নানাবিধ গান ছাড়াও কুশাই সরকার এ ধরনের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করেছিলেন।
গণিউর রাজার লেখায় খানিকটা বিভ্রান্তি আছে। বেলুনে জিনেটই ছিলেন। প্যান্ট গেঞ্জি পড়া জিনেটকে দেখে তাকে পুরুষ মনে করেছিলেন। এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি কবিতার সন্ধান পেয়েছি আজ থেকে একশ বছর আগে প্রকাশিত বটতলার একটি বইয়ে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত এই পথ কবিতার লেখক ছিলেন কুশাই সরকার। কুশাই সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি।
শুধু জেনেছি তিনি থাকতেন কেরাণীগঞ্জের শুভাঢ্যায়। পথ কবিতা লিখতেন। মোটামুটি পরিচিত ছিলেন। কারণ, তাঁর বইয়ের একাধিক সংস্করণ হয়েছিল। কুশাই সরকারের যে বইটি নিয়ে আলোচনা করছি তার নাম নানাবিধ গান। গোপীনাথ বসাক, স্যমন্তক যন্ত্রে ছেপেছিলেন। প্রকাশিত হয়েছিলো ১৮৯২ সালে। ক্রাউন সাইজের ১২ পাতার বই। মূল্য এক আনা। সেই সময়ের তুলনায় দাম বেশি। তা সত্ত্বেও এর কয়েকটি সংস্করণ হয়েছিল।
আমি দেখেছি তৃতীয় সংস্করণ। মোট মুদ্রণ সংখ্যা ছিল দশ হাজার। হয়তো আরো সংস্করণ হয়েছিল যার খোঁজ পাইনি। নানাবিধ গান ছাড়াও কুশাই সরকার এ ধরনের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করেছিলেন।
ঢাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রচিত গানের সংকলন নানাবিধ গান। ঢাকা শহরের তৎকালীন কিছু ঘটনা যা মানুষজনকে নাড়া দিয়েছিল, জানা যাবে তাঁর সেই সব কবিতায়। কুশাই সরকার অবশ্য সংকলিত কবিতাগুলোকে গান হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। ঢাকার সেই বেলুন ভ্রমণ নিয়ে লেখা তাঁর গানটি উদ্ধৃত করছি-
বেলুনের গান ঝড়ের সুর
বিধাতার অপার লীলা সীমা নাই। খুঁজে পাই নাই?
তিনি কাকে মারে, কাকে রাখে তার তো
কিছু নিশ্চয় নাই-
টাকার বশে বিবি এসে, উপনীত, ঘোর
বিদেশে, জানাইতে
বাহাদুরী মনে কিছু শঙ্কা নাই। কালীগঞ্জ
নদীর তটে, এসে
কতূহলে বটে, কৈইরে কত পরিপাটী ঘেস্
যোগায় বেলুনে ভাই।
বন্দুক একটা রাখে ভরি, অনেক সেপাই বেলুন
ধরি,
বেলুন ফুইলা যখন হইল ভারী, মেম এসে
ছিকায় বসলে ভাই।
বন্দুক যখন ডেওর হইল মেম তখন উড়ে
চল্ল, লোকে বলে
কী হইল, এমন তামসা দেখি নাই।
স্বর্গমুখী চল্লেন ধাইয়া কত লোক রয়েছে
চাইয়া, ডিম্ব প্রায়
দেখা যায় কায়া এমন রূপ আর দেখি
নাই, চাকু দিয়া কেটে ডুরী
বেলুন অমনি দিলেন ছাড়ি ঝাউ গাছেতে
রইলেন পড়ি, মেম্
কোলে শুন্যে ভাই।
কতলোক ঐ গাছের তলে। বাঁস [শ]
বান্ধিয়া দিতে বলে, বাঁশ
ভেঙ্গে পইল ভূমিস্থলে। দেখে তার চৈতন্য নাই।
হায়? বিধি কী
হইল, ডাক বাঙ্গলাতে লইয়া গেল, কত ডাক্তার ইংরেজ
দেখতে পাইল, কুশাই বলে ওর আয়ু নাই।
(চলবে)