মার্কিন শুল্কের চাপ: রপ্তানির বড় ধাক্কা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আমলে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা বড় ধাক্কা খেয়েছে। এর আগে ১৫ শতাংশ শুল্ক চালু ছিলই। মিলিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে মার্কিন ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে অর্ডার কমাতে বা বাতিল করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক আয়ের উৎস তৈরি পোশাক রপ্তানি হওয়ায়, এই শুল্ক বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
শিল্পমালিকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত বা মেক্সিকোর দিকে ঝুঁকছে। সেখানে হয় শুল্ক কম, অথবা উৎপাদন খরচ কমিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। এর মধ্যে ইউরোপের বাজারও মূল্য সংবেদনশীল, ফলে মার্কিন ক্ষতি সামাল দিতে ইউরোপে রপ্তানি বাড়ানোও সহজ নয়।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য: ঝুঁকিতে শ্রমনির্ভর শিল্প
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের মূল শক্তি সস্তা শ্রম ও বৃহৎ উৎপাদন ক্ষমতা। কিন্তু শুল্ক বৃদ্ধির পর সস্তা শ্রম দিয়ে সুবিধা রাখা কঠিন হয়ে যাবে। তৈরি পোশাক খাত ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান দেয়। শুল্কের ধাক্কায় অর্ডার কমে গেলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতিকে বাংলাদেশকে সতর্কবার্তা হিসেবে দেখতে হবে। শুধু এক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা অর্থনীতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। অনেক দেশে বৈচিত্র্যময় রপ্তানি খাত শক সামলাতে সহায়ক হয়েছে।
বিকল্প খাত: কোথায় সম্ভাবনা?
বাংলাদেশ এখন এমন পণ্য বা খাত খুঁজছে যেগুলো তৈরি পোশাকের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের কয়েকটি প্রধান পরামর্শ এসেছে –
১. তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) এবং সফটওয়্যার সেবা – ভারতের মতো বাংলাদেশও বিপিও, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, আইটি সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করে বৈদেশিক আয় বাড়াতে পারে। এর জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং বিদেশি বিনিয়োগ টানার নীতি দরকার।
২. ফার্মাসিউটিক্যালস রপ্তানি – বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশে ওষুধ রপ্তানি করে, কিন্তু মাত্রার দিক থেকে তা ছোট পরিসরে। উৎপাদন মান বাড়ানো, এফডিএ বা ইউরোপিয়ান অনুমোদন নেয়া, নতুন বাজারে ঢোকার জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।
৩. প্লাস্টিক এবং হালকা প্রকৌশল পণ্য – অনেক দেশ এখন চীন নির্ভরতা কমাতে চাইছে। বাংলাদেশ এসব হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি বাড়াতে পারে, যদি গুণমান ও সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা যায়।
৪. কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ – বিশ্ববাজারে সবজি, ফল, মাছের রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব। ঠান্ডা সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্র্যান্ডিং ও বাজারজাতকরণে বিনিয়োগ দরকার। এ খাতে ক্ষুদ্র কৃষকদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫. চামড়া ও জুতা শিল্প – একসময় বাংলাদেশ বিশ্বখ্যাত মানের চামড়া রপ্তানি করত। পরিবেশগত মান ও রপ্তানি নীতি ঠিক করা গেলে ইউরোপ ও অন্যান্য বাজারে সম্ভাবনা আছে।
নীতি সুপারিশ: রপ্তানি বহুমুখীকরণ
বিশেষজ্ঞরা একমত যে বাংলাদেশকে রপ্তানি বহুমুখীকরণের নীতি এখনই দ্রুত কার্যকর করতে হবে। এ জন্য দরকার –