০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

মবে ম্লান সাফল্য, নির্বাচন ঘোষণায় স্বস্তি”

সমকালের একটি শিরোনাম “জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়েছে”

গেল জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে। জুনে যা ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বৃহস্পতিবার সংস্থার ওয়েবসাইটে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।

জুলাই মাসে খাদ্য সূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা জুনে ছিল ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত সূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জুনে যা ছিল ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

গত তিন বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ।

এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেয়। এর কিছুটা সুফল মিলছে।

গত দুই-তিন বছর ধরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এনবিআরও তেল, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয়। বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানিপ্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়।

 

আজকের পত্রিকার একটি শিরোনাম “৬৯ অধ্যাদেশ এক বছরে”

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে ৬৯টি অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এই সময়ে নতুন করা হয়েছে ৯টি অধ্যাদেশ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো, মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া, ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচার এবং মামলার জট কমাতে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে জোর দিয়ে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

একই সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দিতে ২৪টি আইন সংশোধন করা হয়েছে।

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিন পর স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভা আইন সংশোধন করে এসব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত সব জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

 

মানবজমিনের একটি শিরোনাম “মবে ম্লান সাফল্য, নির্বাচন ঘোষণায় স্বস্তি”

এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। মাথার উপর ছিল সীমাহীন প্রত্যাশার চাপ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকার উৎখাত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা দেয়ালে দেয়ালে লিখে দিয়েছিল তাদের স্বপ্নের কথামালা। পরিবর্তন আর বদলে দেয়ার আওয়াজ উঠেছিল সর্বত্র। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে, মানুষের নিরাপত্তা দিতে রাস্তায় নেমে সাধারণ ছাত্র-জনতা বড় প্রত্যাশা তৈরি করেছিল পরিবর্তনের। ছাত্র-জনতার সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের গুরুদায়িত্ব নিয়ে গত বছরের ৮ই আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পতিত সরকারের গণহত্যা ও লুটপাটের বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার এবং একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনকে প্রধান লক্ষ্য করে যাত্রা শুরু করা সরকারের এক বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। এই এক বছরের মানুষের প্রত্যাশা কতোটা পূরণ করতে পেরেছে সরকার। কতোটা পূরণ করতে পেরেছে দেশের মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রুতি। এই হিসাব-নিকাশ চলছে সর্বত্র। এক বছরে অনেক ভালো উদ্যোগ ছিল সরকারের। কিছু উদ্যোগ সফলও হয়েছে। কিছু কাজ মানুষের প্রশংসাও কুড়িয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন বিশৃঙ্খলা, আর নজিরবিহীন মব সন্ত্রাস ঢেকে দিয়েছে সরকারের এসব সাফল্যকে। এক বছরের মাথায় নানামুখী প্রশ্নের মুখে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। সরকারের ব্যর্থতা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী উদ্যোগ না থাকায় হতাশ সাধারণ মানুষ। অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সাধারণ ছাত্র-জনতাসহ অন্যান্য পক্ষও সরকারের আমলনামা নিয়ে নাখোশ। হতাশা-অপ্রাপ্তির মধ্যেও সরকারের বছরপূর্তির সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করায় স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। অনেকে মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে অনেক ক্ষেত্রে স্থবিরতা কেটে যাবে। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ সুগম হবে। ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয়ার পর সরকারের নানা উদ্যোগে নিত্যপণ্যের বাজারে অনেকটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। বিদেশি মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা কমেছে। তলানিতে থাকা বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখন অনেকটা স্বস্তির জায়গায়। এমন সব স্বস্তির খবর ঢাকা পড়েছে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চরম বিশৃঙ্খলা ও নজিরবিহীন মবের ঘটনা। এসব ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অভ্যুত্থানে জীবন দেয়া হাজারো মানুষের ত্যাগের প্রতি সংশ্লিষ্টদের দায়বোধকে দারুণভাবে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

 

বণিকবার্তার একটি শিরোনাম “সামষ্টিক অর্থনীতির নাজুকতা কাটলেও আস্থার ঘাটতি বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানে”

এক বছর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি ছিল বেশ নাজুক। জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে মন্থরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বিনিময় হারে অস্থিরতা, রিজার্ভের ক্রমাগত ক্ষয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যে (বিওপি) রেকর্ড ঘাটতি, ব্যাংক খাতে নৈরাজ্যসহ নানা সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছিল দেশের অর্থনীতি। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী এক বছরে সামষ্টিক অর্থনীতির এসব সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। তবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে খরা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পিছিয়ে পড়া, মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেলেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না নামা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে।

শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। এ সরকারের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক, ব্যবসায়ী ও ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গণমানুষের প্রত্যাশা ছিল বিপুল, সে তুলনায় প্রাপ্তি সামান্যই। অনেক প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে দেশ গঠনের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। ঘুস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রশাসনিক অদক্ষতাসহ দেশের অনেক মৌলিক সংকট আগের মতোই বিরাজমান। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব প্রতিশ্রুতির কথা শোনা গিয়েছিল, তার অনেকগুলোই গত এক বছরে আলোর মুখ দেখেনি।

অর্থনীতিবিদ ও ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির সময়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির যে নাজুক পরিস্থিতি ছিল, তা কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গেছে। কিন্তু যে বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল, সেটি পূরণ হয়নি। ব্যাংক খাতে কিছু সংস্কার হয়েছে, অর্থনীতির কিছু সূচকে উন্নতি দেখা গেছে, তবে তা প্রত্যাশার তুলনায় খুবই কম। সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের অর্জন উজ্জ্বল বলা যাবে না।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মবে ম্লান সাফল্য, নির্বাচন ঘোষণায় স্বস্তি”

