০৪:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
পথঘাটে কটুক্তি, অনলাইনে নিপীড়ন: একটি কিশোরীর লড়াই দ্য ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদন: বাংলাদেশি টেসলা বোয়িং কেনা ও শুল্ক কূটনীতি: সরকারের সিদ্ধান্তে সমন্বয়হীনতার অর্থনৈতিক মূল্য ঢাকাসহ সারাদেশে পরবর্তী তিন দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস মার্কিন রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ: বাংলাদেশের প্লাস্টিক রপ্তানিতে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ আগামী কয়েক দশকেই হারিয়ে যাবে গন্ধগোকুল মানবজাতির পরবর্তী ধাপ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে এক অজানা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে ভারতের রফতানি কমেছে ৬ শতাংশের বেশি অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাব আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্য ধ্বংস করছে

মানবজাতির পরবর্তী ধাপ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে এক অজানা ভবিষ্যৎ

প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ও অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনের সম্ভাবনা

মানব ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ অনুমান ছিল যে, জগৎ চলবে আগের গতিতেই। কিন্তু প্রযুক্তি এমন এক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ভবিষ্যৎ আর চেনা যাচ্ছে না। সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি নেতারা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কয়েক বছরের মধ্যেই সাধারণ মানুষের চেয়ে সব মানসিক কাজ ভালোভাবে করতে সক্ষম হবে। যদি এই ভবিষ্যদ্বাণী আংশিকও সত্যি হয়, তবে তা হবে পৃথিবীর অর্থনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় পরিবর্তনের সূচনা।

গত এক দশকে AI-এর অগ্রগতির গতি প্রায় সব পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৫ সালে OpenAI ও Google DeepMind-এর ভাষা মডেলগুলো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক অর্জন করেছে—যেটি ২০২১ সালে বিশেষজ্ঞরা ১৮ বছর পর ঘটবে বলে ভেবেছিলেন। বর্তমানে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলছে শক্তির প্রতিযোগিতা, যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে GPT-4 তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পিউটিং রিসোর্সের চেয়ে হাজার গুণ বেশি শক্তি দিয়ে নতুন মডেল প্রশিক্ষণ সম্ভব হবে।

২০৩০-এর পরের পৃথিবী কেমন হতে পারে?

AI-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। কেউ বলছেন, AI-চালিত সন্ত্রাসীরা জৈব অস্ত্র তৈরি করতে পারে যা কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করতে সক্ষম। আবার কেউ বলছেন, ভুলভাবে প্রোগ্রাম করা কোনো AI তার সৃষ্টিকর্তাকেই ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে এই শঙ্কার পাশাপাশি বাস্তব ও অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনগুলোর কথাও ভাবা দরকার—যেগুলো হয়তো ধ্বংসাত্মক নয়, কিন্তু সমাজ ও অর্থনীতিতে গভীর রূপান্তর আনবে।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা: শিল্পবিপ্লব ও বর্তমানের তুলনা

১৭০০ সালের আগে শতাব্দীতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। কিন্তু শিল্পবিপ্লবের পর সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫০ শতাংশে। মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন ধারণা জন্ম নেয়, যার ফলে অর্থনীতি দ্রুত এগোতে থাকে। যদিও সেই প্রবৃদ্ধি ছিল ধীর, কারণ এতে মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণ প্রয়োজন হতো।

AI-ভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এমন কোনো জনসংখ্যাগত সীমাবদ্ধতা নেই। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, AI গবেষণার গতি হবে এক্সপোনেনশিয়াল। OpenAI-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ২০২৬ সাল নাগাদ AI নতুন গবেষণালব্ধ অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারবে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে নিজেই নিজেকে উন্নত করতে সক্ষম হবে।

দ্বিতীয় দফা অর্থনৈতিক বিস্ফোরণ?

