ঢাকায় নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলা
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে দেশীয় জঙ্গিরা নজিরবিহীন হামলা চালায়। পাঁচজন সশস্ত্র হামলাকারী রাত প্রায় পৌনে ৯টার দিকে বেকারিতে ঢুকে বিদেশি ও দেশি অতিথিদের জিম্মি করে। এ সময় তারা কুড়াল, ছুরি, পিস্তল ও হাতে তৈরি বিস্ফোরক ব্যবহার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
প্রায় ১০–১২ ঘণ্টা ধরে চলা এই জিম্মি অবস্থায় ২০ জন জিম্মি নিহত হন—তাদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক ও ৩ জন বাংলাদেশি। এছাড়া দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং দুইজন বেকারির কর্মী প্রাণ হারান। ভোরে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ হামলাকারী নিহত হয়।
হামলার দায় স্বীকার করে আইএস
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আইএসের মুখপত্র ‘আমাক নিউজ এজেন্সি’ দায় স্বীকার করে। তারা হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে যেখানে দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা আইএসের পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সেই ছবি ও বার্তা তারা টেলিগ্রাম, ফেসবুক ও আইএস-সমর্থক বিভিন্ন ফোরামে ছড়িয়ে দেয়। আইএস হামলাকারীদের “ইনঘিমাসি” (আত্মঘাতী কমান্ডো) হিসেবে উল্লেখ করে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, হামলাকারীরা Jamaat-ul-Mujahideen Bangladesh (JMB) এর সদস্য, যারা আন্তর্জাতিক আইএসের ভাবধারা অনুকরণ করেছে।
অভিযানের বর্ণনা
২ জুলাই ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ম প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে “অপারেশন থান্ডারবল্ট” পরিচালিত হয়। প্রায় ৫০ মিনিটের এই কমান্ডো অভিযানে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয় এবং সব হামলাকারী নিহত হয়।
বিশ্ব গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
এই হামলাকে বিবিসি “বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী হামলা” হিসেবে বর্ণনা করে। দ্য গার্ডিয়ান, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টসহ শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো হামলার ঘটনাবলী, নিহত বিদেশিদের পরিচয়, আইএস যোগসূত্র এবং বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট করে।
বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে হামলাকারীদের আইএস পতাকার সামনে তোলা ছবিগুলো ঘুরেফিরে প্রচারিত হয়। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় আইএসের “ফুটপ্রিন্ট” বা উপস্থিতি গড়ে তোলার আশঙ্কা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে একটি অংশ (মূল ও বাংলা)
দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে:
Bangladeshi Prime Minister Sheikh Hasina has announced two days of national holiday mourning after an attack on a cafe in Dhaka left 28 people dead… Authorities say local militants, not the Islamic State, carried out the 12-hour siege.”
(“বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় একটি ক্যাফেতে হামলার পর দুই দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন, যেখানে ২৮ জন নিহত হয়েছেন… কর্তৃপক্ষ বলেছে স্থানীয় জঙ্গিরাই – আইএস নয় – ১২ ঘণ্টার এই অবরোধ চালিয়েছিল।”)
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে:
“Islamic State claimed responsibility for the attack, releasing photos of the gunmen posing with the group’s black flag. The siege underscored the challenges Bangladesh faces from militancy despite government crackdowns.”
(“ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায় স্বীকার করে, হামলাকারীদের কালো পতাকার সামনে তোলা ছবি প্রকাশ করে। এই অবরোধ বাংলাদেশ সরকারের দমন-পীড়নের পরও জঙ্গিবাদের চ্যালেঞ্জগুলোকে স্পষ্ট করে তোলে।”)