০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

রংপুরের গংগাচড়ায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, কী জানা যাচ্ছে

  • Sarakhon Report
  • ০৯:৩২:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
  • 15

গংগাচড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট হয়েছে

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের একটি গ্রামে এক কিশোরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে নবীকে অবমাননার করে পোস্ট দেয়ার অভিযোগ তুলে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা ও লু্টতরাজের অভিযোগ উঠেছে।

ওই কিশোর স্থানীয় একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। পুলিশ তাকে আটকের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান খান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, মাইকে উস্কানি দিয়ে সেখানে কিছু বাড়িঘরে হামলার ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছে।

গংগাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আল এমরান বলছেন, আজ সোমবার সেখানকার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক বলে তারা মনে করছেন।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও ভাঙ্গচুরের ঘটনার পর এলাকাজুড়ে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

ওই এলাকার পাশেই নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা। সেখানকার একটি এলাকা থেকে একদল ব্যক্তি মাইকে ঘোষণা দিয়ে মিছিল নিয়ে এসে হামলা ও ভাঙ্গচুর করেছে বলে জানান প্রশাসন ও স্থানীয়রা।

স্থানীয় ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির বলছেন, সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে হামলা করেছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশ তাদের সামাল দিতে পারিনি।

যদিও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ শহীদুল ইসলাম বলছেন, পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়ার পরেও ‘একদল ব্যক্তি উস্কানি দিয়ে এলাকায় অস্থিতিশীলতা’ তৈরির জন্য কিছু বাড়িতে হামলা করেছে।

পনেরটির মতো বাড়িতে হামলা হয়েছে

পনেরটির মতো বাড়িতে হামলা হয়েছে

ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কী জানা যাচ্ছে

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্থানীয় একজন ব্যক্তি ইসলামের নবী মোহাম্মদকে নিয়ে ফেসবুকে ব্যঙ্গ করে পোস্ট দিয়েছে, এমন অভিযোগ উঠলে তা থানা প্রশাসনের নজরে আসে।

“পরশুদিন বিষয়টি নজরে আসার পর ওসি আমাকে জানায়। সেদিনই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপরেও সেদিন রাত দুইটা পর্যন্ত আন্দোলন করে একটি পক্ষ। আমরা কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। রোববার আবার ২/৩ হাজার মানুষ আক্রমণ করে। পনেরটির মতো বাড়িঘর ভাঙ্গচুর করা হয়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছেন এমন কয়েকজন সাংবাদিক জানিয়েছেন যে, ফেসবুক থেকে নবীকে অবমাননা করে পোস্ট দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি ভেরিফায়েড কোনো পাতা নয়।

“ওই কিশোর ফেসবুকে সেটি করেছে কি-না সেটিও নিশ্চিত নয়। তবে মাইক ব্যবহার করে নবীকে অবমাননার অভিযোগ করে লোকজনকে জড়ো করা হয়েছে। এটি করেছে গংগাচড়ার পাশের উপজেলার একটি গোষ্ঠী,” বলছিলেন ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে আসা একজন সাংবাদিক।

ওই এলাকার অধিবাসী দিলীপ রায় বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সে এমন কিছু করেনি বলে তাদের জানিয়েছে।

“ছেলেটি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারপরেও নিরাপত্তার কারণে আমরাই তাকে পুলিশের হাতে দিয়েছি। এরপরেও উৎসুক কিছু লোক জড়ো হয়ে মিছিলসহ এসে আমাদের বাড়িঘরে হামলা করেছে। ১৫-১৬ টা ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে,” বলছিলেন মি. রায়।

যদিও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আল এমরান বলছেন, ওই কিশোর ধর্ম অবমাননাকর লেখা ও ছবি দিয়েছে এমন অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পরই তাকে আটক করেছেন তারা।

তবে রোববার সেনাসদস্যরা যাওয়ার পর থেকে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন তিনি। আজ সোমবারও এলাকায় পুলিশ ও সেনাসদস্যরা অবস্থান করছেন।

পুলিশ বলছে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

                                     পুলিশ বলছে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

মি. রায় জানান, “প্রশাসন হামলাকারীদের বাধা দিয়েছে। সহিংসতা এড়াতে আমরা কোনো প্রতিবাদও করিনি, বাধাও দেইনি। পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি”।

স্থানীয়রা বলছেন, যেই এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে সেটি একটি ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড। সেখানে সর্বশেষ ভোটার তালিকায় হিন্দু ভোটার ছিলো আড়াই হাজারের বেশি। ফলে এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত।

সেখানকার আরেকজন অধিবাসী অরবিন্দ রায় বলছেন, সোমবারও মিছিল নিয়ে আসার প্রস্তুতির কথা তাদের কানে এসেছে। “তবে সেনাবাহিনী আছে। অন্য এলাকা থেকে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও আসছে। পুলিশ আছে,” এলাকার পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বলছিলেন তিনি।

