০৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন চিপ শুল্ক নীতি ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় মস্কোয় শিল্প স্থাপনায় আগুন ইন্দোনেশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক সমঝোতা চূড়ান্তের পথে, জানুয়ারিতে স্বাক্ষরের সম্ভাবনা শিকাগোতে সেনা মোতায়েন আটকাল সুপ্রিম কোর্ট, ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতা প্রশ্নের মুখে কুয়েত-চীনের চারশ কোটি ডলারের চুক্তিতে বদলে যাচ্ছে বন্দর ভবিষ্যৎ, জোরালো হবে বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান বোমা আর বাস্তুচ্যুতির মাঝখানে গাজা, ফের ঘরছাড়া হওয়ার আতঙ্কে অবরুদ্ধ মানুষ উত্তর সীমান্তে আকাশজুড়ে আলোর স্তম্ভ বিস্ময়ে মুগ্ধ বাসিন্দারা, বিরল শীতের ইঙ্গিত বিশ্ব কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রিয়াদ: সংঘাত নিরসনে সৌদি আরবের সংজ্ঞায়িত বছর ইয়েমেনে বন্দিবিনিময়ে বড় অগ্রগতি, দুই হাজার নয়শ’ জনের মুক্তিতে সমঝোতা অর্থনীতি টিকে থাকলেও জীবনের চাপে ক্লান্ত আমেরিকা, দুশ্চিন্তায় নতুন বছর

কীভাবে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা টেড কেনেডির প্রেসিডেন্সির স্বপ্ন শেষ করে দেয়

১৯৬৯ সালের ২৫ জুলাই—আধা শতাব্দীরও বেশি আগে—সিনেটর এডওয়ার্ড ‘টেড’ কেনেডি একটি দুর্ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা আদালতে স্বীকার করেন, যে দুর্ঘটনায় তাঁর এক তরুণ সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু বহু প্রশ্নের উত্তর তিনি রেখে গিয়েছিলেন, যেমনটি সে সময়ের বিবিসি সাংবাদিক ব্রায়ান স্যাক্সটন জানিয়েছিলেন।

অগস্ট ১৯৬৯‑এ ম্যাসাচুসেটসের এডগারটাউনের আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে স্যাক্সটন বলেছিলেন, ‘এই গ্রীষ্মে এখানে জঘন্য ও অসম্মানজনক কিছু ঘটেছে—এমনটা অনেকে স্পষ্টতই মনে করছেন।’ ঠিক এক মাস আগে, একই আদালতে কেনেডি দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগের দায়ে দোষী স্বীকার করেছিলেন। সেই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন তাঁর গাড়িতে থাকা তরুণী সহকারী ম্যারি জো কোপেকনি।

চাপাকুইডিক দ্বীপের একটি ভাড়া নেওয়া কটেজে সেদিন রাতে পার্টি চলছিল। মার্থাস ভিনইয়ার্ড থেকে ফেরিতে আসা-যাওয়া করা দ্বীপটি ধনীদের জনপ্রিয় অবকাশকেন্দ্র। সেখানেই ১৮ জুলাই গভীর রাতে ঘটে সেই ‘চাপাকুইডিক ঘটনা’, যেটি নিয়ে তখন থেকেই নানা রকম বিভ্রান্তিকর গল্প ছড়াতে শুরু করে—কেনেডির রাজনৈতিক অবস্থানকে ঘিরে তাতে বাড়তি নজর পড়ে।

সেই সময় টেডি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কেনেডি পরিবারের জীবিত একমাত্র পুত্র। আগেই বহু দুর্ঘটনা ও দুর্বিপাকে পরিবারটি জর্জরিত। বড় ভাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ১৯৬৩‑তে ডালাসে গুপ্তহত্যার শিকার হন। তারও আগে, প্রবীণ পুত্র জো জুনিয়র ১৯৪৪‑এ যুদ্ধকালীন গোপন অভিযানে নিহত এবং বোন ক্যাথলিন ১৯৪৮‑এ প্লেন দুর্ঘটনায় মারা যান। আরেক বোন রোজমেরি মাত্র ২৩ বছর বয়সে পারিবারিক সিদ্ধান্তে লবোটমি করিয়ে আজীবন প্রতিষ্ঠানে কাটান। চাপাকুইডিক ঘটনার এক বছর আগেই, আরেক ভাই সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডিকে লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা প্রচারের সময় গুলি করে হত্যা করা হয়।

