০৭:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
২০২৫ সালে ৬০০-র বেশি বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কঙ্কালসার হেমন্ত ‘ইন্ডিয়া আউট’ থেকে ‘বিশ্বস্ত অংশীদার’, ভারত-মালদ্বীপের সম্পর্কের সমীকরণ কি বদলাচ্ছে? গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহে করিডোর খুলছে ইসরায়েল সহকারীর চাকরি হারিয়ে ছেলের সংগ্রাম, বাবার অসুস্থতা ও বাজারের আগুনে দগ্ধ এক পরিবার মোবাইল ও ইন্টারনেট বদলে দিচ্ছে টাকা লেনদেনের পদ্ধতি ভেপিং কি সত্যিই ফুসফুসের অপ্রতিকারযোগ্য রোগ সৃষ্টি করে? বিজ্ঞান যা বলছে, তা জানুন গণফোরামে নেতৃত্বে পরিবর্তন ও নতুন মনোনয়ন: কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জেনারেশন জেড: আমেরিকার পুঁজিবাদ বনাম বাংলাদেশের ধর্মীয় রক্ষণশীলতা বাংলাদেশের ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর বাস্তবতা: জনভিত্তি নেই, নতুন ধারণাও নেই, তবুও সক্রিয় কেন?

ভেপিং কি সত্যিই ফুসফুসের অপ্রতিকারযোগ্য রোগ সৃষ্টি করে? বিজ্ঞান যা বলছে, তা জানুন

ভেপিং বা ই-সিগারেট নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। সময়ের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও আলোচনার মাত্রাও বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও বিভিন্ন শিরোনাম অনেক সময় এমনভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করে, যেন ভেপিং মানেই মৃত্যুর ফাঁদ। তবে প্রশ্ন হলো—ভেপিং কি সত্যিই বিরল ও স্থায়ী ফুসফুস রোগ সৃষ্টি করে?

চলমান গবেষণা ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতামত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল ও পরিমিত। এটি যেমন একেবারে নিরাপদ নয়, তেমনি সর্বনাশা বলাটাও বাড়াবাড়ি। এখানে প্রয়োজন সতর্কতা, বাস্তবতা এবং সচেতনতা।

২০১৯ সালের ইভালি আতঙ্ক

ভেপিং নিয়ে আধুনিক উদ্বেগ শুরু হয় ২০১৯ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে EVALI (E-cigarette or Vaping Product Use-Associated Lung Injury) নামে পরিচিত এক প্রকার ফুসফুস রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। প্রায় ২,৮০০ জন আক্রান্ত হন এবং বেশ কিছু মৃত্যুও ঘটে।

তবে তদন্তে উঠে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—এই ঘটনার অধিকাংশই ঘটেছিল অবৈধ THC (গাঁজার উপাদান) কার্ট্রিজ ব্যবহারের ফলে, যেগুলোতে ভিটামিন E অ্যাসিটেট নামক এক ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ ছিল। এই উপাদানটি ফুসফুসে প্রবেশ করলে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

নিকোটিনভিত্তিক, বৈধভাবে বিক্রিত ই-সিগারেটগুলো ছিল না এই রোগের প্রধান কারণ। কিন্তু আতঙ্কের জেরে এই পার্থক্যটি প্রায় হারিয়ে যায়। ফলে “ভেপিং মানেই ফুসফুস ধ্বংস”—এই সাধারণীকরণ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।

পপকর্ন ফুসফুস: বাস্তব, তবে খুব বিরল

ভেপিং নিয়ে আরেকটি আলোচিত রোগ হলো ব্রঙ্কিওলাইটিস অবলিটারেন্স, যাকে সাধারণভাবে “পপকর্ন লাং” বলা হয়। এটি একটি জটিল ও স্থায়ী ফুসফুস রোগ, যেখানে ছোট ছোট শ্বাসনালীগুলো দাগ পড়ে বন্ধ হয়ে যায়।

এই রোগটির মূল উৎস একসময় ছিল ডায়াসেটাইল নামক এক ধরনের কেমিক্যাল, যা মাখনের স্বাদ দিতে ফ্লেভারিং হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এটি কিছু ভেপিং তরলে পাওয়া যেত।

তবে এখন অনেক দেশের নিয়ন্ত্রিত ই-সিগারেট পণ্য থেকে ডায়াসেটাইল বাদ দেওয়া হয়েছে, এবং এ ধরনের রোগের প্রকৃত ঘটনা এখনো অতি বিরল। চিকিৎসকদের মতে, ঝুঁকি একেবারে নেই বলা যায় না, তবে তা থেকে গণআতঙ্ক তৈরি করার মতো নয়।

