পোড়া আত্মজা
মাঠের পর মাঠ পুড়ে যাচ্ছে আগুনে- যে আগুন চিনি না কেউ
ফসল শুধু নয়, পুড়ছে মাটি-
মাটি আমার কে? তার রস রক্ত হয়ে আমার শরীরে
তাই কি পুড়ছে মাটি?
এই রস, এই মাটি পোড়াতে চেয়েছিল কি কখনও
দানবেরা তাদের বৃহৎ দাঁতাল মুখাবয়ব নিয়ে।
যখন মাটি পোড়ে-
তখন কি শুধুই ফসল পোড়ে, ক্ষেতের পর ক্ষেতে
নাকি ঘর পোড়ে মাটিপুত্রের-
দেবতা পুড়ে সে ঘরে
সে ঘরে পুড়ে তার জোয়ান বউ-
আর তার মাতৃযোনি বেয়ে আসা
উভয়েরই আত্মজা?
কী থাকে লুকিয়ে আত্মজায়!
যে কেড়ে নেয় সব ভালোবাসা।
আত্মজা কি উত্তরাধিকারের বহতা নদী!
যখন আত্মজা পোড়ে-
পোড়ে ভবিষ্যত, শূন্য হয় মাঠ
পোড়া মাঠে কেবলই কঙ্কাল নয়-
ফিরে আসে আত্মজার দগ্ধ শরীরের
পোড়া মাংস খেতে
অদ্ভুত সেই সব জীব
যা মানুষের মতো,
অথচ মানুষ চেনে না তাদের।
দিকে দিকে যখন পোড়ে উত্তরাধিকারের বহতা নদী
তখনও কি নদীর জল হয় না আগুন!
কত আত্মজার রক্ত পেলে
কত দেবতার ভাঙা মূর্তি পেলে
কত স্রষ্টার আরাধনারতের গলিত
দেহ পেলে –
আর বস্ত্রহীনা নারীর দেহ উপুড় হয়ে
নদীর জলে লজ্জা ঢাকলে-
তবেই নদীর জল আগুন হয়?
নদীর জল আগুন না হলে কি নেভে না
মাঠের আগুন-
বাঁচেনা আর কোন আত্মজা…
সাগরে বয়ে নিয়ে যেতে উত্তরাধিকার।
তাই কি এমন আগুনে মাঠ পুড়লে
নীরবতা নেমে আসে প্রার্থনা হয়ে-
বুকের পাঁজরে আগুন জ্বালানোর আগুন হয়ে-
যা নদীর জলকে করবে আগুন।
তখন কি কোথাও কোন অন্ধকারে
কেউ কেউ ঘন হয়ে বসে
বসে প্রাণের প্রার্থনা রত হয়ে
যেখানে আকুতি জলকে আগুন করার-
যেখানে আকুতি পিশাচের দাঁত উপড়ে ফেলার
যেখানে আকুতি আত্মজা বাঁচানোর জন্য
পিতার বৃহৎ বক্ষকে আরও বৃহৎ হওয়ার।
যেখানে মাতার আঁচল হয়
পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী অস্ত্র-
যা আজও কোন পরাশক্তি পারেনি
আবিষ্কার করতে –
যা সূর্যের শক্তিকেও বলে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র।
মায়ের আঁচল, শুধু কি আত্মজা বাঁচায় না
বাঁচায় পোড়া মাঠকে-
আঁচল আবার আহ্বান করে
নতুন জন্মদানে