পুনর্মিলনী ও সম্ভাব্য প্রার্থিতা

১৮ জুলাইয়ের পার্টিটি ছিল প্রয়াত রবার্ট কেনেডির প্রচারদলে কাজ করা সদস্যদের পুনর্মিলনী। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছয়জন নারী কৌশলবিদ ছিলেন, যাদের ‘বয়লার রুম গার্লস’ বলা হত। তাঁদের এক জন ছিলেন ২৮‑বছর বয়সী ম্যারি জো কোপেকনি, যিনি ববির প্রার্থিতা ঘোষণার ভাষণ লেখায় কাজ করেছিলেন। অনেকেই তখন ধারণা করতেন, টেড বড় ভাইয়ের অসমাপ্ত পথই বেছে নেবেন। সে বছরের জানুয়ারিতে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সিনেট মেজরিটি হুইপ নির্বাচিত হন এবং প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবেও নাম উঠতে থাকে।

দুর্ঘটনার আগ মুহূর্ত

রাত প্রায় ১১টা পেরোলে পার্টি চলছিলই, তখন কেনেডি ও কোপেকনি বেরিয়ে পড়েন। পরে পুলিশের জবানবন্দিতে কেনেডি জানান, তিনি কোপেকনিকে ফেরিঘাটে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেন, যাতে সে এডগারটাউনে নিজ হোটেলে ফেরার শেষ ফেরি ধরতে পারে। কিন্তু কোপেকনি বন্ধুদের কিছু না বলে, নিজের ব্যাগ ও রুম-চাবি রেখে বেরিয়ে যান। ফেরির পথে গাড়ি চলতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

কেনেডির বয়ানে, ‘অন্ধকার রাতে আমি ভুল পথে চলে গিয়েছিলাম, যদিও দ্বীপটি আমার অপরিচিত ছিল না।’ আলোবিহীন ডাইক রোড ধরে যেতে গাড়ি রেলিংবিহীন একটি কাঠের সেতু থেকে সটকে গিয়ে উল্টে ঠান্ডা জোয়ারি খালে পড়ে যায়।

পরে টেলিভিশন ভাষণে (২৫ জুলাই ১৯৬৯) কেনেডি বলেন, ‘ঠান্ডা পানি আমার মাথার চারদিকে ঢুকে পড়ায় মনে হচ্ছিল নিশ্চিত ডুবে যাব… পানি ফুসফুসে ঢোকে, আমি ডুবে যাওয়ার অনুভূতি পাই।’

ঘটনাস্থল ত্যাগ

নিজেকে মুক্ত করে কেনেডি সাঁতরে ওপরে ওঠেন। বারবার ডুব দিয়ে কোপেকনিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন; ব্যর্থ হয়ে তিনি হেঁটে কটেজে ফেরেন, পথে সাহায্যের জন্য কোনো বাড়িতে থামেননি। পার্টিতে ফিরে গিয়েও কাউকে জানান না। কেবল বন্ধু, সাবেক মার্কিন অ্যাটর্নি পল মার্কহ্যাম ও কাজিন জোসেফ গারগানকে নিয়ে আবার সেতুতে ফিরে ডুব দেন, কিন্তু স্রোতের সামনে পারেন না।

পরে তারা ফেরিঘাটে যান; মার্কহ্যাম ও গারগান পুলিশে জানাতে চাপ দেন। ফেরিঘাটে গিয়ে তারা ফিরে পার্টিতে যান, তবু কাউকে কিছুই বলেননি। চাপাকুইডিক থেকে তখন আর ফেরি ছিল না, তাই কেনেডি প্রায় ১৫০ মিটার সাঁতরে এডগারটাউন পার হন, ভেজা কাপড়ে ক্লান্ত হয়ে হোটেল শায়ারটাউন ইন-এ ফিরে পোশাক খুলে শুয়ে পড়েন। রাত আড়াইটার দিকে সময় জেনে আবার ঘুমিয়ে পড়েন।