গবেষণায় কী বলা হচ্ছে

বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণায় দেখা গেছে, ভেপিং সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়—কিন্তু সিগারেটের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে যারা ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য।

২০২২ সালে প্রকাশিত Tobacco Control জার্নালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শুধুমাত্র ভেপ করে, তাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগের হার কম সিগারেট সেবীদের তুলনায়। তবে, যেসব ভেপার কোনো সময়ই ধূমপায়ী ছিলেন না, তাদের মধ্যে কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা গেছে, যা উদ্বেগজনক।

আরও কিছু গবেষণায় প্রাণী ও অল্পসংখ্যক মানুষের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ভেপিং-এর কারণে ফুসফুসে প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। তবে গবেষকরা বলছেন, এসব তথ্য থেকে সরাসরি বলা যায় না যে এগুলো দীর্ঘস্থায়ী বা অপ্রতিকারযোগ্য রোগে পরিণত হবে।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, যারা একসঙ্গে সিগারেট ও ভেপিং করেন (dual use), তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি—এমনকি অনেক সময় শুধু ধূমপানের চেয়েও বেশি।

আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি

“ভেপিং অপ্রতিকারযোগ্য ফুসফুস রোগ সৃষ্টি করে”—এমন অতিরঞ্জিত দাবি শুধু বিভ্রান্তিই ছড়ায় না, বরং জনস্বাস্থ্য নির্দেশনা সম্পর্কে আস্থা হারানোর কারণও হতে পারে। এটি তরুণদের ভয় পাইয়ে তুলতে পারে, আবার বড়দের ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা ভেস্তেও দিতে পারে।

নিকোটিন ও ধূমপান বিশেষজ্ঞ ড. নীল বেনোউইটজ বলেন, “ভেপিং-এর আসল বিপদ হলো, যেসব তরুণ আগে কখনো ধূমপান করেননি, তারা এটি শুরু করছে। তবে যারা ধূমপান ছাড়তে চায়, তাদের জন্য ভেপিং তুলনামূলক কম ক্ষতিকর হতে পারে।”

এগিয়ে যেতে হবে তথ্যনির্ভর পথে

ভেপিংকে একেবারে নিরাপদ বলা যাবে না, কিন্তু এটিকে একচেটিয়াভাবে মৃত্যুবার্তা বলাটাও ঠিক নয়। আজ পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিকর ঘটনাগুলো এসেছে অবৈধ বা নকল পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে—বৈধভাবে বিক্রিত পণ্যের মাধ্যমে নয়।

এই বিষয়ে সামনে এগোতে হলে প্রয়োজন প্রমাণভিত্তিক আলোচনা, সঠিক তথ্য এবং সঠিক নীতিনির্ধারণ। আতঙ্ক নয়, সচেতনতা হোক পথ।

 

২০২৫ সালে ৬০০-র বেশি বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

ভেপিং কি সত্যিই ফুসফুসের অপ্রতিকারযোগ্য রোগ সৃষ্টি করে? বিজ্ঞান যা বলছে, তা জানুন

০৫:১৬:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

ভেপিং বা ই-সিগারেট নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। সময়ের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও আলোচনার মাত্রাও বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও বিভিন্ন শিরোনাম অনেক সময় এমনভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করে, যেন ভেপিং মানেই মৃত্যুর ফাঁদ। তবে প্রশ্ন হলো—ভেপিং কি সত্যিই বিরল ও স্থায়ী ফুসফুস রোগ সৃষ্টি করে?

চলমান গবেষণা ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতামত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল ও পরিমিত। এটি যেমন একেবারে নিরাপদ নয়, তেমনি সর্বনাশা বলাটাও বাড়াবাড়ি। এখানে প্রয়োজন সতর্কতা, বাস্তবতা এবং সচেতনতা।

২০১৯ সালের ইভালি আতঙ্ক

ভেপিং নিয়ে আধুনিক উদ্বেগ শুরু হয় ২০১৯ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে EVALI (E-cigarette or Vaping Product Use-Associated Lung Injury) নামে পরিচিত এক প্রকার ফুসফুস রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। প্রায় ২,৮০০ জন আক্রান্ত হন এবং বেশ কিছু মৃত্যুও ঘটে।

তবে তদন্তে উঠে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—এই ঘটনার অধিকাংশই ঘটেছিল অবৈধ THC (গাঁজার উপাদান) কার্ট্রিজ ব্যবহারের ফলে, যেগুলোতে ভিটামিন E অ্যাসিটেট নামক এক ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ ছিল। এই উপাদানটি ফুসফুসে প্রবেশ করলে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

