০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার তেলের বিপুল ভান্ডার থাকলেও বাস্তব উৎপাদন থেকে যাবে কাগজে-কলমেই রঙে রঙে নির্বাসন ও স্বীকৃতি: কাতারে এম এফ হুসেইনের নিজের জাদুঘর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে বাইবেলের বৈশ্বিক যাত্রা, লক্ষ্য দুই হাজার তেত্রিশ ক্যানসারের পথ ধরেই আলঝেইমারের নতুন চিকিৎসা দিগন্ত নাইরোবির শহরের পাশে বুনো আফ্রিকা: এক দিনে সাফারির অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা যশোরে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত ঝালকাঠিতে হাদির গ্রামের বাড়িতে লুটপাট ‘হাদির ওপর হামলাকারী শিবিরের লোক’—রিজভীর বক্তব্য ভিত্তিহীন: ডিএমপি কমিশনার ইসরায়েলমুখী বিশাল ইভানজেলিকাল মিশন: ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা হাদির ওপর হামলা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ: মির্জা আব্বাস

কেন বাংলাদেশের চালের দাম প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে

বাংলাদেশে চালের বাজারে টানা ঊর্ধ্বগতি এখন পরিবারের বাজেটে বড় চাপ সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে স্বস্তি নেই, যা একাধিক অর্থনৈতিক, সরবরাহ এবং নীতিগত কারণে ঘটছে।

বর্তমান বাজারচিত্র

বরো মৌসুমের ধান ওঠা ও আমদানির পরও খুচরা বাজারে প্রায় সব মানের চালের দাম বেড়েছে। মোটা চালের কেজি ৫৫–৬০ টাকা, মাঝারি ৬৮–৭২ টাকা, আর উন্নত মানের চাল ৭৫–৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা প্রায় প্রতিদিনই ভোক্তার জন্য নতুন চাপ সৃষ্টি করছে।

উৎপাদন ও আমদানি সত্ত্বেও দাম স্থিতিশীল নয়

চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়েছে এবং সরকারি গুদামেও মজুত বেশি। পাশাপাশি বেসরকারি ও সরকারি উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে। তবু বাজারে দাম কমছে না, যা ইঙ্গিত দেয় বাজার তদারকির ঘাটতি এবং ব্যবসায়ীদের মজুদ প্রভাবের দিকে।

সরকারি ক্রয়মূল্যের প্রভাব

বরো মৌসুমে সরকার ধান কেজি ৩৬ টাকা এবং চাল কেজি ৪৯ টাকায় কিনে। এই দাম অনেক সময় বাজারে একটি ‘ফ্লোর প্রাইস’ হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ এর নিচে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে চান না। ফলে বাজারে প্রাকৃতিকভাবে দাম নামার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।

মিলার ও ব্যবসায়ীদের মজুদ কৌশল

বড় মিলার ও পাইকাররা অনেক সময় বেশি পরিমাণ চাল মজুদ করে রাখেন এবং সমন্বিতভাবে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এই ধরনের মজুদ প্রবণতা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, যা দামের ওপর সরাসরি চাপ ফেলে।

আমদানিতে ডলার ও এলসি জটিলতা

ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা কঠিন হয়েছে, আর খোলার পরও মার্জিন ও শর্তের কড়াকড়ি আমদানির প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে চাল পাওয়া গেলেও দেশে তা আসতে সময় লাগছে, যা দামের স্থিতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

জ্বালানির দাম ও পরিবহন ব্যয়ের চাপ

ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, লোডশেডিং এবং পরিবহন ভাড়ার ঊর্ধ্বগতি চালের মিলিং খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই অতিরিক্ত ব্যয় সরাসরি খুচরা দামে যুক্ত হচ্ছে, ফলে বাজারদর ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব

বিশ্ববাজারে বিশেষত ভারতের রপ্তানি নীতির পরিবর্তনে চালের দাম কমলেও দেশের বাজারে সেই প্রভাব দ্রুত পড়ছে না। এর মূল কারণ হলো আমদানির ধীরগতি এবং দেশের বাজার কাঠামোর সীমাবদ্ধতা।

পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে ধান : দিশেহারা বকশীগঞ্জের কৃষক

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু ঝুঁকি

বরো মৌসুমের পরে হাওর ও উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা, লবণাক্ততা বা আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের ‘রিস্ক প্রিমিয়াম’ তৈরি করে। তারা ভবিষ্যতের ক্ষতির আশঙ্কায় দাম আগেভাগেই বাড়িয়ে দেয়।