পরদিন সকাল

পরদিন সকালে পুলিশপ্রধান জিম আরেনা ডাইক ব্রিজের নিচে ডুবে থাকা গাড়ির সংবাদ পেয়ে যান। তিনি জোয়ারের কারণে ভেতরে ঢুকতে পারেননি; পরে স্কুবা ডাইভার জন ফারার গিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে কোপেকনির মরদেহ উদ্ধার করেন। গাড়ি থেকে রোজমেরি কেওয়ের একটি পার্স পাওয়া গেলে প্রথমে আরেনা ধারণা করেন মৃতা কেওয়ে। কিন্তু স্টেশনে ফিরে দেখেন, কেনেডি আগেই এসে অপেক্ষা করছেন। তখন তিনি জানতে পারেন নিহত কোপেকনি।

কেনেডি বলেছিলেন, ‘অনৈতিক আচরণের সন্দেহে যে সব গল্প ছড়িয়েছে, তার একবিন্দুও সত্য নয়।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন না; তবে দুর্ঘটনা জানাতে দেরি করাটা অমার্জনীয় ভুল ছিল।

তদন্ত ও সন্দেহ

দুর্ঘটনা ও রিপোর্টের মাঝে প্রায় ১০ ঘণ্টা ফাঁক ছিল। আরেনা বিবিসিকে বলেন, স্পিড লিমিট লঙ্ঘন বা অন্য বাড়তি প্রমাণ ছাড়া গুরুতর অভিযোগ আনা কঠিন ছিল; অ্যালকোহল পরীক্ষা করলেও ফল অর্থহীন হত। তাই ‘ব্যক্তিগত আঘাত ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ’‑ই বড়জোর ধরা যায়।

চন্দ্রজয়ের খবরের ভিড়ে শুরুতে চাপাকুইডিক ঘটনা চাপা পড়ে থাকলেও, দুই দিন পর কোপেকনির শেষকৃত্যে কেনেডি ঘাড়ে নেকব্রেস পরে উপস্থিত হওয়ায় আগ্রহ বাড়ে। কোপেকনির মরদেহ পেনসিলভানিয়ায় দাফন হলেও ময়না-তদন্ত হয়নি, এর ফলে প্রশ্ন আরও ঘনিয়ে ওঠে।

২৫ জুলাই কেনেডি দোষ স্বীকার করলে গণমাধ্যম এডগারটাউনে ভিড় করে। দুই মাসের স্থগিত কারাদণ্ড ও এক বছরের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয় তাঁর। সেদিন রাতেই জাতীয় টেলিভিশনে তিনি শোক ও অনুশোচনা প্রকাশ করেন।

সন্দেহ বাড়তে থাকে

আরেনা জানান, ‘ঐ সকালে হোটেলে কেনেডিকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে নাশতা করতে দেখা যায়—এটাও সন্দেহ বাড়ায়।’ সংবাদপত্র ম্যানচেস্টার ইউনিয়ন লিডার দাবি করে, পুলিশ জানার আগেই কেনেডির ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দূরবর্তী ফোনকল করা হয়েছিল। শোনা যায়, তিনি প্রথমে কাজিনকে গাড়ি চালক হিসেবে দোষ নিতে বলেছিলেন, পরে মত বদলান; সাঁতার না কেটে নৌকায় ফিরে গিয়েছিলেন—এমন কথাও ছড়ায়।

ডেপুটি শেরিফ ‘হাক’ লুক সাক্ষ্যে জানান, ১৯ জুলাই রাত ১২টা ৪০-এ তিনি কোপেকনি ও কেনেডিকে গাড়িতে দেখেন—যা কেনেডি বলেছিলেন তার এক ঘণ্টা পর। ডুবুরি ফারারও বলেন, কোপেকনি গাড়ির ভেতরের এয়ার পকেটে প্রায় আধা ঘণ্টা বেঁচে ছিলেন—সরকারি মতের ‘ডুবে মৃত্যু’র বিপরীতে।

দীর্ঘ ছায়া

আনুষ্ঠানিক তদন্তে কোনো অভিযুক্ত না হলেও ঘটনাটি দীর্ঘস্থায়ী ছায়া ফেলে। কোপেকনি দম্পতির একমাত্র সন্তানের মৃত্যু তাদের ভেঙে দেয়; স্ত্রী জোয়ানের গর্ভপাত হয়। ১৯৭১‑এ কেনেডি সিনেট মেজরিটি হুইপ পদ হারান। অস্পষ্টতার কারণে তিনি আর কখনো ডেমোক্র্যাট প্রার্থিতা পাননি, তবে ২০০৯‑এ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিনেটর ছিলেন—দলীয় সীমা পেরিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা, অভিবাসন ও স্বাস্থ্যসেবায় আইন পাস করায় তিনি ‘সেনেটের সিংহ’ নামে খ্যাতি পান।

