টেসলার জন্য সময়টা কঠিন। সম্প্রতি কোম্পানিটির দামি বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) সারা বিশ্বে কম বিক্রি হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের শহরগুলোতে এক বিনয়ী “সমনামী” দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা—যাকে স্থানীয়রা ঠাট্টাচ্ছলে “বাংলা টেসলা” বলেন—শহুরে পরিবহনব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন আনছে। ধারণা করা হয়, বর্তমানে এসব রিকশার সংখ্যা ৪০ লক্ষের বেশি (২০১৬ সালে ছিল দুই লক্ষ) এবং প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষকে যাতায়াত করাচ্ছে। সম্ভবত এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনানুষ্ঠানিক ইভি বহর।
সাইকেলচালিত রিকশা বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের শহরগুলোতে জনপ্রিয়। এগুলোর গায়ে প্রায়ই রঙিন চিত্রকর্ম আঁকা থাকে। জাতিসংঘ এগুলোকে বাংলাদেশের “অদৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ২০০৭ সালের দিকে কিছু চালক চীনা আমদানিকৃত বৈদ্যুতিক মোটর ও সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি জুড়ে নিজেদের রিকশা উন্নত করা শুরু করেন। এখন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান একেবারে নতুন ই-রিকশা বানিয়ে বিক্রি করছে। এতে চালকদের আয় বেড়েছে। রাজধানী ঢাকার শাকিলুর রহমান বলেন, “প্যাডেল রিকশা চালিয়ে দিনে কষ্টেসৃষ্টে ২০০ টাকা হয়, গতি কচ্ছপের মতো। আমার টেসলা দিয়ে দিনে প্রায় ১,৫০০ টাকা উপার্জন করি।” কারণ ই-রিকশা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে, যা প্যাডেলচালিতের চেয়ে চার গুণ বেশি। তিনি স্বীকার করেন, “ঝুঁকি আছে, কিন্তু যে কেউ সামাল দিতে পারে।”
তবে বাস্তবচিত্র ভিন্ন কথা বলে। বহু ই-রিকশার কাঠামো দুর্বল; বৈদ্যুতিক মোটরের গতি সামাল দেওয়ার মতো মজবুত নয়। দুর্ঘটনা বাড়ছে। একটি স্থানীয় এনজিওর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ই-রিকশা-সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় ৮৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্তই মৃতের সংখ্যা ৩৭৮-এ পৌঁছেছে। একটি জাতীয় দৈনিক একে “প্রলয়” বলে উল্লেখ করেছে। ই-রিকশার সিসা ব্যাটারিও বড় সমস্যা। ব্যাটারির মেয়াদ শেষ হলে লাইসেন্সবিহীন রিসাইক্লাররা সেগুলো গলিয়ে ফেলে, ফলে সিসার বাষ্প বাতাসে মিশে যায়—যা দেশে আগেই জাতীয় দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। ইউনিসেফের মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ শিশুর রক্তে ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রার সিসা রয়েছে।
কম বিষাক্ত (কিন্তু বেশি দামি) লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি চালকদের ব্যবহারে উৎসাহিত করা পরিস্থিতি কিছুটা নিরাপদ করতে পারে। ‘টাইগার নিউ এনার্জি’ নামের একটি স্টার্টআপ মূলত সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতিতে এ সুবিধা দিচ্ছে: তাদের সেবা নিলে চালকেরা শহরজুড়ে স্থাপিত কিয়োস্কে খালি ব্যাটারির বদলে দ্রুত পূর্ণচার্জ ব্যাটারি পেয়ে যান, এতে সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হয়।
দুর্ঘটনা কমানোর দায় অবশ্য সরকারের। ই-রিকশা নিষিদ্ধের আগের সব প্রচেষ্টা তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েছিল। গত বছর রাজনৈতিক পালাবদলের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবার গত জুনে যে খসড়া বিধিমালা প্রস্তুত করেছে, তাতে গতি-সীমা কড়াকড়ি করা ও নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব রয়েছে। তবে দুর্বল প্রয়োগের কারণে অতীতের অনেক নিয়ন্ত্রণই ব্যর্থ হয়েছে। নতুন এই উদ্যোগ কি গাড়ির ব্রেক ব্যবস্থা মজবুত করতে পারবে?