যদি AI নিজেই নতুন আবিষ্কার করতে পারে এবং সেই মুনাফা পুনরায় AI উন্নয়নে বিনিয়োগ হয়, তবে সম্পদ সঞ্চয় ও উৎপাদনের গতি হবে অভাবনীয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান Epoch AI অনুমান করছে, AI যদি ৩০ শতাংশ কাজ করতে পারে, তবে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশেরও বেশি হতে পারে।

Elon Musk-এর মতো প্রযুক্তি নেতারা বিশ্বাস করেন, AI থেকে একদিন ‘সুপারইনটেলিজেন্স’ জন্ম নিতে পারে। তখন প্রযুক্তি, শক্তি, এমনকি মানব আয়ু নিয়েও সীমা থাকবে না—কেবল পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মই তখন বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

শ্রমবাজার ও বৈষম্যের নতুন চেহারা

যদি AI মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা অর্জন করে, তাহলে কম্পিউটিং খরচই নির্ধারণ করবে কার বেতন কত হবে। যাদের কাজ অটোমেট করা সম্ভব হবে না, বা যারা AI-কে সহায়তা করতে পারবে, তারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করবে। তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে যারা AI প্রযুক্তির মালিক।

এই নতুন ধনী শ্রেণির চাহিদা অনুযায়ী বেতনবৃদ্ধি ঘটবে নির্দিষ্ট খাতে। যেসব পেশায় এখনো মানুষের উপস্থিতি অপরিহার্য, সেসব পেশার ব্যয় এতটাই বাড়বে যে তা GDP প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে দিতে পারে, যদিও সামগ্রিক অর্থনীতির গঠন পাল্টে যাবে। অর্থনীতিবিদরা এই পরিস্থিতিকে বলেন “কস্ট ডিজিজ”।

দামে পরিবর্তন ও বৈষয়িক প্রভাব

যেসব পণ্য AI দ্বারা তৈরি সম্ভব, যেমন—স্বয়ংক্রিয় কারখানার পণ্য বা ডিজিটাল বিনোদন—সেগুলোর দাম পড়ে যাবে। কিন্তু যেখানে এখনো মানুষের প্রয়োজন, যেমন—স্বাস্থ্যসেবা বা শিক্ষায়, সেখানে খরচ বাড়বে। ম্যানুয়াল শ্রম নির্ভর কাজে নিয়োজিত মানুষের জীবনযাত্রার মান হয়তো কমে যাবে।

মানুষ হয়তো AI-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামবে জমি বা শক্তির ব্যবহার নিয়ে। এ প্রতিযোগিতার ফলাফল পড়বে শেয়ারবাজারেও। AI প্রতিযোগিতায় কোন কোম্পানি জিতবে বা হারবে—তা নিয়ে বাজারে চরম ওঠানামা হতে পারে। অনেকেই বিনিয়োগ বাড়াবে, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের আগ্রহ কমে যেতে পারে, বিশেষ করে উচ্চ আয়ের মানুষের মধ্যে।

সুদের হারঋণ ও বৈশ্বিক ঝুঁকি

যেহেতু ভবিষ্যতে উচ্চ আয় প্রত্যাশিত, তাই বিনিয়োগকে আকর্ষণীয় করতে হলে সুদের হার হয়তো ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এতে দীর্ঘমেয়াদি সম্পদের দাম কমে যাবে এবং যাদের আয় বাড়বে না, তারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। যারা AI প্রবৃদ্ধির সুযোগ নিতে পারবে না, তারা পুঁজি পাচারের ঝুঁকিতে পড়বে।

এছাড়া মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে। কারণ মানুষ আয় বাড়ার প্রত্যাশায় ব্যয় বাড়াবে এবং যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময়মতো হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে অর্থনীতি অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

গণতন্ত্রসমাজ ও রাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ

শিল্পবিপ্লবের সময় গণতন্ত্রের উপস্থিতি ছিল না, কিন্তু এখন আছে। তাই AI-প্রণোদিত বৈষম্য বাড়লে জনগণ রাষ্ট্রের কাছে সম্পদের পুনর্বণ্টনের দাবি তুলবে। অপরদিকে, রাষ্ট্র AI ব্যবহার করে নাগরিকদের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করতে পারবে। ফলে রাষ্ট্রকে করনীতি, শিক্ষা ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে নতুন কাঠামো গঠন করতে হবে।

মানবতার জন্য এক বিস্ময়ের মুহূর্ত

Anthropic-এর সিইও ড্যারিও আমোডেই মনে করেন, AI এমন রোগের চিকিৎসা দিতে পারবে যেগুলো একসময় অসম্ভব মনে হতো। যদি AI আরও উন্নত হয়, তবে তা হবে মানব ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়। তবে এই অগ্রগতির সময় কেবল প্রযুক্তি নয়, মানুষের প্রজ্ঞা ও নৈতিক বোধও সমানভাবে প্রয়োজন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এটি এক জটিল মিশ্রণ—ভয়ের, পরিবর্তনের এবং সম্ভাবনার। এই প্রযুক্তিগত বিপ্লব মানবতাকে এক নতুন যুগে প্রবেশ করাবে, যেখানে শুধু প্রযুক্তি নয়, দায়িত্বশীলতা ও মানবিক প্রজ্ঞারও প্রয়োজন হবে।