কিন্তু চাপাকুইডিকের সেদিনের রহস্য আজও উন্মোচিত নয়। পুলিশপ্রধান আরেনা শেষে বলেন, ‘সেই ঘটনার দুই সাক্ষী ছিলেন—একজন তখনই মারা গেছেন, আর অন্যজনও এখন প্রয়াত। সুতরাং পুরো সত্য আর কেউই জানবে না।’

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন চিপ শুল্ক নীতি

কীভাবে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা টেড কেনেডির প্রেসিডেন্সির স্বপ্ন শেষ করে দেয়

০৩:০০:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

১৯৬৯ সালের ২৫ জুলাই—আধা শতাব্দীরও বেশি আগে—সিনেটর এডওয়ার্ড ‘টেড’ কেনেডি একটি দুর্ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা আদালতে স্বীকার করেন, যে দুর্ঘটনায় তাঁর এক তরুণ সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু বহু প্রশ্নের উত্তর তিনি রেখে গিয়েছিলেন, যেমনটি সে সময়ের বিবিসি সাংবাদিক ব্রায়ান স্যাক্সটন জানিয়েছিলেন।

অগস্ট ১৯৬৯‑এ ম্যাসাচুসেটসের এডগারটাউনের আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে স্যাক্সটন বলেছিলেন, ‘এই গ্রীষ্মে এখানে জঘন্য ও অসম্মানজনক কিছু ঘটেছে—এমনটা অনেকে স্পষ্টতই মনে করছেন।’ ঠিক এক মাস আগে, একই আদালতে কেনেডি দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগের দায়ে দোষী স্বীকার করেছিলেন। সেই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন তাঁর গাড়িতে থাকা তরুণী সহকারী ম্যারি জো কোপেকনি।

চাপাকুইডিক দ্বীপের একটি ভাড়া নেওয়া কটেজে সেদিন রাতে পার্টি চলছিল। মার্থাস ভিনইয়ার্ড থেকে ফেরিতে আসা-যাওয়া করা দ্বীপটি ধনীদের জনপ্রিয় অবকাশকেন্দ্র। সেখানেই ১৮ জুলাই গভীর রাতে ঘটে সেই ‘চাপাকুইডিক ঘটনা’, যেটি নিয়ে তখন থেকেই নানা রকম বিভ্রান্তিকর গল্প ছড়াতে শুরু করে—কেনেডির রাজনৈতিক অবস্থানকে ঘিরে তাতে বাড়তি নজর পড়ে।

সেই সময় টেডি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কেনেডি পরিবারের জীবিত একমাত্র পুত্র। আগেই বহু দুর্ঘটনা ও দুর্বিপাকে পরিবারটি জর্জরিত। বড় ভাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ১৯৬৩‑তে ডালাসে গুপ্তহত্যার শিকার হন। তারও আগে, প্রবীণ পুত্র জো জুনিয়র ১৯৪৪‑এ যুদ্ধকালীন গোপন অভিযানে নিহত এবং বোন ক্যাথলিন ১৯৪৮‑এ প্লেন দুর্ঘটনায় মারা যান। আরেক বোন রোজমেরি মাত্র ২৩ বছর বয়সে পারিবারিক সিদ্ধান্তে লবোটমি করিয়ে আজীবন প্রতিষ্ঠানে কাটান। চাপাকুইডিক ঘটনার এক বছর আগেই, আরেক ভাই সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডিকে লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা প্রচারের সময় গুলি করে হত্যা করা হয়।

পুনর্মিলনী ও সম্ভাব্য প্রার্থিতা

১৮ জুলাইয়ের পার্টিটি ছিল প্রয়াত রবার্ট কেনেডির প্রচারদলে কাজ করা সদস্যদের পুনর্মিলনী। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছয়জন নারী কৌশলবিদ ছিলেন, যাদের ‘বয়লার রুম গার্লস’ বলা হত। তাঁদের এক জন ছিলেন ২৮‑বছর বয়সী ম্যারি জো কোপেকনি, যিনি ববির প্রার্থিতা ঘোষণার ভাষণ লেখায় কাজ করেছিলেন। অনেকেই তখন ধারণা করতেন, টেড বড় ভাইয়ের অসমাপ্ত পথই বেছে নেবেন। সে বছরের জানুয়ারিতে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সিনেট মেজরিটি হুইপ নির্বাচিত হন এবং প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবেও নাম উঠতে থাকে।

