০১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

হার্ভার্ডে রক্ষণশীল চিন্তাচর্চার নতুন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় রক্ষণশীল চিন্তাভাবনার জন্য একটি নতুন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেযাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি মতাদর্শগত বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে পারে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অতি উদারপন্থী’ অভিযোগের মোকাবিলা করা যায়।

হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছু দাতার সঙ্গেও আলোচনা করেছে। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেএই কেন্দ্র কোনো দলীয় উদ্দেশ্য নিয়ে নয়বরং প্রমাণ-ভিত্তিক যুক্তি এবং বিপরীত মতামতের সঙ্গে খোলামেলা বিতর্কের চর্চা করবে।

নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো

উদ্যোগের উদ্দেশ্য ও খরচ

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা এমন একটি কেন্দ্র গড়ার চিন্তা করছেন যা স্ট্যানফোর্ডের হুভার ইনস্টিটিউশনের মতো রক্ষণশীল গবেষণার মডেল হতে পারে। আনুমানিক ব্যয় ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছেএই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচিতি বাড়ানো এবং মতভিন্ন আলোচনাকে উৎসাহিত করা। হার্ভার্ডের একজন মুখপাত্র বলেনউদ্যোগটি দলীয় নয়বরং কঠোর যুক্তি এবং প্রমাণের ভিত্তিতে আলোচনা শেখাবে।

প্রেক্ষাপট: বিতর্ক ও সমালোচনা

এই কেন্দ্র তৈরির ভাবনা নতুন নয়বিগত কয়েক বছর ধরেই আলোচনা চলছিল। তবে ২০২৩ সালের শেষ দিকে প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলন ক্যাম্পাসে বড় আকারে বিক্ষোভ শুরু করলে বিষয়টি নতুন করে গতি পায়।

একই সময়ে হার্ভার্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বেশ কিছু বড় বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈষম্যমূলক’ বৈচিত্র্যসমতা ও অন্তর্ভুক্তি নীতি মেনে চলা এবং অ্যান্টিসেমিটিজম সহ্য করার’ অভিযোগ তোলে। এর জেরে কয়েকশ কোটি ডলারের সরকারি অর্থায়ন স্থগিত বা বাতিল করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাক্স-ছাড়ের মর্যাদাও হুমকির মুখে পড়ে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়েও বাধা আসে।

হার্ভার্ড এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামে এবং শিগগিরই আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সমঝোতা পেতে একাধিক প্রস্তাব নিয়ে টানাপোড়েন চলছে।

ক্যাম্পাসের ভাবমূর্তি ও অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ

২০২৪ সালে হার্ভার্ডের এক সমীক্ষায় দেখা যায়বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বিতর্কিত বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ২০২৩ সালের আরেক সমীক্ষায় দেখা যায়হার্ভার্ড কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে মাত্র ৩% রাজনৈতিকভাবে রক্ষণশীল বলে নিজেদের পরিচয় দেন।

হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টেলেকচুয়াল ভাইটালিটি’ বা বৌদ্ধিক প্রাণবন্ততা ফিরিয়ে আনার এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণহীন বিতর্কে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে কোনো পরিবর্তন প্রেসিডেন্টের চাপের কাছে নতি স্বীকার’ হিসেবে মনে হলে শিক্ষার্থীশিক্ষক এবং প্রাক্তনদের বড় অংশের সমালোচনা ঝড়ে পড়তে পারে।

প্রশাসনিক আলোচনার জট

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে হার্ভার্ডের আলোচনায় মূল বিরোধের বিষয়গুলো হলোকাদের ভর্তি করা হবেকাদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবেএবং শিক্ষকরা কী পড়াবেনএই সিদ্ধান্তের ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় রেখে দেবে কি না। প্রশাসন নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরিকে আসল সমাধান না বলে খোলস পাল্টানো’ মনে করে।

মার্কিন শিক্ষা সচিব লিন্ডা ম্যাকমাহন বলেছেনহার্ভার্ড এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরকারের আলোচনা এগোচ্ছেতবে প্রত্যাশার চেয়ে ধীরে চলছে।

উদ্যোগের পুরনো সূত্র

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের সাবেক ডিন নিতিন নোহরিয়া ২০২০ সালে পদত্যাগের আগে এ ধরনের একটি কেন্দ্র গড়ার বিষয় নিয়ে কিছু দাতার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। বর্তমান প্রচেষ্টায় হার্ভার্ডের প্রোভোস্ট জন ম্যানিং নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং সম্ভাব্য দাতাদের সঙ্গে আলাপ করছেন।

হার্ভার্ডের শাসক বোর্ডের (হার্ভার্ড করপোরেশন) কিছু সদস্য এই কেন্দ্র স্থাপনকে যুক্তিসঙ্গত মনে করেন এবং বলেনএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা বজায় রেখেই মতাদর্শিক বৈচিত্র্য বাড়াতে সাহায্য করবে।

প্রসঙ্গতট্রাম্প নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেনঅভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব প্রগতিশীল ধারণা ছড়ানো হচ্ছেতা নিয়ন্ত্রণ করবেন। তিনি একে আমেরিকান ঐতিহ্য ও পশ্চিমা সভ্যতার ওপর মার্ক্সবাদী আক্রমণ’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন।