পথঘাটে কটুক্তি, অনলাইনে নিপীড়ন: একটি কিশোরীর লড়াই

মানবজাতির পরবর্তী ধাপ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে এক অজানা ভবিষ্যৎ

১০:০০:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ও অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনের সম্ভাবনা

মানব ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ অনুমান ছিল যে, জগৎ চলবে আগের গতিতেই। কিন্তু প্রযুক্তি এমন এক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ভবিষ্যৎ আর চেনা যাচ্ছে না। সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি নেতারা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কয়েক বছরের মধ্যেই সাধারণ মানুষের চেয়ে সব মানসিক কাজ ভালোভাবে করতে সক্ষম হবে। যদি এই ভবিষ্যদ্বাণী আংশিকও সত্যি হয়, তবে তা হবে পৃথিবীর অর্থনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় পরিবর্তনের সূচনা।

গত এক দশকে AI-এর অগ্রগতির গতি প্রায় সব পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৫ সালে OpenAI ও Google DeepMind-এর ভাষা মডেলগুলো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক অর্জন করেছে—যেটি ২০২১ সালে বিশেষজ্ঞরা ১৮ বছর পর ঘটবে বলে ভেবেছিলেন। বর্তমানে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলছে শক্তির প্রতিযোগিতা, যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে GPT-4 তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পিউটিং রিসোর্সের চেয়ে হাজার গুণ বেশি শক্তি দিয়ে নতুন মডেল প্রশিক্ষণ সম্ভব হবে।

২০৩০-এর পরের পৃথিবী কেমন হতে পারে?

AI-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। কেউ বলছেন, AI-চালিত সন্ত্রাসীরা জৈব অস্ত্র তৈরি করতে পারে যা কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করতে সক্ষম। আবার কেউ বলছেন, ভুলভাবে প্রোগ্রাম করা কোনো AI তার সৃষ্টিকর্তাকেই ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে এই শঙ্কার পাশাপাশি বাস্তব ও অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনগুলোর কথাও ভাবা দরকার—যেগুলো হয়তো ধ্বংসাত্মক নয়, কিন্তু সমাজ ও অর্থনীতিতে গভীর রূপান্তর আনবে।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা: শিল্পবিপ্লব ও বর্তমানের তুলনা

১৭০০ সালের আগে শতাব্দীতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। কিন্তু শিল্পবিপ্লবের পর সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫০ শতাংশে। মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন ধারণা জন্ম নেয়, যার ফলে অর্থনীতি দ্রুত এগোতে থাকে। যদিও সেই প্রবৃদ্ধি ছিল ধীর, কারণ এতে মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণ প্রয়োজন হতো।

AI-ভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এমন কোনো জনসংখ্যাগত সীমাবদ্ধতা নেই। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, AI গবেষণার গতি হবে এক্সপোনেনশিয়াল। OpenAI-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ২০২৬ সাল নাগাদ AI নতুন গবেষণালব্ধ অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারবে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে নিজেই নিজেকে উন্নত করতে সক্ষম হবে।

দ্বিতীয় দফা অর্থনৈতিক বিস্ফোরণ?

যদি AI নিজেই নতুন আবিষ্কার করতে পারে এবং সেই মুনাফা পুনরায় AI উন্নয়নে বিনিয়োগ হয়, তবে সম্পদ সঞ্চয় ও উৎপাদনের গতি হবে অভাবনীয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান Epoch AI অনুমান করছে, AI যদি ৩০ শতাংশ কাজ করতে পারে, তবে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশেরও বেশি হতে পারে।

Elon Musk-এর মতো প্রযুক্তি নেতারা বিশ্বাস করেন, AI থেকে একদিন ‘সুপারইনটেলিজেন্স’ জন্ম নিতে পারে। তখন প্রযুক্তি, শক্তি, এমনকি মানব আয়ু নিয়েও সীমা থাকবে না—কেবল পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মই তখন বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

