমণদের দান করেছেন, আর বুদ্ধের একটা ধাতুমৃতি গঠন করেছেন। কিন্তু দেশ-দেশান্তর থেকে আগত বিধর্মীদের সঙ্গে প্রায় কথাই বলেন নি। এই আক্রোশে তারা হতভাগ্য আমাকে এই জঘন্য কাজে নিয়োগ করেছে।’
পাঁচ শত জন গুণী ব্রাহ্মণ সভায় ছিল। তাদের ডাকিয়ে প্রশ্ন করা হল। তারা মতলব করেছিল যে, জ্বলন্ত তীর ছুড়ে তারা ঐ মিনারটায় আগুন ধরিয়ে দেবে, আর তাতে যে ভীষণ সোরগোল হবে, সেই বিশৃঙ্খলতার সুযোগে মহারাজকে হত্যা করবে। তাই না পেরে অবশেষে তারা ঐ লোকটিকে নিয়োগ করেছিল।
(চলবে)