আন্তর্জাতিক আসরে ফের নিখোঁজ দুই খেলোয়াড়
২০২৫ সালের জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ফিআইএসইউ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে অংশ নিতে যাওয়া পাকিস্তানের দুই ক্রীড়াবিদ প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার আগেই নিখোঁজ হন। অথচ তাঁদের পাসপোর্ট ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে। ঘটনা জানাজানি হতেই জার্মান কর্তৃপক্ষ তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে।
তবে এটি প্রথম ঘটনা নয়। ইতিপূর্বেও আন্তর্জাতিক সফরে গিয়ে পাকিস্তানি খেলোয়াড় নিখোঁজ হয়েছেন। ২০২৪ সালে ইতালিতে বক্সিং সফরে গিয়ে নিখোঁজ হন জোহাইব রশীদ। তারও আগে, ২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমসে গিয়ে সুলাইমান বালোচ ও নাজিরুল্লাহ নামে দুই বক্সার পালিয়ে যান। এমন অনেক ঘটনায় বহু খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা বিদেশে গিয়ে আর দেশে ফেরেননি।
মানবপাচারের রুটে খেলাধুলা?
এসব ঘটনা একটি গভীরতর সংকেত দেয় — খেলাধুলার নাম করে মানবপাচারের চক্র। অসাধু ক্রীড়া কর্মকর্তারা ‘‘ভুয়া কর্মকর্তা’’ ও ‘‘অযোগ্য খেলোয়াড়’’ দলভুক্ত করে দেশ ছাড়ার পথ করে দেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ঘটনা প্রকাশও পায় না। অনেকেই ভালো জীবনের আশায় বিদেশে থেকে যান।
তদন্তে নামল পাকিস্তান স্পোর্টস বোর্ড
ফিআইএসইউ গেমসে ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার অভিযোগে পাকিস্তান স্পোর্টস বোর্ড (পিএসবি) তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারা বলছে, খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের নির্বাচনে ছিল ‘‘প্রশাসনিক ব্যর্থতা’’ ও ‘‘স্বচ্ছতার অভাব’’।
এক জুডো খেলোয়াড়কে পাঠানো হয় কোনো কোচ বা উপযুক্ত পোশাক ছাড়াই। মেয়েদের ৪x৪০০ মিটার রিলেতে দল বাদ পড়ে বিশৃঙ্খলার কারণে। গোটা দলের সঙ্গে ছিলেন মাত্র একজন প্রকৃত কোচ। বাকিরা ছিলেন হায়ার এডুকেশন কমিশন বা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা। এই অব্যবস্থা ও পক্ষপাতমূলক আচরণ ধ্বংস করছে পাকিস্তানের ক্রীড়ার ভবিষ্যৎ।
খেলোয়াড়রা অবহেলিত, কর্মকর্তারা বিলাসিতায়
জনগণের টাকায় কর্মকর্তা সফরে যান আরামদায়ক পরিবেশে, অথচ খেলোয়াড়দের কোনো সম্মানী দেওয়া হয় না, বা দেওয়া হলেও তা অপ্রতুল। অনেকে নিজ খরচে আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নিতে বাধ্য হন, যেখানে থাকার জায়গা, খাবার বা চিকিৎসার নিশ্চয়তাও থাকে না। ফলে দেশে ফিরে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করে শুধুই ঋণ।
মেধা নয়, চলছে তোষামোদ আর পক্ষপাত
পাকিস্তানের প্রতিভাবান তরুণরা জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখলেও বাস্তবে তাঁদের ঠেকিয়ে রাখা হয়। সুযোগ পান তাঁরাই, যাঁদের রয়েছে ‘‘চেনাজানা’’ বা ‘‘নির্দেশ পালন’’-এর দক্ষতা। মেধাবী খেলোয়াড়রা হয়ে পড়ছেন উপেক্ষিত।
ক্রীড়া ফেডারেশন: একটি অঘোষিত চক্র
পাকিস্তানের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো কার্যত রাজনীতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। এগুলো চলে মাফিয়াসদৃশ চক্রের মতো, যেখানে উদ্দেশ্য হয় রাজনীতিতে সুবিধা নেওয়া, টাকা কামানো কিংবা মানুষ পাচার। এদের জবাবদিহিতা নেই, ব্যর্থতার পরও তাদের কোনো শাস্তি হয় না। এসব গোষ্ঠী অপ্রস্তুত দল পাঠায় আন্তর্জাতিক আসরে, আর হার নিশ্চিত হয় মাঠে নামার আগেই।