বাঙালির খাবার হয়তো বলা যাবে। শহর যখন মেট্রোপলিটন হয়ে ওঠে তখন তা হয় মিশ্রণ, স্থানীয় বৈশিষ্ট্য তখন দ্রুত লোপ পায়।
ঢাকায় একসময় উনিশ শতকের শেষার্ধ থেকে বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত নানা রকম কোরমা পাওয়া যেত। পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জায়গায় যেসব মিষ্টির উৎপত্তি হয়েছিল সেগুলো ঢাকায় পাওয়া যেত। তবে নকুলদানাকে ঢাকাইয়া মিষ্টি বলতে পারি। ছোট আকারের চিনি দিয়ে তৈরি বুন্দিয়া থেকে একটু বড়, ভেতরে থাকত একটি বুটের দানা।

গরুর মাংসের কোরমা
শরবত জাতীয় পানীয়ের মধ্যে টিকে আছে বোরহানি। ভিনেগার, চিনি ও পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি হতো সিকান দাবিন। গ্রীষ্মপ্রধান হওয়ায় ঢাকায় তা বেশ প্রচলিত ছিল এবং এর উপাদানও ছিল সীমিত। আজ বিয়ের আসরে আবশ্যক হিসেবে যে পানীয়টি থাকে তা হলো বোরহানি। এই বোরহানির ভিত্তি খুব সম্ভব সিকান জাবিন। তবে, নতুন কিছু উপাদান এতে যুক্ত হয়েছে। উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে হয়তো তা আছে কিন্তু আমি দেখিনি।
এটিকে ঢাকার পানীয় হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। মুঘল আমল থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকটি খাবারই এখনও টিকে আছে। এবং শ্রেণি, ধর্মভেদে সবাই তা গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। যেমন, মোরগ গোলাও, তেহারি, (সর্বজনগ্রাহ্য করতে গরুর মাংসের বদলে খাসির মাংস। বিভিন্ন রকমের পোলাও, কিছু কোফতা, বিশেষ করে মাছের। তবে, সেগুলো নিত্যদিনের খাবার নয়, অনুষ্ঠানের বা মাঝে মাঝে মুখ বদলানো জন্য মিষ্টি।
ভর্তা, শরবতের বিভিন্ন ধরন একই ছিল। এখনও আছে যার কোনোটিকে ঢাকাই খাবার বলা যাবে না। বাঙালির খাবার হয়তো বলা যাবে। শহর যখন মেট্রোপলিটন হয়ে ওঠে তখন তা হয় মিশ্রণ, স্থানীয় বৈশিষ্ট্য তখন দ্রুত লোপ পায়। কিছু কিছু হয়তো টিকে থাকে কিন্তু অর্থের কারণে উপাদান বদলায়। যেমন, মুঘল ও পরবর্তী আমলে বিশেষ খাবারে জাফরান ব্যবহৃত হতোই, এখন হয় না।
মশলা, ঘি দামের কারণে ব্যবহৃত হয় কম, ব্যবহৃত হয় সাধারণ মশলা যেখানে উদ্ভাবনী সময়ে তৈরি খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না। সব শহরেই এমনটি ঘটেছে, এখানেই বা তা ব্যতিক্রম হবে কেন?
(চলবে)
মুনতাসীর মামুন 



















