বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুরুত্ব এবং প্রভাব নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুত্ব তৈরি এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল-কলেজের বন্ধুরা যেমন ফেসবুকে যুক্ত থাকে, তেমনি অচেনা মানুষও সহজেই বন্ধু তালিকায় চলে আসে। এই প্রতিবেদনে আমরা বিশদভাবে দেখব, ফেসবুকের বন্ধুত্ব আসলেই কি বাস্তব জীবনের বন্ধুত্বের সমতুল্য ? নাকি এটি কেবল এক ধরনের ভার্চুয়াল সম্পর্ক ?
ফেসবুক বন্ধুত্বের সহজলভ্যতা
ফেসবুক এমন এক প্ল্যাটফর্ম যেখানে এক ক্লিকেই বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানো যায়। যে কাউকে বন্ধু হিসেবে যুক্ত করা যায় – পরিচিত, অর্ধপরিচিত বা সম্পূর্ণ অচেনা। বাস্তব জীবনে যেখানে সম্পর্ক তৈরি হয় সময়, আস্থা এবং মনের মিলের ভিত্তিতে, সেখানে ফেসবুকে কয়েক মিনিটেই ‘বন্ধু’ হয়ে যাওয়া সম্ভব। অনেকেই এমন হাজারো বন্ধুর তালিকা তৈরি করেন যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হয় না, কথা হয় না, এমনকি প্রয়োজন হলে খোঁজও নেন না।
সম্পর্কের গভীরতার অভাব
সামাজিক গবেষকরা বলেন, বন্ধুত্ব মানে কেবল নামের সম্পর্ক নয়। এটি মানসিক সহানুভূতি, আস্থা, ভালো-মন্দে পাশে থাকা এবং পারস্পরিক সহায়তার সম্পর্ক। ফেসবুকে যেসব বন্ধুত্ব হয়, তার বড় অংশই থাকে ছবি-লাইক, শুভেচ্ছা-কমেন্ট আর জন্মদিনের অটোম্যাটিক মেসেজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাস্তব জীবনের বিপদে বা দুঃসময়ে এই বন্ধুরা খুব কমই সাহায্যের হাত বাড়ান।
কিছু ক্ষেত্রে বাস্তব সংযোগ
তবে সব ফেসবুক বন্ধুত্বকেই নিছক মিথ্যা বলা যাবে না। অনেকেই ফেসবুকে স্কুলের পুরনো বন্ধুকে খুঁজে পান, দূরদেশে থাকা আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বা পেশাগত নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। অনেকে ভার্চুয়াল আলাপ থেকে আসল বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হন, দেখা করেন, পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠেন – এমন উদাহরণও আছে।
ফেসবুক বন্ধুত্বের ঝুঁকি
ফেসবুক বন্ধুত্বের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। অচেনা মানুষ বন্ধু তালিকায় থাকায় ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার হতে পারে। কখনো প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল বা হুমকির ঘটনাও ঘটে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা যাচাই-বাছাই না করে বন্ধুত্ব গড়লে তারা সহজেই নানা সমস্যায় জড়াতে পারেন।
মানসিক স্বাস্থ্য ও বন্ধুত্ব
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানসিক স্বাস্থ্য। অনেকে ফেসবুক বন্ধুত্বকে বাস্তব বন্ধুত্বের বিকল্প ভাবেন। এতে একাকিত্ব কমার বদলে আরও বাড়তে পারে, কারণ ভার্চুয়াল বন্ধুরা প্রয়োজনের সময় পাশে থাকে না। আবার অন্যের সুখী জীবনের ছবি দেখে হীনমন্যতায় ভোগা, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া – এমন সমস্যাও দেখা দেয়।
ফেসবুক বন্ধুত্ব ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফেসবুক বন্ধুত্ব একেবারে বাতিল নয়, তবে এটি সচেতনভাবে ব্যবহার করতে হবে। যাদের সত্যিই চেনেন বা বিশ্বাস করেন তাদেরই বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করা উচিত। ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। আর ভার্চুয়াল যোগাযোগের বাইরে বাস্তব সম্পর্ককেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ভারচুয়াল যুগের ভারসাম্য
ফেসবুক বন্ধুত্ব কি সত্যিকারের বন্ধুত্ব ? এর উত্তর এককভাবে দেওয়া যায় না। এটি যেমন কখনো প্রকৃত বন্ধুত্বের সেতু হয়, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে একেবারে ফাঁপা বা বিপজ্জনক সম্পর্কও হয়। সঠিক বাছাই, সচেতনতা এবং ভার্চুয়াল ও বাস্তব জীবনের ভারস্যমূলক ব্যবহারই এই নতুন যুগের বন্ধুত্বকে অর্থবহ করতে পারে।