০৮:৫৫:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

সমকালের একটি শিরোনাম “জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়েছে”

গেল জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে। জুনে যা ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বৃহস্পতিবার সংস্থার ওয়েবসাইটে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।

জুলাই মাসে খাদ্য সূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা জুনে ছিল ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত সূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জুনে যা ছিল ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

গত তিন বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ।

এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেয়। এর কিছুটা সুফল মিলছে।

গত দুই-তিন বছর ধরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এনবিআরও তেল, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয়। বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানিপ্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়।

 

আজকের পত্রিকার একটি শিরোনাম “৬৯ অধ্যাদেশ এক বছরে”

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে ৬৯টি অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এই সময়ে নতুন করা হয়েছে ৯টি অধ্যাদেশ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো, মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া, ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচার এবং মামলার জট কমাতে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে জোর দিয়ে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

একই সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দিতে ২৪টি আইন সংশোধন করা হয়েছে।

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিন পর স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভা আইন সংশোধন করে এসব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত সব জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

 

মানবজমিনের একটি শিরোনাম “মবে ম্লান সাফল্য, নির্বাচন ঘোষণায় স্বস্তি”

এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। মাথার উপর ছিল সীমাহীন প্রত্যাশার চাপ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকার উৎখাত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা দেয়ালে দেয়ালে লিখে দিয়েছিল তাদের স্বপ্নের কথামালা। পরিবর্তন আর বদলে দেয়ার আওয়াজ উঠেছিল সর্বত্র। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে, মানুষের নিরাপত্তা দিতে রাস্তায় নেমে সাধারণ ছাত্র-জনতা বড় প্রত্যাশা তৈরি করেছিল পরিবর্তনের। ছাত্র-জনতার সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের গুরুদায়িত্ব নিয়ে গত বছরের ৮ই আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পতিত সরকারের গণহত্যা ও লুটপাটের বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার এবং একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনকে প্রধান লক্ষ্য করে যাত্রা শুরু করা সরকারের এক বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। এই এক বছরের মানুষের প্রত্যাশা কতোটা পূরণ করতে পেরেছে সরকার। কতোটা পূরণ করতে পেরেছে দেশের মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রুতি। এই হিসাব-নিকাশ চলছে সর্বত্র। এক বছরে অনেক ভালো উদ্যোগ ছিল সরকারের। কিছু উদ্যোগ সফলও হয়েছে। কিছু কাজ মানুষের প্রশংসাও কুড়িয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন বিশৃঙ্খলা, আর নজিরবিহীন মব সন্ত্রাস ঢেকে দিয়েছে সরকারের এসব সাফল্যকে। এক বছরের মাথায় নানামুখী প্রশ্নের মুখে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। সরকারের ব্যর্থতা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী উদ্যোগ না থাকায় হতাশ সাধারণ মানুষ। অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সাধারণ ছাত্র-জনতাসহ অন্যান্য পক্ষও সরকারের আমলনামা নিয়ে নাখোশ। হতাশা-অপ্রাপ্তির মধ্যেও সরকারের বছরপূর্তির সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করায় স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। অনেকে মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে অনেক ক্ষেত্রে স্থবিরতা কেটে যাবে। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ সুগম হবে। ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয়ার পর সরকারের নানা উদ্যোগে নিত্যপণ্যের বাজারে অনেকটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। বিদেশি মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা কমেছে। তলানিতে থাকা বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখন অনেকটা স্বস্তির জায়গায়। এমন সব স্বস্তির খবর ঢাকা পড়েছে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চরম বিশৃঙ্খলা ও নজিরবিহীন মবের ঘটনা। এসব ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অভ্যুত্থানে জীবন দেয়া হাজারো মানুষের ত্যাগের প্রতি সংশ্লিষ্টদের দায়বোধকে দারুণভাবে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

 

বণিকবার্তার একটি শিরোনাম “সামষ্টিক অর্থনীতির নাজুকতা কাটলেও আস্থার ঘাটতি বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানে”

এক বছর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি ছিল বেশ নাজুক। জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে মন্থরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বিনিময় হারে অস্থিরতা, রিজার্ভের ক্রমাগত ক্ষয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যে (বিওপি) রেকর্ড ঘাটতি, ব্যাংক খাতে নৈরাজ্যসহ নানা সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছিল দেশের অর্থনীতি। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী এক বছরে সামষ্টিক অর্থনীতির এসব সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। তবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে খরা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পিছিয়ে পড়া, মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেলেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না নামা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে।

শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। এ সরকারের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক, ব্যবসায়ী ও ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গণমানুষের প্রত্যাশা ছিল বিপুল, সে তুলনায় প্রাপ্তি সামান্যই। অনেক প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে দেশ গঠনের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। ঘুস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রশাসনিক অদক্ষতাসহ দেশের অনেক মৌলিক সংকট আগের মতোই বিরাজমান। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব প্রতিশ্রুতির কথা শোনা গিয়েছিল, তার অনেকগুলোই গত এক বছরে আলোর মুখ দেখেনি।

অর্থনীতিবিদ ও ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির সময়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির যে নাজুক পরিস্থিতি ছিল, তা কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গেছে। কিন্তু যে বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল, সেটি পূরণ হয়নি। ব্যাংক খাতে কিছু সংস্কার হয়েছে, অর্থনীতির কিছু সূচকে উন্নতি দেখা গেছে, তবে তা প্রত্যাশার তুলনায় খুবই কম। সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের অর্জন উজ্জ্বল বলা যাবে না।