শ্রমবাজার ও বৈষম্যের নতুন চেহারা

যদি AI মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা অর্জন করে, তাহলে কম্পিউটিং খরচই নির্ধারণ করবে কার বেতন কত হবে। যাদের কাজ অটোমেট করা সম্ভব হবে না, বা যারা AI-কে সহায়তা করতে পারবে, তারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করবে। তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে যারা AI প্রযুক্তির মালিক।

এই নতুন ধনী শ্রেণির চাহিদা অনুযায়ী বেতনবৃদ্ধি ঘটবে নির্দিষ্ট খাতে। যেসব পেশায় এখনো মানুষের উপস্থিতি অপরিহার্য, সেসব পেশার ব্যয় এতটাই বাড়বে যে তা GDP প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে দিতে পারে, যদিও সামগ্রিক অর্থনীতির গঠন পাল্টে যাবে। অর্থনীতিবিদরা এই পরিস্থিতিকে বলেন “কস্ট ডিজিজ”।

দামে পরিবর্তন ও বৈষয়িক প্রভাব

যেসব পণ্য AI দ্বারা তৈরি সম্ভব, যেমন—স্বয়ংক্রিয় কারখানার পণ্য বা ডিজিটাল বিনোদন—সেগুলোর দাম পড়ে যাবে। কিন্তু যেখানে এখনো মানুষের প্রয়োজন, যেমন—স্বাস্থ্যসেবা বা শিক্ষায়, সেখানে খরচ বাড়বে। ম্যানুয়াল শ্রম নির্ভর কাজে নিয়োজিত মানুষের জীবনযাত্রার মান হয়তো কমে যাবে।

মানুষ হয়তো AI-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামবে জমি বা শক্তির ব্যবহার নিয়ে। এ প্রতিযোগিতার ফলাফল পড়বে শেয়ারবাজারেও। AI প্রতিযোগিতায় কোন কোম্পানি জিতবে বা হারবে—তা নিয়ে বাজারে চরম ওঠানামা হতে পারে। অনেকেই বিনিয়োগ বাড়াবে, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের আগ্রহ কমে যেতে পারে, বিশেষ করে উচ্চ আয়ের মানুষের মধ্যে।

সুদের হারঋণ ও বৈশ্বিক ঝুঁকি

যেহেতু ভবিষ্যতে উচ্চ আয় প্রত্যাশিত, তাই বিনিয়োগকে আকর্ষণীয় করতে হলে সুদের হার হয়তো ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এতে দীর্ঘমেয়াদি সম্পদের দাম কমে যাবে এবং যাদের আয় বাড়বে না, তারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। যারা AI প্রবৃদ্ধির সুযোগ নিতে পারবে না, তারা পুঁজি পাচারের ঝুঁকিতে পড়বে।

এছাড়া মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে। কারণ মানুষ আয় বাড়ার প্রত্যাশায় ব্যয় বাড়াবে এবং যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময়মতো হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে অর্থনীতি অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

গণতন্ত্রসমাজ ও রাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ

শিল্পবিপ্লবের সময় গণতন্ত্রের উপস্থিতি ছিল না, কিন্তু এখন আছে। তাই AI-প্রণোদিত বৈষম্য বাড়লে জনগণ রাষ্ট্রের কাছে সম্পদের পুনর্বণ্টনের দাবি তুলবে। অপরদিকে, রাষ্ট্র AI ব্যবহার করে নাগরিকদের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করতে পারবে। ফলে রাষ্ট্রকে করনীতি, শিক্ষা ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে নতুন কাঠামো গঠন করতে হবে।

মানবতার জন্য এক বিস্ময়ের মুহূর্ত

Anthropic-এর সিইও ড্যারিও আমোডেই মনে করেন, AI এমন রোগের চিকিৎসা দিতে পারবে যেগুলো একসময় অসম্ভব মনে হতো। যদি AI আরও উন্নত হয়, তবে তা হবে মানব ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়। তবে এই অগ্রগতির সময় কেবল প্রযুক্তি নয়, মানুষের প্রজ্ঞা ও নৈতিক বোধও সমানভাবে প্রয়োজন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এটি এক জটিল মিশ্রণ—ভয়ের, পরিবর্তনের এবং সম্ভাবনার। এই প্রযুক্তিগত বিপ্লব মানবতাকে এক নতুন যুগে প্রবেশ করাবে, যেখানে শুধু প্রযুক্তি নয়, দায়িত্বশীলতা ও মানবিক প্রজ্ঞারও প্রয়োজন হবে।