ঘুম কেন জরুরি?
ঘুম মানবদেহের একটি অপরিহার্য চাহিদা। দিনের কর্মব্যস্ততা ও মানসিক চাপের পরে গভীর ঘুমই শরীরকে পুনরায় সচল হতে সাহায্য করে। গবেষণা বলছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু শুধু সময় নয়, ঘুমের গুণগত মানও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই ‘গভীর ঘুম’ বা ‘ডিপ স্লিপ’ শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
গভীর ঘুম কী?
ঘুম সাধারণত চারটি ধাপে বিভক্ত — তিনটি নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট (NREM) এবং একটি র্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM)। এর মধ্যে তৃতীয় ধাপ, অর্থাৎ ‘ডিপ স্লিপ’ বা গভীর ঘুম হলো NREM ঘুমের চূড়ান্ত স্তর, যেখানে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ধীরগতির হয় এবং শরীর একেবারে শান্ত অবস্থায় চলে যায়। এই ধাপেই দেহকোষ মেরামত করে, ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয় এবং স্মৃতি সংরক্ষণ কার্যকর হয়।
ঘুমের অভাবে কী হয়?
যারা নিয়মিত গভীর ঘুম পান না, তারা ধীরে ধীরে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হন। যেমন:
- ক্লান্তি ও অবসাদ
- স্মৃতিভ্রংশ ও মনোযোগের ঘাটতি
- রক্তচাপ বৃদ্ধি
- ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি
- মানসিক অস্থিরতা ও বিষণ্নতা
গভীর ঘুমে সাহায্য করতে পারে যেসব উপায়
নিম্নোক্ত কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে ঘুমের মান উন্নত করা যায় এবং গভীর ঘুম নিশ্চিত করা সম্ভব:
১. নির্ধারিত ঘুম ও জাগরণের রুটিন অনুসরণ করুন
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে জেগে ওঠা আমাদের দেহঘড়িকে (circadian rhythm) স্থির রাখতে সাহায্য করে। রুটিন মেনে চললে দেহ নিজেই ঘুমের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় নির্দিষ্ট সময়ে।
২. রাতে মুঠোফোন ও স্ক্রিনের ব্যবহার কমান
ব্লু লাইট ঘুমের হরমোন ‘মেলাটোনিন’ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ ইত্যাদি বন্ধ রাখা উচিত।
৩. ক্যাফেইন ও চিনি এড়িয়ে চলুন
বিকেলের পর চা, কফি কিংবা সফট ড্রিঙ্ক গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। কারণ ক্যাফেইন স্নায়ুকে উত্তেজিত করে এবং ঘুমের চক্রে বিঘ্ন ঘটায়।
৪. ঘরের পরিবেশকে ঘুমোপযোগী করুন
ঘরের তাপমাত্রা হালকা শীতল, আলো নরম এবং শব্দহীন রাখা ঘুমে সহায়ক। প্রয়োজনে ঘরে অন্ধকার রাখতে ব্ল্যাকআউট পর্দা ব্যবহার করতে পারেন।
৫. ঘুমানোর আগে হালকা মেডিটেশন বা যোগাভ্যাস
শরীর ও মনকে শান্ত করতে ঘুমানোর আগে ৫–১০ মিনিট ধ্যান বা হালকা যোগাসন উপকারী। এটি মানসিক চাপ কমিয়ে গভীর ঘুমে সাহায্য করে।
৬. রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন
রাতে অতিরিক্ত ঝাল-মসলাযুক্ত ও ভারী খাবার খাওয়া হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে, ফলে ঘুম ব্যাহত হয়। হালকা খাবার খেয়ে অন্তত এক ঘণ্টা পর ঘুমাতে যাওয়া উচিত।
৭. ঘুমের আগে বই পড়ার অভ্যাস
হালকা সাহিত্য বা আত্মউন্নয়নমূলক বই পড়া মনকে শান্ত করতে পারে এবং পরোক্ষভাবে ঘুমে সহায়তা করে। তবে উত্তেজনাপূর্ণ বা দুঃখজনক বিষয় এড়িয়ে চলাই ভালো।
ঘুমের সমস্যা হলে কী করবেন?
যদি দীর্ঘদিন ধরে ঘুম না হয় বা মাঝরাতে ঘন ঘন জেগে ওঠেন, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ইনসমনিয়া, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অন্যান্য ঘুমজনিত রোগ থাকতে পারে, যার জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।
আজকের দ্রুতগতির জীবনে গভীর ঘুম যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ এই ঘুমই আমাদের দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার মূল চাবিকাঠি। তাই ঘুমকে অবহেলা না করে, সঠিক রুটিন, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং কিছু সহজ অভ্যাস গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ‘ডিপ স্লিপ’কে ফিরিয়ে আনতে পারি। একটা ভালো রাতের ঘুম শুধু পরদিনের কাজ নয়, পুরো জীবনকেই আরও কার্যকর করে তোলে।