০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশিদের জন্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারতের ভিসা কঠিন হওয়ার পেছনের কারণ

অভিবাসন ও অবৈধ কাজের আশঙ্কা

থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে এই দুই দেশে অনেক বাংলাদেশি বৈধ ভিসায় গিয়ে পরে অবৈধভাবে বসবাস করেন বা ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করে কাজ শুরু করেন। এতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মালয়েশিয়ার হোটেল ও নির্মাণ খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক বাংলাদেশি অবৈধভাবে কাজ করায় দেশটির সরকার ভিসা প্রদানে আরও কঠোরতা আরোপ করেছে।

থাইল্যান্ডেও অনেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে ওভারস্টে (overstay) করেন এবং পরে অবৈধভাবে কাজ খোঁজেন, যা দেশটির ইমিগ্রেশন আইন লঙ্ঘন করে। ফলে এখন বাংলাদেশি আবেদনকারীদের অতিরিক্ত প্রমাণ ও ডকুমেন্ট দিতে হচ্ছে, যা প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে।

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে সুসম্পর্কপূর্ণ হলেও কিছু সাম্প্রতিক ইস্যুতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সীমান্ত হত্যা, পানি বণ্টন সমস্যা, এনআরসি-সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং ভিসা প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা বাংলাদেশি নাগরিকদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করেছে। ভারত এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও অতিরিক্ত নথিপত্র চাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছে।

ভিসা আবেদনকারীর আর্থিক প্রোফাইল ও ভ্রমণ ইতিহাস

উক্ত তিনটি দেশই এখন ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতা, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, চাকরির নিশ্চয়তা, আগের ভ্রমণ ইতিহাস, রিটার্ন টিকিট ও হোটেল বুকিংয়ের তথ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে। অনেক বাংলাদেশি আবেদনকারীর ক্ষেত্রে এসব ডকুমেন্টের যথাযথ প্রমাণ না থাকায় ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।

মানবপাচার ও জাল কাগজপত্রের অপব্যবহার

থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া মানবপাচারজনিত অপরাধে বহুবার বাংলাদেশিদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে। এমনকি ভারতেও কিছু বাংলাদেশি অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ভুয়া দাওয়াতনামা, নকল কোম্পানির নিয়োগপত্র এবং ভুয়া ব্যাংক বিবরণী জমা পড়ার নজির থাকায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো এখন অধিক সতর্কতা অবলম্বন করছে।

স্থানীয় জনমত ও অভ্যন্তরীণ চাপ

থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া নিজস্ব শ্রমবাজার সুরক্ষিত রাখতে চায়। তারা মনে করে, অতিরিক্ত বিদেশি শ্রমিকের আগমনে স্থানীয়দের চাকরির সুযোগ হুমকির মুখে পড়ে। ভারতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ বিষয়টি অনেকাংশে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। এসব কারণে স্থানীয় জনমতের চাপে সরকারগুলো ভিসা নীতিতে কঠোরতা এনেছে।

থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারতের ভিসা পাওয়া বাংলাদেশিদের জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে মূলত অবৈধ অভিবাসন, কূটনৈতিক অস্থিরতা, আর্থিক অনিশ্চয়তা, জাল কাগজপত্রের ব্যবহার এবং স্থানীয় রাজনৈতিক চাপে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সাধারণ নাগরিকদেরও আইন ও নিয়ম মেনে আবেদন করার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশিদের জন্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারতের ভিসা কঠিন হওয়ার পেছনের কারণ

০৪:৫৮:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

অভিবাসন ও অবৈধ কাজের আশঙ্কা

থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে এই দুই দেশে অনেক বাংলাদেশি বৈধ ভিসায় গিয়ে পরে অবৈধভাবে বসবাস করেন বা ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করে কাজ শুরু করেন। এতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মালয়েশিয়ার হোটেল ও নির্মাণ খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক বাংলাদেশি অবৈধভাবে কাজ করায় দেশটির সরকার ভিসা প্রদানে আরও কঠোরতা আরোপ করেছে।

থাইল্যান্ডেও অনেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে ওভারস্টে (overstay) করেন এবং পরে অবৈধভাবে কাজ খোঁজেন, যা দেশটির ইমিগ্রেশন আইন লঙ্ঘন করে। ফলে এখন বাংলাদেশি আবেদনকারীদের অতিরিক্ত প্রমাণ ও ডকুমেন্ট দিতে হচ্ছে, যা প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে।

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে সুসম্পর্কপূর্ণ হলেও কিছু সাম্প্রতিক ইস্যুতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সীমান্ত হত্যা, পানি বণ্টন সমস্যা, এনআরসি-সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং ভিসা প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা বাংলাদেশি নাগরিকদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করেছে। ভারত এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও অতিরিক্ত নথিপত্র চাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছে।

ভিসা আবেদনকারীর আর্থিক প্রোফাইল ও ভ্রমণ ইতিহাস

উক্ত তিনটি দেশই এখন ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতা, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, চাকরির নিশ্চয়তা, আগের ভ্রমণ ইতিহাস, রিটার্ন টিকিট ও হোটেল বুকিংয়ের তথ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে। অনেক বাংলাদেশি আবেদনকারীর ক্ষেত্রে এসব ডকুমেন্টের যথাযথ প্রমাণ না থাকায় ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।

মানবপাচার ও জাল কাগজপত্রের অপব্যবহার

থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া মানবপাচারজনিত অপরাধে বহুবার বাংলাদেশিদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে। এমনকি ভারতেও কিছু বাংলাদেশি অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ভুয়া দাওয়াতনামা, নকল কোম্পানির নিয়োগপত্র এবং ভুয়া ব্যাংক বিবরণী জমা পড়ার নজির থাকায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো এখন অধিক সতর্কতা অবলম্বন করছে।

স্থানীয় জনমত ও অভ্যন্তরীণ চাপ

থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া নিজস্ব শ্রমবাজার সুরক্ষিত রাখতে চায়। তারা মনে করে, অতিরিক্ত বিদেশি শ্রমিকের আগমনে স্থানীয়দের চাকরির সুযোগ হুমকির মুখে পড়ে। ভারতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ বিষয়টি অনেকাংশে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। এসব কারণে স্থানীয় জনমতের চাপে সরকারগুলো ভিসা নীতিতে কঠোরতা এনেছে।

থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারতের ভিসা পাওয়া বাংলাদেশিদের জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে মূলত অবৈধ অভিবাসন, কূটনৈতিক অস্থিরতা, আর্থিক অনিশ্চয়তা, জাল কাগজপত্রের ব্যবহার এবং স্থানীয় রাজনৈতিক চাপে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সাধারণ নাগরিকদেরও আইন ও নিয়ম মেনে আবেদন করার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।