১০:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
ঐতিহ্যের সূক্ষ্ম বিন্দুতে ইতিহাসের পুনর্জাগরণ সৌন্দর্যের নতুন সংজ্ঞা ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো আনোয়ার, ট্রাম্প এবং সম্পৃক্ততার কৌশল গণভোট বিতর্ক রেখেই সুপারিশ অদৃশ্য বিপদে পৃথিবী ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ সংকট আমেরিকার প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের বৈপরীত্য ও আত্মসমালোচনা,গৌরব ও পাপের দ্বৈত মুখোশ উন্মোচন ‘গ্রিন ট্রি সাপ’—সবুজ পাতার আড়ালে লুকানো নীরব সৌন্দর্য আরব আমিরাতের আল আইন জাদুঘর—পাথর যুগ থেকে ইসলামি যুগের ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন মিশরে সূচালো দাঁতওয়ালা ৮ কোটি বছর আগের সামুদ্রিক কুমিরের জীবাশ্ম আবিষ্কার আমেরিকার জন্মকথা—ইতিহাসের দ্বন্দ্ব, স্বাধীনতার গল্প ও মানবতার প্রতিচ্ছবি

ট্রাম্পের রাশিয়ার তেলের ক্রেতাদের ওপর শুল্ক: অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঝুঁকি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও শুল্ককে পররাষ্ট্রনীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। এবার তিনি রাশিয়ার তেলের ক্রেতাদের লক্ষ্য করে এমন এক পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি চুক্তির জন্য রাশিয়াকে সময়সীমা দিয়ে, সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে রাশিয়ার তেলের ক্রেতাদের ওপর ‘দ্বিতীয় পর্যায়ের শুল্ক’ আরোপের হুমকি দিয়েছেন তিনি।

ভারত ও চীনের ওপর চাপ

বুধবার হোয়াইট হাউস ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, কারণ ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। চীনের ক্ষেত্রে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি হয়নি, তবে শুক্রবারের মধ্যেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে এক হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এই পদক্ষেপ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জটিল করে তুলতে পারে এবং চীনের সঙ্গে চলমান আলোচনায় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক রাশিয়ার অর্থনীতিতে আঘাত করলেও, তেলের দাম বাড়িয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি করবে।

রাশিয়ার অবস্থান ও বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চাপ সামলানোর জন্য তারা প্রস্তুত। কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ ইউজিন রুমার মনে করেন, এই শুল্ক পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর সম্ভাবনা ‘শূন্যের কাছাকাছি’।

চীন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে তারা রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখবে। ফলে ভারত ও চীনের তেল কেনা পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তেলের বাজারে প্রভাব

দ্বিতীয় পর্যায়ের শুল্ক কার্যকর হলে রাশিয়ার গ্রাহক দেশগুলোর আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে, যা তাদের অন্য উৎস থেকে তেল কিনতে উৎসাহিত করতে পারে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে পারে এবং তা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে।

Featured image for article about Headlines

২০২২ সালের মার্চে, রাশিয়ার আগ্রাসনের পর তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। যদি ভারত প্রতিদিন ১৭ লাখ ব্যারেল রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করে দেয়, যা বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় ২ শতাংশ, তবে দাম ৬৬ ডলার থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। জেপি মরগ্যানের বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার তেল নিষিদ্ধ করা গেলে দাম লাফিয়ে ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার বা তার বেশি হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য ঝুঁকি

এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে আগামী বছরের মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে। জ্বালানির দাম বাড়লে ভোটারদের অসন্তুষ্টি বাড়তে পারে। এছাড়া ভারত ও চীনের সঙ্গে বড় বাণিজ্য চুক্তির প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের কিম্বারলি ডোনোভান মনে করেন, এই দুই বড় তেল আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ তৈরি করতে সক্ষম, কারণ তারা জানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছ থেকে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সহযোগিতা চায়।

Russia's shutdown of Caspian pipeline seen as revenge on Kazakhstan

সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ

রাশিয়া প্রতিশোধ হিসেবে কাজাখস্তান থেকে চলা সিপিসি পাইপলাইন বন্ধ করে দিতে পারে, যা দিনে ১৭ লাখ ব্যারেল তেল পরিবহন করতে সক্ষম। পশ্চিমা জ্বালানি কোম্পানি এক্সনমোবিল, শেভরন, শেল, ইএনআই ও টোটালএনার্জিস এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বড় আকারে তেল পরিবহন করে থাকে। এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ববাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি করতে পারে।

রাজনৈতিক ফলাফল

Donald Trump hits 90-day pause on tariffs for 'most nations' but increases China's levies to 125% | The Business Standard

