বিএনপির রাজনীতিতে সাম্প্রতিক পিছু হটা
গত দুই দিনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি স্পষ্ট পরিবর্তন চোখে পড়ছে। বিএনপি, যা একটি মধ্যপন্থী জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে পরিচিত, এখন কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গেছে। বিশেষ করে তাদের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থান ও বক্তব্যে একটি দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। বিভিন্ন পর্যবেক্ষক বলছেন, বিএনপি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা অবস্থায় আছে।
এই পিছু হটার সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন কট্টরপন্থী ইসলামপন্থী গোষ্ঠী, যারা বিএনপিকে ‘সমঝোতাকারী’ বা ‘ধর্মবিরোধী’ বলে অভিযুক্ত করছে। এর ফলে বিএনপি নিজেদের অবস্থান রক্ষার চেষ্টায় স্পষ্ট বার্তা দিতে পারছে না।
মৌলবাদী গোষ্ঠীর প্রকাশ্য নিন্দা ও চাপ
গত দুই দিনে মৌলবাদী শিবিরের নেতারা প্রকাশ্যে বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে যে বিএনপি নাকি ইসলাম ও শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে ‘প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং মাদ্রাসা-মসজিদের বয়ানে এই ধরনের অভিযোগ আরও সরাসরি শোনা যাচ্ছে।
এই চাপ কেবল রাজনৈতিক নয় — এটি আদর্শিকও। মৌলবাদীরা নিজেদের সমর্থক বেসকে সংগঠিত রাখতে বিএনপিকে ‘অপর্যাপ্ত ইসলামপন্থী’ হিসেবে তুলে ধরছে। এতে ধর্মীয় ভোটব্যাংকের একটি অংশ বিএনপির হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নারীর অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্ন
মূল প্রশ্ন হচ্ছে — বিএনপির এই দুর্বলতা এবং মৌলবাদী চাপ কি বাংলাদেশের নারীর ভবিষ্যতের জন্য কোনো অশনিসংকেত?
বলা যায়, বাংলাদেশের ইতিহাসে যখনই রাজনীতিতে কট্টর ইসলামপন্থী শক্তি প্রভাব বাড়িয়েছে, তখনই নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে। নারী শিক্ষা, কর্মসংস্থান, আইন ও সামাজিক রীতিনীতি — সবখানেই মৌলবাদী গোষ্ঠী সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে চেয়েছে।
বিএনপি যদি রাজনৈতিকভাবে আরও কোণঠাসা হয় এবং মৌলবাদীদের সমর্থন ধরে রাখতে নীতিগত সমঝোতায় যায়, তবে সম্ভাব্য ঝুঁকি হলো — নারীর পোশাক, চলাফেরা, শিক্ষা — অধিকার, এমনকি আইনি সুরক্ষা নিয়েও নতুন বিতর্ক ও বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে।
রাজনৈতিক সমঝোতা বনাম নীতিগত অবস্থান
বিএনপির অতীতে ইসলামপন্থীদের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার নজির রয়েছে। এই মুহূর্তে তাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন যে, বিরোধী আন্দোলনে শরিক রাখতে অনেক সময় স্পষ্ট অবস্থান না নিয়ে দ্ব্যর্থহীন বার্তা দেওয়া হয়।
কিন্তু এই নীরবতা বা নরম মনোভাব মৌলবাদীদের আরও সুযোগ করে দিতে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে রাষ্ট্রীয় নীতিতে — বিশেষ করে যদি রাজনৈতিক সমীকরণে ইসলামপন্থীদের ভূমিকা ও দরকষাকষির ক্ষমতা বেড়ে যায়।
সমাজে বিদ্যমান নারী আন্দোলনের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করছে যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ধর্মীয় মেরুকরণ এবং মৌলবাদী তৎপরতা নারীর অর্জিত অধিকারগুলোকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
বিএনপির দুর্বলতা বা মৌলবাদীদের আক্রমণাত্মক অবস্থান সরাসরি রাজনৈতিক আলোচনার অংশ হলেও এর ফলাফল সমাজে নারীর ওপর ও পড়তে বাধ্য।
সতর্কতা ও দায়িত্ব
সব মিলিয়ে বলা যায় — বিএনপির সাম্প্রতিক পিছু হটা এবং মৌলবাদীদের প্রকাশ্য নিন্দা কেবল রাজনৈতিক দলীয় কৌশলের বিষয় নয়; এটি বাংলাদেশের সামগ্রিক সমাজ ও বিশেষ করে নারীর অধিকার আন্দোলনের জন্যও একটি সতর্ক বার্তা।
রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া — কোনো ধরনের মৌলবাদী চাপে নতি না স্বীকার করে নারীর অধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনসম্মত শাসনব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখা।
বাংলাদেশের সমাজকেও সজাগ থাকতে হবে — যেন কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার নামে নারীর স্বাধীনতা ও সুরক্ষার জায়গা ক্ষুণ্ন না হয়।