দুর্ঘটনার আগ মুহূর্ত

রাত প্রায় ১১টা পেরোলে পার্টি চলছিলই, তখন কেনেডি ও কোপেকনি বেরিয়ে পড়েন। পরে পুলিশের জবানবন্দিতে কেনেডি জানান, তিনি কোপেকনিকে ফেরিঘাটে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেন, যাতে সে এডগারটাউনে নিজ হোটেলে ফেরার শেষ ফেরি ধরতে পারে। কিন্তু কোপেকনি বন্ধুদের কিছু না বলে, নিজের ব্যাগ ও রুম-চাবি রেখে বেরিয়ে যান। ফেরির পথে গাড়ি চলতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

কেনেডির বয়ানে, ‘অন্ধকার রাতে আমি ভুল পথে চলে গিয়েছিলাম, যদিও দ্বীপটি আমার অপরিচিত ছিল না।’ আলোবিহীন ডাইক রোড ধরে যেতে গাড়ি রেলিংবিহীন একটি কাঠের সেতু থেকে সটকে গিয়ে উল্টে ঠান্ডা জোয়ারি খালে পড়ে যায়।

পরে টেলিভিশন ভাষণে (২৫ জুলাই ১৯৬৯) কেনেডি বলেন, ‘ঠান্ডা পানি আমার মাথার চারদিকে ঢুকে পড়ায় মনে হচ্ছিল নিশ্চিত ডুবে যাব… পানি ফুসফুসে ঢোকে, আমি ডুবে যাওয়ার অনুভূতি পাই।’

ঘটনাস্থল ত্যাগ

নিজেকে মুক্ত করে কেনেডি সাঁতরে ওপরে ওঠেন। বারবার ডুব দিয়ে কোপেকনিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন; ব্যর্থ হয়ে তিনি হেঁটে কটেজে ফেরেন, পথে সাহায্যের জন্য কোনো বাড়িতে থামেননি। পার্টিতে ফিরে গিয়েও কাউকে জানান না। কেবল বন্ধু, সাবেক মার্কিন অ্যাটর্নি পল মার্কহ্যাম ও কাজিন জোসেফ গারগানকে নিয়ে আবার সেতুতে ফিরে ডুব দেন, কিন্তু স্রোতের সামনে পারেন না।

পরে তারা ফেরিঘাটে যান; মার্কহ্যাম ও গারগান পুলিশে জানাতে চাপ দেন। ফেরিঘাটে গিয়ে তারা ফিরে পার্টিতে যান, তবু কাউকে কিছুই বলেননি। চাপাকুইডিক থেকে তখন আর ফেরি ছিল না, তাই কেনেডি প্রায় ১৫০ মিটার সাঁতরে এডগারটাউন পার হন, ভেজা কাপড়ে ক্লান্ত হয়ে হোটেল শায়ারটাউন ইন-এ ফিরে পোশাক খুলে শুয়ে পড়েন। রাত আড়াইটার দিকে সময় জেনে আবার ঘুমিয়ে পড়েন।

পরদিন সকাল

পরদিন সকালে পুলিশপ্রধান জিম আরেনা ডাইক ব্রিজের নিচে ডুবে থাকা গাড়ির সংবাদ পেয়ে যান। তিনি জোয়ারের কারণে ভেতরে ঢুকতে পারেননি; পরে স্কুবা ডাইভার জন ফারার গিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে কোপেকনির মরদেহ উদ্ধার করেন। গাড়ি থেকে রোজমেরি কেওয়ের একটি পার্স পাওয়া গেলে প্রথমে আরেনা ধারণা করেন মৃতা কেওয়ে। কিন্তু স্টেশনে ফিরে দেখেন, কেনেডি আগেই এসে অপেক্ষা করছেন। তখন তিনি জানতে পারেন নিহত কোপেকনি।