তিনি জানান, হামলাকারীরা শুধু বাড়িঘরেই হামলা করেনি বরং আশেপাশের আখের ক্ষেতগুলোও নষ্ট করে দিয়ে গেছে।

প্রশাসন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাতে ফেসবুকে পোস্টে দেয়ার অভিযোগে ওই কিশোরকে পুলিশি হেফাজতে নেয়ার পরই একদল উত্তেজিত লোকজন মিছিলসহ তার বাড়ির দিকে যায় ও শ্লোগান দিয়ে তার বিচার দাবি করে।

পরে রাতে আরেকটি মিছিল আসে এবং সেই মিছিল থেকে ওই কিশোরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও সেনাসদস্যরা এখন সেখানে অবস্থান করছে

পুলিশ ও সেনাসদস্যরা এখন সেখানে অবস্থান করছে

খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

তবে রবিবার দুপুরের পর কয়েক হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে ওই এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবর পেয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে অবহিত করা হয়। এর মধ্যেই বেলা তিনটার দিকে একদল ব্যক্তি মিছিলসহ গিয়ে সেখানে ভাঙ্গচুর ও লুটপাট শুরু করে।

এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে সেনাবাহিনী উপস্থিত হলে হামলাকারীরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ ও সেনাসদস্যরা এখন ওই এলাকা ঘিরে রেখেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন জামায়াতের আমির শাহ আলম বলছেন, ২/৩ দিন ধরেই হামলা ও উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছিলো।

“এরা সাধারণ মানুষ। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ এসেছে। কয়েকটি বাড়িতে হামলা হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আশা করি আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ শহীদুল ইসলাম বলছেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ যার বিরুদ্ধে ছিলো তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করেছে।

“এরপরেও উস্কানি দিয়ে হিন্দু এলাকায় ঢুকে বাড়ি ভাঙ্গচুর করা হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

মি. ইসলাম বলেন, রোববার দুপুরে সেনাবাহিনী সরে যাওয়ার পর একদল ব্যক্তি এসব ঘটিয়েছে। “আমরা আগেই প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলাম। এখন পুলিশ ও সেনাসদস্যরা আছে। আশা করি পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে,” বলেছেন তিনি।

বিবিসি নিউজ বাংলা

 

রংপুরের গংগাচড়ায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, কী জানা যাচ্ছে

০৯:৩২:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের একটি গ্রামে এক কিশোরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে নবীকে অবমাননার করে পোস্ট দেয়ার অভিযোগ তুলে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা ও লু্টতরাজের অভিযোগ উঠেছে।

ওই কিশোর স্থানীয় একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। পুলিশ তাকে আটকের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান খান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, মাইকে উস্কানি দিয়ে সেখানে কিছু বাড়িঘরে হামলার ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছে।

গংগাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আল এমরান বলছেন, আজ সোমবার সেখানকার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক বলে তারা মনে করছেন।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও ভাঙ্গচুরের ঘটনার পর এলাকাজুড়ে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

ওই এলাকার পাশেই নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা। সেখানকার একটি এলাকা থেকে একদল ব্যক্তি মাইকে ঘোষণা দিয়ে মিছিল নিয়ে এসে হামলা ও ভাঙ্গচুর করেছে বলে জানান প্রশাসন ও স্থানীয়রা।

স্থানীয় ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির বলছেন, সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে হামলা করেছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশ তাদের সামাল দিতে পারিনি।

যদিও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ শহীদুল ইসলাম বলছেন, পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়ার পরেও ‘একদল ব্যক্তি উস্কানি দিয়ে এলাকায় অস্থিতিশীলতা’ তৈরির জন্য কিছু বাড়িতে হামলা করেছে।

পনেরটির মতো বাড়িতে হামলা হয়েছে

পনেরটির মতো বাড়িতে হামলা হয়েছে

ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কী জানা যাচ্ছে

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্থানীয় একজন ব্যক্তি ইসলামের নবী মোহাম্মদকে নিয়ে ফেসবুকে ব্যঙ্গ করে পোস্ট দিয়েছে, এমন অভিযোগ উঠলে তা থানা প্রশাসনের নজরে আসে।

“পরশুদিন বিষয়টি নজরে আসার পর ওসি আমাকে জানায়। সেদিনই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপরেও সেদিন রাত দুইটা পর্যন্ত আন্দোলন করে একটি পক্ষ। আমরা কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। রোববার আবার ২/৩ হাজার মানুষ আক্রমণ করে। পনেরটির মতো বাড়িঘর ভাঙ্গচুর করা হয়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছেন এমন কয়েকজন সাংবাদিক জানিয়েছেন যে, ফেসবুক থেকে নবীকে অবমাননা করে পোস্ট দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি ভেরিফায়েড কোনো পাতা নয়।