নিকোটিনভিত্তিক, বৈধভাবে বিক্রিত ই-সিগারেটগুলো ছিল না এই রোগের প্রধান কারণ। কিন্তু আতঙ্কের জেরে এই পার্থক্যটি প্রায় হারিয়ে যায়। ফলে “ভেপিং মানেই ফুসফুস ধ্বংস”—এই সাধারণীকরণ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।

পপকর্ন ফুসফুস: বাস্তব, তবে খুব বিরল

ভেপিং নিয়ে আরেকটি আলোচিত রোগ হলো ব্রঙ্কিওলাইটিস অবলিটারেন্স, যাকে সাধারণভাবে “পপকর্ন লাং” বলা হয়। এটি একটি জটিল ও স্থায়ী ফুসফুস রোগ, যেখানে ছোট ছোট শ্বাসনালীগুলো দাগ পড়ে বন্ধ হয়ে যায়।

এই রোগটির মূল উৎস একসময় ছিল ডায়াসেটাইল নামক এক ধরনের কেমিক্যাল, যা মাখনের স্বাদ দিতে ফ্লেভারিং হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এটি কিছু ভেপিং তরলে পাওয়া যেত।

তবে এখন অনেক দেশের নিয়ন্ত্রিত ই-সিগারেট পণ্য থেকে ডায়াসেটাইল বাদ দেওয়া হয়েছে, এবং এ ধরনের রোগের প্রকৃত ঘটনা এখনো অতি বিরল। চিকিৎসকদের মতে, ঝুঁকি একেবারে নেই বলা যায় না, তবে তা থেকে গণআতঙ্ক তৈরি করার মতো নয়।

গবেষণায় কী বলা হচ্ছে

বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণায় দেখা গেছে, ভেপিং সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়—কিন্তু সিগারেটের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে যারা ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য।

২০২২ সালে প্রকাশিত Tobacco Control জার্নালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শুধুমাত্র ভেপ করে, তাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগের হার কম সিগারেট সেবীদের তুলনায়। তবে, যেসব ভেপার কোনো সময়ই ধূমপায়ী ছিলেন না, তাদের মধ্যে কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা গেছে, যা উদ্বেগজনক।

আরও কিছু গবেষণায় প্রাণী ও অল্পসংখ্যক মানুষের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ভেপিং-এর কারণে ফুসফুসে প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। তবে গবেষকরা বলছেন, এসব তথ্য থেকে সরাসরি বলা যায় না যে এগুলো দীর্ঘস্থায়ী বা অপ্রতিকারযোগ্য রোগে পরিণত হবে।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, যারা একসঙ্গে সিগারেট ও ভেপিং করেন (dual use), তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি—এমনকি অনেক সময় শুধু ধূমপানের চেয়েও বেশি।

আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি

“ভেপিং অপ্রতিকারযোগ্য ফুসফুস রোগ সৃষ্টি করে”—এমন অতিরঞ্জিত দাবি শুধু বিভ্রান্তিই ছড়ায় না, বরং জনস্বাস্থ্য নির্দেশনা সম্পর্কে আস্থা হারানোর কারণও হতে পারে। এটি তরুণদের ভয় পাইয়ে তুলতে পারে, আবার বড়দের ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা ভেস্তেও দিতে পারে।

নিকোটিন ও ধূমপান বিশেষজ্ঞ ড. নীল বেনোউইটজ বলেন, “ভেপিং-এর আসল বিপদ হলো, যেসব তরুণ আগে কখনো ধূমপান করেননি, তারা এটি শুরু করছে। তবে যারা ধূমপান ছাড়তে চায়, তাদের জন্য ভেপিং তুলনামূলক কম ক্ষতিকর হতে পারে।”

এগিয়ে যেতে হবে তথ্যনির্ভর পথে

ভেপিংকে একেবারে নিরাপদ বলা যাবে না, কিন্তু এটিকে একচেটিয়াভাবে মৃত্যুবার্তা বলাটাও ঠিক নয়। আজ পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিকর ঘটনাগুলো এসেছে অবৈধ বা নকল পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে—বৈধভাবে বিক্রিত পণ্যের মাধ্যমে নয়।

এই বিষয়ে সামনে এগোতে হলে প্রয়োজন প্রমাণভিত্তিক আলোচনা, সঠিক তথ্য এবং সঠিক নীতিনির্ধারণ। আতঙ্ক নয়, সচেতনতা হোক পথ।