হার্ভার্ডে রক্ষণশীল চিন্তাচর্চার নতুন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ

০৫:২০:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় রক্ষণশীল চিন্তাভাবনার জন্য একটি নতুন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেযাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি মতাদর্শগত বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে পারে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অতি উদারপন্থী’ অভিযোগের মোকাবিলা করা যায়।

হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছু দাতার সঙ্গেও আলোচনা করেছে। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেএই কেন্দ্র কোনো দলীয় উদ্দেশ্য নিয়ে নয়বরং প্রমাণ-ভিত্তিক যুক্তি এবং বিপরীত মতামতের সঙ্গে খোলামেলা বিতর্কের চর্চা করবে।

নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো

উদ্যোগের উদ্দেশ্য ও খরচ

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা এমন একটি কেন্দ্র গড়ার চিন্তা করছেন যা স্ট্যানফোর্ডের হুভার ইনস্টিটিউশনের মতো রক্ষণশীল গবেষণার মডেল হতে পারে। আনুমানিক ব্যয় ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছেএই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচিতি বাড়ানো এবং মতভিন্ন আলোচনাকে উৎসাহিত করা। হার্ভার্ডের একজন মুখপাত্র বলেনউদ্যোগটি দলীয় নয়বরং কঠোর যুক্তি এবং প্রমাণের ভিত্তিতে আলোচনা শেখাবে।

প্রেক্ষাপট: বিতর্ক ও সমালোচনা

এই কেন্দ্র তৈরির ভাবনা নতুন নয়বিগত কয়েক বছর ধরেই আলোচনা চলছিল। তবে ২০২৩ সালের শেষ দিকে প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলন ক্যাম্পাসে বড় আকারে বিক্ষোভ শুরু করলে বিষয়টি নতুন করে গতি পায়।

একই সময়ে হার্ভার্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বেশ কিছু বড় বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈষম্যমূলক’ বৈচিত্র্যসমতা ও অন্তর্ভুক্তি নীতি মেনে চলা এবং অ্যান্টিসেমিটিজম সহ্য করার’ অভিযোগ তোলে। এর জেরে কয়েকশ কোটি ডলারের সরকারি অর্থায়ন স্থগিত বা বাতিল করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাক্স-ছাড়ের মর্যাদাও হুমকির মুখে পড়ে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়েও বাধা আসে।

হার্ভার্ড এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামে এবং শিগগিরই আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সমঝোতা পেতে একাধিক প্রস্তাব নিয়ে টানাপোড়েন চলছে।

ক্যাম্পাসের ভাবমূর্তি ও অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ

২০২৪ সালে হার্ভার্ডের এক সমীক্ষায় দেখা যায়বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বিতর্কিত বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ২০২৩ সালের আরেক সমীক্ষায় দেখা যায়হার্ভার্ড কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে মাত্র ৩% রাজনৈতিকভাবে রক্ষণশীল বলে নিজেদের পরিচয় দেন।

হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টেলেকচুয়াল ভাইটালিটি’ বা বৌদ্ধিক প্রাণবন্ততা ফিরিয়ে আনার এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণহীন বিতর্কে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে কোনো পরিবর্তন প্রেসিডেন্টের চাপের কাছে নতি স্বীকার’ হিসেবে মনে হলে শিক্ষার্থীশিক্ষক এবং প্রাক্তনদের বড় অংশের সমালোচনা ঝড়ে পড়তে পারে।

প্রশাসনিক আলোচনার জট

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে হার্ভার্ডের আলোচনায় মূল বিরোধের বিষয়গুলো হলোকাদের ভর্তি করা হবেকাদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবেএবং শিক্ষকরা কী পড়াবেনএই সিদ্ধান্তের ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় রেখে দেবে কি না। প্রশাসন নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরিকে আসল সমাধান না বলে খোলস পাল্টানো’ মনে করে।

মার্কিন শিক্ষা সচিব লিন্ডা ম্যাকমাহন বলেছেনহার্ভার্ড এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরকারের আলোচনা এগোচ্ছেতবে প্রত্যাশার চেয়ে ধীরে চলছে।

উদ্যোগের পুরনো সূত্র

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের সাবেক ডিন নিতিন নোহরিয়া ২০২০ সালে পদত্যাগের আগে এ ধরনের একটি কেন্দ্র গড়ার বিষয় নিয়ে কিছু দাতার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। বর্তমান প্রচেষ্টায় হার্ভার্ডের প্রোভোস্ট জন ম্যানিং নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং সম্ভাব্য দাতাদের সঙ্গে আলাপ করছেন।

হার্ভার্ডের শাসক বোর্ডের (হার্ভার্ড করপোরেশন) কিছু সদস্য এই কেন্দ্র স্থাপনকে যুক্তিসঙ্গত মনে করেন এবং বলেনএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা বজায় রেখেই মতাদর্শিক বৈচিত্র্য বাড়াতে সাহায্য করবে।

প্রসঙ্গতট্রাম্প নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেনঅভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব প্রগতিশীল ধারণা ছড়ানো হচ্ছেতা নিয়ন্ত্রণ করবেন। তিনি একে আমেরিকান ঐতিহ্য ও পশ্চিমা সভ্যতার ওপর মার্ক্সবাদী আক্রমণ’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন।