বছরের শেষ নাগাদ জাপানে এআই চালিত সার্চ
গুগল ঘোষণা দিয়েছে, তাদের নতুন এআই-চালিত সার্চ টুল জাপানে এ বছরের শেষ নাগাদ বিনামূল্যে চালু হবে। চলতি বছরের বসন্তে সংস্থাটি জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি উন্মোচন করে এবং জুলাই মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও যুক্তরাজ্যে ‘এআই মোড’ সার্চ চালু করে। এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা কথোপকথনের মতো প্রশ্ন লিখে সরাসরি এআই-উৎপন্ন উত্তর পেতে পারবেন। তবে নতুন এই সার্চ পদ্ধতি বিজ্ঞাপন মডেলে পরিবর্তন আনায় বিশ্বজুড়ে অনেক গণমাধ্যম সংস্থার সঙ্গে গুগলের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।
কিভাবে কাজ করবে এআই মোড
গুগলের হোমপেজে সার্চ বক্সের পাশে ব্যবহারকারীরা এআই মোডে সুইচ করতে পারবেন। এখানে কোনো প্রশ্ন দিলে এআই ইন্টারনেটের বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে উত্তর দেবে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি লেখেন—“আমি কীভাবে জাপানে একা ভ্রমণ করব?”—তাহলে এআই ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট ও সংবাদ প্রতিবেদন থেকে তথ্য নিয়ে বলতে পারে, “জাপান নিরাপদ, তবে হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্য সতর্ক থাকুন” অথবা “জনপরিবহন নির্ভরযোগ্য, তাই যাতায়াত সহজ হবে।”

প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সাধারণত ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দেখানো হয়। ২০২৪ সাল থেকে গুগল সার্চে ‘এআই ওভারভিউ’ নামে সংক্ষিপ্ত সারাংশ যুক্ত করেছে। আর এআই মোডে ব্যবহারকারী পরবর্তী প্রশ্ন করে আলাপচারিতার মতো আরও তথ্য পেতে পারেন। উত্তরের মধ্যেই তথ্যের উৎসের লিঙ্কও থাকবে।
বিজ্ঞাপনে নতুন ধাপ
গুগল এআই মোডে নতুন ধরনের বিজ্ঞাপনও আনবে। ব্যবহারকারীর দেওয়া লেখার ভিত্তিতে লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। প্রচলিত সার্চে ব্যবহারকারীরা কম লেখা দেন, কিন্তু এআই মোডে দুই থেকে তিন গুণ বেশি তথ্য লিখে থাকেন, যা এআইকে তাদের প্রয়োজন আরও ভালোভাবে বুঝতে ও প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন দিতে সহায়তা করে।
প্রতিযোগিতা ও আয়ের ঝুঁকি
প্রায় ৯০ শতাংশ সার্চ ইঞ্জিন বাজারের দখল থাকা গুগল এআই প্রযুক্তিতে ঝুঁকছে, কারণ মার্কিন স্টার্টআপ পারপ্লেক্সিটি ও ওপেনএআই এআই-চালিত প্রশ্নোত্তর মডেল দিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়াচ্ছে। তবে এই পরিবর্তন গুগলের বিজ্ঞাপন আয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ‘এআই ওভারভিউ’ যুক্ত হওয়ার পর সার্চ ফলাফলের লিঙ্কে ক্লিকের হার ১৫ শতাংশ থেকে নেমে ৮ শতাংশে এসেছে। বিজ্ঞাপনেও ক্লিক কমলে আয় হ্রাস পেতে পারে।

জাপানের অনলাইন অভ্যাসে পরিবর্তন
জাপানে এআই সার্চ চালু হলে ব্যবহারকারীদের তথ্য অনুসন্ধানের ধরণ বদলে যেতে পারে। ইন্টারনেটের শুরু থেকে প্রচলিত কীওয়ার্ড সার্চের বদলে স্বাভাবিক ভাষায় আলাপচারিতার মতো তথ্য অনুসন্ধান জনপ্রিয় হতে পারে।
ওয়েব ডিজাইন ও বিজ্ঞাপনের নতুন বাস্তবতা
এআই সার্চ যুগে ওয়েবসাইট ও বিজ্ঞাপনের নকশাও বদলাতে হবে। এখন অনেক ওয়েবসাইট এমনভাবে তৈরি হচ্ছে যাতে এআই সহজে তথ্য খুঁজে পায়, আর প্রচলিত কীওয়ার্ডভিত্তিক বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব কমছে। টোকিও-ভিত্তিক দেনৎসু ডিজিটালের এআই প্রধান সাতোরু ইয়ামামতো বলেন, “ডিজাইনারদের এমন সাইট বানাতে হবে যা এআই-এর জন্য সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।”
গণমাধ্যমের সঙ্গে সংঘাত
এআই সার্চকে কেন্দ্র করে তথ্যসূত্র হিসেবে থাকা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বিরোধ বাড়ছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মালিক ডাও জোন্স পারপ্লেক্সিটির বিরুদ্ধে মামলা করে, তাদের কনটেন্ট ব্যবহারে ক্ষতিপূরণ ও ডেটা মুছে ফেলার দাবি জানায়। জাপানের সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্রের প্রকাশক ইয়োমিউরি শিম্বুনও পারপ্লেক্সিটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

গুগল এআই মোড চালুর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের নিউজ মিডিয়া অ্যালায়েন্স অভিযোগ জানিয়ে বলেছে, “গুগল জোর করে কনটেন্ট নিয়ে ব্যবহার করছে, বিনিময়ে কিছু দিচ্ছে না—এটাই চুরির সংজ্ঞা।”
এ বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের ইন্ডিপেনডেন্ট পাবলিশার্স অ্যালায়েন্স, যা ছোট ও মাঝারি আকারের গণমাধ্যমকে প্রতিনিধিত্ব করে, গুগলের ‘এআই ওভারভিউ’কে বাজারে আধিপত্যের অপব্যবহার বলে আখ্যা দেয় এবং যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়।
যদি গুগল সমাধান না আনে, তবে গণমাধ্যমের প্রতিবাদ আরও তীব্র হতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















