অষ্টম পরিচ্ছেদ
‘ওহে, তোমার চাবুকখান দাও দিকি,’ কালো দাড়ি একজন গাড়োয়ানকে চিৎকার করে বলল। লোকটা তার ঘোড়ার মাথার কাছটাতে ভয়ে-ভয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
‘কিসের জন্যি?’ অপর জন জিজ্ঞেস করল। ‘বেত মেরে হবে কী। তার চেয়ে ওরে গেরামে লিয়ে চল, ওরাই ওর ব্যবস্তা করবে’ খন।’
‘আরে বেত মারার জন্যি না, ছোঁড়ার হাত দুটো বাঁধার জন্যি চাবুকখান চাইচি। ওর দিকি ঠাহর করি এটু তাকিয়ে দ্যাখো কেটে পড়ার জন্যি ছটফট করতে নেগেচে যে ছোঁড়াটা।’
আমার কনুই দুটো পেছন দিকে মুচড়ে বাঁধা হল। তারপর ঠেলে গাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হল আমাকে।
‘উঠে পড়!’
চকচকে, গাঁট্টাগোট্টা চেহারার ঘোড়াগুলো দ্রুত পা চালিয়ে গ্রামের দিকে চলল।
বেশ বড়সড় একটা গ্রাম দেখা যাচ্ছিল দূরে। সবুজ পাহাড়ের ঢালুতে ঝলমল করছিল গ্রামের ঘরবাড়ির শাদা চিনিগুলো।
গাড়িতে যেতে-যেতে তখনও আমার মনে-মনে আশা যে হয়তো দেখব লোকগুলো আসলে লাল ফৌজের কোনো একটা বাহিনীর কয়েকজন পার্টিজান, আর গ্রামে গিয়ে পৌঁছলেই যথাস্থানে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে আমিও ছাড়া পেয়ে যাব।
গ্রাম থেকে অল্প দূরে একটা ঝোপের মধ্যে থেকে একজন শাস্ত্রী আমাদের চ্যালেঞ্জ করল: ‘কে যায়?’
‘বন্ধু গাঁয়ের মোড়ল,’ কালো দাড়ি জবাব দিল।
‘অ-অ-অ! তা গেছিলে কোথা?’
‘আশপাশের গাঁ থেকে গাড়ি যোগাড় করতি।’
ঘোড়াগুলো ফের দ্রুত চলতে শুরু করল। আমার কিন্তু তখন শাস্ত্রীটার পোশাক-আশাক কিংবা ওর মুখটা ঠাহর করে দেখার সময় ছিল না। কারণ, আমার সমস্ত মনোযোগ গিয়ে পড়েছিল ওর কাঁধের দিকে। ওর কাঁধে আঁটা ছিল একটা চামড়ার ফিতে*।