কেনেডি বলেছিলেন, ‘অনৈতিক আচরণের সন্দেহে যে সব গল্প ছড়িয়েছে, তার একবিন্দুও সত্য নয়।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন না; তবে দুর্ঘটনা জানাতে দেরি করাটা অমার্জনীয় ভুল ছিল।

তদন্ত ও সন্দেহ

দুর্ঘটনা ও রিপোর্টের মাঝে প্রায় ১০ ঘণ্টা ফাঁক ছিল। আরেনা বিবিসিকে বলেন, স্পিড লিমিট লঙ্ঘন বা অন্য বাড়তি প্রমাণ ছাড়া গুরুতর অভিযোগ আনা কঠিন ছিল; অ্যালকোহল পরীক্ষা করলেও ফল অর্থহীন হত। তাই ‘ব্যক্তিগত আঘাত ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ’‑ই বড়জোর ধরা যায়।

চন্দ্রজয়ের খবরের ভিড়ে শুরুতে চাপাকুইডিক ঘটনা চাপা পড়ে থাকলেও, দুই দিন পর কোপেকনির শেষকৃত্যে কেনেডি ঘাড়ে নেকব্রেস পরে উপস্থিত হওয়ায় আগ্রহ বাড়ে। কোপেকনির মরদেহ পেনসিলভানিয়ায় দাফন হলেও ময়না-তদন্ত হয়নি, এর ফলে প্রশ্ন আরও ঘনিয়ে ওঠে।

২৫ জুলাই কেনেডি দোষ স্বীকার করলে গণমাধ্যম এডগারটাউনে ভিড় করে। দুই মাসের স্থগিত কারাদণ্ড ও এক বছরের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয় তাঁর। সেদিন রাতেই জাতীয় টেলিভিশনে তিনি শোক ও অনুশোচনা প্রকাশ করেন।

সন্দেহ বাড়তে থাকে

আরেনা জানান, ‘ঐ সকালে হোটেলে কেনেডিকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে নাশতা করতে দেখা যায়—এটাও সন্দেহ বাড়ায়।’ সংবাদপত্র ম্যানচেস্টার ইউনিয়ন লিডার দাবি করে, পুলিশ জানার আগেই কেনেডির ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দূরবর্তী ফোনকল করা হয়েছিল। শোনা যায়, তিনি প্রথমে কাজিনকে গাড়ি চালক হিসেবে দোষ নিতে বলেছিলেন, পরে মত বদলান; সাঁতার না কেটে নৌকায় ফিরে গিয়েছিলেন—এমন কথাও ছড়ায়।

ডেপুটি শেরিফ ‘হাক’ লুক সাক্ষ্যে জানান, ১৯ জুলাই রাত ১২টা ৪০-এ তিনি কোপেকনি ও কেনেডিকে গাড়িতে দেখেন—যা কেনেডি বলেছিলেন তার এক ঘণ্টা পর। ডুবুরি ফারারও বলেন, কোপেকনি গাড়ির ভেতরের এয়ার পকেটে প্রায় আধা ঘণ্টা বেঁচে ছিলেন—সরকারি মতের ‘ডুবে মৃত্যু’র বিপরীতে।

দীর্ঘ ছায়া

আনুষ্ঠানিক তদন্তে কোনো অভিযুক্ত না হলেও ঘটনাটি দীর্ঘস্থায়ী ছায়া ফেলে। কোপেকনি দম্পতির একমাত্র সন্তানের মৃত্যু তাদের ভেঙে দেয়; স্ত্রী জোয়ানের গর্ভপাত হয়। ১৯৭১‑এ কেনেডি সিনেট মেজরিটি হুইপ পদ হারান। অস্পষ্টতার কারণে তিনি আর কখনো ডেমোক্র্যাট প্রার্থিতা পাননি, তবে ২০০৯‑এ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিনেটর ছিলেন—দলীয় সীমা পেরিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা, অভিবাসন ও স্বাস্থ্যসেবায় আইন পাস করায় তিনি ‘সেনেটের সিংহ’ নামে খ্যাতি পান।

কিন্তু চাপাকুইডিকের সেদিনের রহস্য আজও উন্মোচিত নয়। পুলিশপ্রধান আরেনা শেষে বলেন, ‘সেই ঘটনার দুই সাক্ষী ছিলেন—একজন তখনই মারা গেছেন, আর অন্যজনও এখন প্রয়াত। সুতরাং পুরো সত্য আর কেউই জানবে না।’