পিটারসন ইনস্টিটিউটের কুলেন হেন্ড্রিক্সের মতে, ট্রাম্প যদি এই অর্থনৈতিক কষ্টকে রাশিয়াকে আলোচনায় বসানোর প্রয়োজনীয় চাপ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে তা কিছু ভোটারের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবে এর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।

সারসংক্ষেপ

ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক কৌশল রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করলেও, বিশ্ববাজারে জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির ঝুঁকি বহন করছে। এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে ভারত, চীন এবং রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ার ওপর।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঐতিহ্যের সূক্ষ্ম বিন্দুতে ইতিহাসের পুনর্জাগরণ

ট্রাম্পের রাশিয়ার তেলের ক্রেতাদের ওপর শুল্ক: অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঝুঁকি

০৩:৩৭:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও শুল্ককে পররাষ্ট্রনীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। এবার তিনি রাশিয়ার তেলের ক্রেতাদের লক্ষ্য করে এমন এক পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি চুক্তির জন্য রাশিয়াকে সময়সীমা দিয়ে, সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে রাশিয়ার তেলের ক্রেতাদের ওপর ‘দ্বিতীয় পর্যায়ের শুল্ক’ আরোপের হুমকি দিয়েছেন তিনি।

ভারত ও চীনের ওপর চাপ

বুধবার হোয়াইট হাউস ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, কারণ ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। চীনের ক্ষেত্রে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি হয়নি, তবে শুক্রবারের মধ্যেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে এক হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এই পদক্ষেপ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জটিল করে তুলতে পারে এবং চীনের সঙ্গে চলমান আলোচনায় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক রাশিয়ার অর্থনীতিতে আঘাত করলেও, তেলের দাম বাড়িয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি করবে।

রাশিয়ার অবস্থান ও বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চাপ সামলানোর জন্য তারা প্রস্তুত। কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ ইউজিন রুমার মনে করেন, এই শুল্ক পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর সম্ভাবনা ‘শূন্যের কাছাকাছি’।

চীন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে তারা রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখবে। ফলে ভারত ও চীনের তেল কেনা পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তেলের বাজারে প্রভাব

দ্বিতীয় পর্যায়ের শুল্ক কার্যকর হলে রাশিয়ার গ্রাহক দেশগুলোর আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে, যা তাদের অন্য উৎস থেকে তেল কিনতে উৎসাহিত করতে পারে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে পারে এবং তা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে।

Featured image for article about Headlines

২০২২ সালের মার্চে, রাশিয়ার আগ্রাসনের পর তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। যদি ভারত প্রতিদিন ১৭ লাখ ব্যারেল রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করে দেয়, যা বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় ২ শতাংশ, তবে দাম ৬৬ ডলার থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। জেপি মরগ্যানের বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার তেল নিষিদ্ধ করা গেলে দাম লাফিয়ে ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার বা তার বেশি হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য ঝুঁকি

এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে আগামী বছরের মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে। জ্বালানির দাম বাড়লে ভোটারদের অসন্তুষ্টি বাড়তে পারে। এছাড়া ভারত ও চীনের সঙ্গে বড় বাণিজ্য চুক্তির প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের কিম্বারলি ডোনোভান মনে করেন, এই দুই বড় তেল আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ তৈরি করতে সক্ষম, কারণ তারা জানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছ থেকে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সহযোগিতা চায়।

Russia's shutdown of Caspian pipeline seen as revenge on Kazakhstan

সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ

রাশিয়া প্রতিশোধ হিসেবে কাজাখস্তান থেকে চলা সিপিসি পাইপলাইন বন্ধ করে দিতে পারে, যা দিনে ১৭ লাখ ব্যারেল তেল পরিবহন করতে সক্ষম। পশ্চিমা জ্বালানি কোম্পানি এক্সনমোবিল, শেভরন, শেল, ইএনআই ও টোটালএনার্জিস এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বড় আকারে তেল পরিবহন করে থাকে। এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ববাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি করতে পারে।

রাজনৈতিক ফলাফল

Donald Trump hits 90-day pause on tariffs for 'most nations' but increases China's levies to 125% | The Business Standard

পিটারসন ইনস্টিটিউটের কুলেন হেন্ড্রিক্সের মতে, ট্রাম্প যদি এই অর্থনৈতিক কষ্টকে রাশিয়াকে আলোচনায় বসানোর প্রয়োজনীয় চাপ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে তা কিছু ভোটারের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবে এর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।

সারসংক্ষেপ

ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক কৌশল রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করলেও, বিশ্ববাজারে জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির ঝুঁকি বহন করছে। এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে ভারত, চীন এবং রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ার ওপর।