ঘটনাপ্রবাহ সংক্ষেপ
তিন জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়ি গ্রামে রোকসানা বেগম (রুবি, তিপ্পান্ন বছর) ও তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (পঁয়ত্রিশ বছর) এবং মেয়ে তাসপিয়া আক্তার (জোনাকি, ঊনত্রিশ বছর)-কে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আরেক মেয়ে রুমা আক্তার গুরুতর জখম হন; তাঁর মাথায় বাহাত্তরটি সেলাই দিতে হয়েছে।
প্রেসক্লাবে করুণ আর্জি
চার আগস্ট ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“মা, ভাই আর বোনকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। দয়া করে আমাদের আর সর্বস্ব ছিনিয়ে নেবেন না—আমরা শুধু বাঁচতে চাই।”

পরিবারের নিরাপত্তাহীনতা
- • ঘটনার পর বড় বোন রিক্তা আক্তার রাতেই থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়নি।
- • প্রাণভয়ে পরিবারের সদস্যরা নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে আছেন।
- • অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোয় তাঁরা ফের হামলার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
কেন এই নির্মম হত্যা?
- • প্রবাসী বাবা ও ভাইয়ের পাঠানো অর্থে রোকসানা বেগম বাড়িতে নতুন ভবন তুলছিলেন।
- • ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ তাঁর পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করাতে চাপ দেন; রাজি না হওয়ায় শত্রুতার সূত্রপাত।
- • চাঁদা দাবি করলে রোকসানা দিতে অস্বীকার করেন। বাড়ির কাচ ভাঙা ও মিটার নষ্ট করার মতো হুমকি-ধামকি চলতে থাকে।
- • স্থানীয় জনপ্রিয় এবং বিএনপি-সমর্থিত হওয়ায় রোকসানার নামে মাদকসহ নানা মামলা ঠুকে হয়রানি করা হয়।

পরিকল্পিত হত্যার বর্ণনা
রুমার লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী—
- • ঘটনার আগের রাতেই তরু মিয়ার বাড়িতে গোপন বৈঠকে শিমুল বিল্লাহ, আনু মেম্বার, মধু, মতিন ও বাচ্চা মেম্বার ঠিক করেন রোকসানাকে, পরে তাঁর পুরো পরিবারকে খুন করা হবে।
- • ওই বৈঠকে টাকা লেনদেন করে ভাড়া খুনি নিয়োগ করা হয়।
পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন
- • ঘটনার সময় একাধিকবার জাতীয় জরুরি নম্বর নয়-নয়-নয় এবং স্থানীয় থানায় ফোন করলেও পুলিশ পৌঁছায় মৃত্যুর পর।
- • মামলায় আসামির তালিকা ‘সাজানো’ বলে পরিবারের অভিযোগ; প্রধান মদদদাতা বিল্লাল হোসেনের নাম বাদ পড়েছে।
- • র্যাব দু-একজনকে ধরলেও অধিকাংশ আসামি এখনও গ্রেপ্তার-বহির্ভূত, কেউ কেউ জামিনে মুক্ত।

পরিবারের দাবি
— পলাতক বিল্লাল হোসেনসহ সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার।
— মামলার পুনর্বিন্যাস করে প্রকৃত কুশীলবদের অন্তর্ভুক্তি।
— সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা।
— ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
প্রতিক্রিয়া মেলেনি
বিল্লাল হোসেনের মোবাইল নম্বরে বারবার ফোন ও খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
শোকাহত এই পরিবারের এখন একমাত্র প্রত্যাশা—ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা। তাঁদের আকুতি, “আমাদের আর নিঃস্ব নয়, বাঁচার অধিকার দিন।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















