০১:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বেশি এলাকা প্লাবিত

বৃষ্টিপাত ও পানিস্তর — সামগ্রিক চিত্র

গত সাত দিনে টানা ভারী বর্ষণ এবং উজানের নদীগুলোতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুর জেলায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে । ফেনীতে ঝড়ো বৃষ্টিপাত ও উপকূলীয় নদীগুলোর পানিস্তর বৃদ্ধির কারণে চরফেনী, ফেনী সদর, ফুলগাজী ও পারশুরামসহ ১১২টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে; ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩৪ ৬০০ মানুষ।

জাতীয় পর্যায়ে ২১ জেলার প্রায় ১ ০০ ০০০ হেক্টর কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে এবং কয়েক শতাধিক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২. প্লাবিত এলাকা ও বাড়তি ক্ষতির বিশ্লেষণ

নতুন প্লাবিত এলাকা: গত এক সপ্তাহে ফেনী জেলায় বাঁধের ২৩টি স্থানে ভাঙন ধরে আশপাশের নদীতীরবর্তী এলাকায় নতুন করে পানি ঢুকে পড়েছে।
সারা দেশে: ২১ জেলার কৃষিজমি প্লাবিত হয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ ০০ ০০০ হেক্টর (The Business Standard)।
আনুমানিক হিসাব মতে, প্লাবিত এলাকার পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অন্তত ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে।

ফেনীতে দ্রুত পানি বৃদ্ধির নজির, ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হতে পারে | দৈনিক  এশিয়ান মিরর

৩. জনগণের দুর্দশা ও কমিউনিটিতে বিপর্যয়

ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো: ফেনীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধসহ নিম্নাঞ্চলের বহু বাড়ি ও রাস্তা সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও মোবাইল-নেটওয়ার্ক ব্যাহত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
কৃষি ও পুষ্টি সংকট: নিচু জমির আমন চাষিরা আবার ফসল হারিয়েছেন; বহু ক্ষেতই মাটি ও বালুর স্তরে ঢেকে গেছে। এর ফলে কৃষকদের আয় বন্ধ হয়ে খাদ্যনিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জীবন-জীবিকা ও স্বাস্থ্য: পানি ওঠানামা করায় জনজীবন স্থবির। অনেক পরিবার চাল, ডাল, তেল ও অন্যান্য মৌলিক খাদ্যসামগ্রী থেকে বঞ্চিত। ফেনী ও নোয়াখালী এলাকা থেকে পাওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশুদ্ধ পানির সংকটে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়েছে ।

৪. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি

প্লাবিত বাজারে চাল, ডাল, তেল, সুজি ও মসলাসহ দৈনন্দিন খাদ্যপণ্যের দাম স্থানীয় চাহিদা ও সরবরাহ-বিঘ্নের কারণে ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। শস্য সংগ্রহ ও পরিবহন ব্যয় বাড়ায় দরিদ্র কৃষক থেকে ভোক্তামহল—সকলেই অতিরিক্ত খরচের চাপ অনুভব করছেন।

ফেনীতে বাঁধ ভেঙে তীব্র স্রোতে ঢুকছে পানি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল - Kaler Alo

৫. ক্ষয় নিরূপণ ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন

মাত্র সাত দিনের বন্যায় মাটি-সহ বাড়িঘর, রাস্তা-সেতু, বিদ্যুৎ এবং পানীয়জল-বাহী অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; শুধু ফেনীতেই অন্তত ৫০টির বেশি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, কৃষিজমি ও অবকাঠামোর ক্ষতি সারা দেশে কয়েক হাজার কোটি টাকার ওপরে পৌঁছেছে।

ফেনী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে। ২১ জেলার প্লাবিত ১ ০০ ০০০ হেক্টর কৃষিজমির মোট ক্ষতি প্রাথমিক হিসাবে ১৫-২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে থাকতে পারে।

৬. সরকারি ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

বন্যা নিয়ন্ত্রণে ফেনীর দুর্বল বাঁধগুলো মেরামতে ৭ ৩৪০ কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি, জরুরি পরিবহন ব্যবস্থা, নিরাপদ পানির সরবরাহ, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ফেনীর দুঃখ মুহুরীর বাঁধ

৭. বিশেষ মূল্যায়ন ও সুপারিশ

১. টেকসই বাঁধ ও খাল খনন: ফেনীসহ উপকূলীয় নদীগুলোর স্থায়ী বাঁধ ও খাল সংস্কারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
২. তৎক্ষণিক সতর্কতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা: দুর্যোগকালে মোবাইল ও টেলিকম নেটওয়ার্ক সচল রাখতে পরিবেশ-সহনশীল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
৩. স্থানীয় উদ্যোগ ও জনসচেতনতা: মাটি-সংরক্ষণ ও উন্নয়নে স্থানীয় কমিউনিটি এবং এনজিও-দের সমন্বিত ভূমিকা অগ্রাধিকার পেতে হবে।
৪. পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ: ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও সাধারণ মানুষকে দ্রুত, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এবং টেকসই পুনর্বাসন নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

দারিদ্র্য ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি
গত সাত দিনে টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে ফেনীসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। ১১২টি গ্রাম পানিবন্দি, ১ ০০ ০০০ হেক্টর কৃষিজমি প্লাবিত এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দারিদ্র্য ও স্বাস্থ্য-ঝুঁকি বেড়েছে। জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন আর্থিক ও কৌশলগত উদ্যোগ নেওয়া হলেও টেকসই সমাধান নিশ্চিত না হলে এই দুর্যোগ পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রয়ে গেছে।

গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বেশি এলাকা প্লাবিত

০৮:৪৪:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

বৃষ্টিপাত ও পানিস্তর — সামগ্রিক চিত্র

গত সাত দিনে টানা ভারী বর্ষণ এবং উজানের নদীগুলোতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুর জেলায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে । ফেনীতে ঝড়ো বৃষ্টিপাত ও উপকূলীয় নদীগুলোর পানিস্তর বৃদ্ধির কারণে চরফেনী, ফেনী সদর, ফুলগাজী ও পারশুরামসহ ১১২টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে; ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩৪ ৬০০ মানুষ।

জাতীয় পর্যায়ে ২১ জেলার প্রায় ১ ০০ ০০০ হেক্টর কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে এবং কয়েক শতাধিক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২. প্লাবিত এলাকা ও বাড়তি ক্ষতির বিশ্লেষণ

নতুন প্লাবিত এলাকা: গত এক সপ্তাহে ফেনী জেলায় বাঁধের ২৩টি স্থানে ভাঙন ধরে আশপাশের নদীতীরবর্তী এলাকায় নতুন করে পানি ঢুকে পড়েছে।
সারা দেশে: ২১ জেলার কৃষিজমি প্লাবিত হয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ ০০ ০০০ হেক্টর (The Business Standard)।
আনুমানিক হিসাব মতে, প্লাবিত এলাকার পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অন্তত ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে।

ফেনীতে দ্রুত পানি বৃদ্ধির নজির, ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হতে পারে | দৈনিক  এশিয়ান মিরর

৩. জনগণের দুর্দশা ও কমিউনিটিতে বিপর্যয়

ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো: ফেনীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধসহ নিম্নাঞ্চলের বহু বাড়ি ও রাস্তা সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও মোবাইল-নেটওয়ার্ক ব্যাহত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
কৃষি ও পুষ্টি সংকট: নিচু জমির আমন চাষিরা আবার ফসল হারিয়েছেন; বহু ক্ষেতই মাটি ও বালুর স্তরে ঢেকে গেছে। এর ফলে কৃষকদের আয় বন্ধ হয়ে খাদ্যনিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জীবন-জীবিকা ও স্বাস্থ্য: পানি ওঠানামা করায় জনজীবন স্থবির। অনেক পরিবার চাল, ডাল, তেল ও অন্যান্য মৌলিক খাদ্যসামগ্রী থেকে বঞ্চিত। ফেনী ও নোয়াখালী এলাকা থেকে পাওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশুদ্ধ পানির সংকটে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়েছে ।

৪. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি

প্লাবিত বাজারে চাল, ডাল, তেল, সুজি ও মসলাসহ দৈনন্দিন খাদ্যপণ্যের দাম স্থানীয় চাহিদা ও সরবরাহ-বিঘ্নের কারণে ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। শস্য সংগ্রহ ও পরিবহন ব্যয় বাড়ায় দরিদ্র কৃষক থেকে ভোক্তামহল—সকলেই অতিরিক্ত খরচের চাপ অনুভব করছেন।

ফেনীতে বাঁধ ভেঙে তীব্র স্রোতে ঢুকছে পানি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল - Kaler Alo

৫. ক্ষয় নিরূপণ ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন

মাত্র সাত দিনের বন্যায় মাটি-সহ বাড়িঘর, রাস্তা-সেতু, বিদ্যুৎ এবং পানীয়জল-বাহী অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; শুধু ফেনীতেই অন্তত ৫০টির বেশি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, কৃষিজমি ও অবকাঠামোর ক্ষতি সারা দেশে কয়েক হাজার কোটি টাকার ওপরে পৌঁছেছে।

ফেনী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে। ২১ জেলার প্লাবিত ১ ০০ ০০০ হেক্টর কৃষিজমির মোট ক্ষতি প্রাথমিক হিসাবে ১৫-২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে থাকতে পারে।

৬. সরকারি ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

বন্যা নিয়ন্ত্রণে ফেনীর দুর্বল বাঁধগুলো মেরামতে ৭ ৩৪০ কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি, জরুরি পরিবহন ব্যবস্থা, নিরাপদ পানির সরবরাহ, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ফেনীর দুঃখ মুহুরীর বাঁধ

৭. বিশেষ মূল্যায়ন ও সুপারিশ

১. টেকসই বাঁধ ও খাল খনন: ফেনীসহ উপকূলীয় নদীগুলোর স্থায়ী বাঁধ ও খাল সংস্কারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
২. তৎক্ষণিক সতর্কতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা: দুর্যোগকালে মোবাইল ও টেলিকম নেটওয়ার্ক সচল রাখতে পরিবেশ-সহনশীল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
৩. স্থানীয় উদ্যোগ ও জনসচেতনতা: মাটি-সংরক্ষণ ও উন্নয়নে স্থানীয় কমিউনিটি এবং এনজিও-দের সমন্বিত ভূমিকা অগ্রাধিকার পেতে হবে।
৪. পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ: ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও সাধারণ মানুষকে দ্রুত, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এবং টেকসই পুনর্বাসন নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

দারিদ্র্য ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি
গত সাত দিনে টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে ফেনীসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। ১১২টি গ্রাম পানিবন্দি, ১ ০০ ০০০ হেক্টর কৃষিজমি প্লাবিত এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দারিদ্র্য ও স্বাস্থ্য-ঝুঁকি বেড়েছে। জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন আর্থিক ও কৌশলগত উদ্যোগ নেওয়া হলেও টেকসই সমাধান নিশ্চিত না হলে এই দুর্যোগ পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রয়ে গেছে।