“ওই কিশোর ফেসবুকে সেটি করেছে কি-না সেটিও নিশ্চিত নয়। তবে মাইক ব্যবহার করে নবীকে অবমাননার অভিযোগ করে লোকজনকে জড়ো করা হয়েছে। এটি করেছে গংগাচড়ার পাশের উপজেলার একটি গোষ্ঠী,” বলছিলেন ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে আসা একজন সাংবাদিক।

ওই এলাকার অধিবাসী দিলীপ রায় বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সে এমন কিছু করেনি বলে তাদের জানিয়েছে।

“ছেলেটি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারপরেও নিরাপত্তার কারণে আমরাই তাকে পুলিশের হাতে দিয়েছি। এরপরেও উৎসুক কিছু লোক জড়ো হয়ে মিছিলসহ এসে আমাদের বাড়িঘরে হামলা করেছে। ১৫-১৬ টা ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে,” বলছিলেন মি. রায়।

যদিও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আল এমরান বলছেন, ওই কিশোর ধর্ম অবমাননাকর লেখা ও ছবি দিয়েছে এমন অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পরই তাকে আটক করেছেন তারা।

তবে রোববার সেনাসদস্যরা যাওয়ার পর থেকে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন তিনি। আজ সোমবারও এলাকায় পুলিশ ও সেনাসদস্যরা অবস্থান করছেন।

পুলিশ বলছে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

                                     পুলিশ বলছে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

মি. রায় জানান, “প্রশাসন হামলাকারীদের বাধা দিয়েছে। সহিংসতা এড়াতে আমরা কোনো প্রতিবাদও করিনি, বাধাও দেইনি। পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি”।

স্থানীয়রা বলছেন, যেই এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে সেটি একটি ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড। সেখানে সর্বশেষ ভোটার তালিকায় হিন্দু ভোটার ছিলো আড়াই হাজারের বেশি। ফলে এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত।

সেখানকার আরেকজন অধিবাসী অরবিন্দ রায় বলছেন, সোমবারও মিছিল নিয়ে আসার প্রস্তুতির কথা তাদের কানে এসেছে। “তবে সেনাবাহিনী আছে। অন্য এলাকা থেকে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও আসছে। পুলিশ আছে,” এলাকার পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বলছিলেন তিনি।

তিনি জানান, হামলাকারীরা শুধু বাড়িঘরেই হামলা করেনি বরং আশেপাশের আখের ক্ষেতগুলোও নষ্ট করে দিয়ে গেছে।

প্রশাসন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাতে ফেসবুকে পোস্টে দেয়ার অভিযোগে ওই কিশোরকে পুলিশি হেফাজতে নেয়ার পরই একদল উত্তেজিত লোকজন মিছিলসহ তার বাড়ির দিকে যায় ও শ্লোগান দিয়ে তার বিচার দাবি করে।

পরে রাতে আরেকটি মিছিল আসে এবং সেই মিছিল থেকে ওই কিশোরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও সেনাসদস্যরা এখন সেখানে অবস্থান করছে

পুলিশ ও সেনাসদস্যরা এখন সেখানে অবস্থান করছে

খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

তবে রবিবার দুপুরের পর কয়েক হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে ওই এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবর পেয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে অবহিত করা হয়। এর মধ্যেই বেলা তিনটার দিকে একদল ব্যক্তি মিছিলসহ গিয়ে সেখানে ভাঙ্গচুর ও লুটপাট শুরু করে।

এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে সেনাবাহিনী উপস্থিত হলে হামলাকারীরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ ও সেনাসদস্যরা এখন ওই এলাকা ঘিরে রেখেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন জামায়াতের আমির শাহ আলম বলছেন, ২/৩ দিন ধরেই হামলা ও উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছিলো।

“এরা সাধারণ মানুষ। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ এসেছে। কয়েকটি বাড়িতে হামলা হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আশা করি আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ শহীদুল ইসলাম বলছেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ যার বিরুদ্ধে ছিলো তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করেছে।

“এরপরেও উস্কানি দিয়ে হিন্দু এলাকায় ঢুকে বাড়ি ভাঙ্গচুর করা হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

মি. ইসলাম বলেন, রোববার দুপুরে সেনাবাহিনী সরে যাওয়ার পর একদল ব্যক্তি এসব ঘটিয়েছে। “আমরা আগেই প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলাম। এখন পুলিশ ও সেনাসদস্যরা আছে। আশা করি পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে,” বলেছেন তিনি।

বিবিসি নিউজ বাংলা