ওএমএস ও টিসিবির সীমিত প্রভাব

ওএমএস ও টিসিবি সীমিত পরিসরে কম দামে চাল বিক্রি করলেও তা পুরো বাজারে দামের চাপ কমাতে পারছে না। এই কর্মসূচি সাধারণত নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, ফলে ওপেন মার্কেট প্রভাবিত হয় না।

একক কোনো কারণ নয়

বাংলাদেশে চালের দাম প্রতিদিন বাড়ার পেছনে একক কোনো কারণ নয়—বরং সরকারি ক্রয়মূল্য, ব্যবসায়ীদের মজুদ কৌশল, আমদানির জটিলতা, জ্বালানি–বিদ্যুৎ–পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব এবং জলবায়ু ঝুঁকির সমন্বিত প্রভাব এর জন্য দায়ী। এসব সমস্যার সমাধানে বাজার মনিটরিং বাড়ানো, আমদানি প্রক্রিয়া দ্রুত করা, শক্তি ব্যয়ের চাপ কমানো এবং সরকারি বিক্রয় কর্মসূচি প্রসারিত করা জরুরি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভেনেজুয়েলার তেলের বিপুল ভান্ডার থাকলেও বাস্তব উৎপাদন থেকে যাবে কাগজে-কলমেই

কেন বাংলাদেশের চালের দাম প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে

০৬:১৪:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশে চালের বাজারে টানা ঊর্ধ্বগতি এখন পরিবারের বাজেটে বড় চাপ সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে স্বস্তি নেই, যা একাধিক অর্থনৈতিক, সরবরাহ এবং নীতিগত কারণে ঘটছে।

বর্তমান বাজারচিত্র

বরো মৌসুমের ধান ওঠা ও আমদানির পরও খুচরা বাজারে প্রায় সব মানের চালের দাম বেড়েছে। মোটা চালের কেজি ৫৫–৬০ টাকা, মাঝারি ৬৮–৭২ টাকা, আর উন্নত মানের চাল ৭৫–৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা প্রায় প্রতিদিনই ভোক্তার জন্য নতুন চাপ সৃষ্টি করছে।

উৎপাদন ও আমদানি সত্ত্বেও দাম স্থিতিশীল নয়

চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়েছে এবং সরকারি গুদামেও মজুত বেশি। পাশাপাশি বেসরকারি ও সরকারি উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে। তবু বাজারে দাম কমছে না, যা ইঙ্গিত দেয় বাজার তদারকির ঘাটতি এবং ব্যবসায়ীদের মজুদ প্রভাবের দিকে।

সরকারি ক্রয়মূল্যের প্রভাব

বরো মৌসুমে সরকার ধান কেজি ৩৬ টাকা এবং চাল কেজি ৪৯ টাকায় কিনে। এই দাম অনেক সময় বাজারে একটি ‘ফ্লোর প্রাইস’ হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ এর নিচে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে চান না। ফলে বাজারে প্রাকৃতিকভাবে দাম নামার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।

মিলার ও ব্যবসায়ীদের মজুদ কৌশল

বড় মিলার ও পাইকাররা অনেক সময় বেশি পরিমাণ চাল মজুদ করে রাখেন এবং সমন্বিতভাবে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এই ধরনের মজুদ প্রবণতা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, যা দামের ওপর সরাসরি চাপ ফেলে।

আমদানিতে ডলার ও এলসি জটিলতা

ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা কঠিন হয়েছে, আর খোলার পরও মার্জিন ও শর্তের কড়াকড়ি আমদানির প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে চাল পাওয়া গেলেও দেশে তা আসতে সময় লাগছে, যা দামের স্থিতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

জ্বালানির দাম ও পরিবহন ব্যয়ের চাপ

ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, লোডশেডিং এবং পরিবহন ভাড়ার ঊর্ধ্বগতি চালের মিলিং খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই অতিরিক্ত ব্যয় সরাসরি খুচরা দামে যুক্ত হচ্ছে, ফলে বাজারদর ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব

বিশ্ববাজারে বিশেষত ভারতের রপ্তানি নীতির পরিবর্তনে চালের দাম কমলেও দেশের বাজারে সেই প্রভাব দ্রুত পড়ছে না। এর মূল কারণ হলো আমদানির ধীরগতি এবং দেশের বাজার কাঠামোর সীমাবদ্ধতা।

পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে ধান : দিশেহারা বকশীগঞ্জের কৃষক

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু ঝুঁকি

বরো মৌসুমের পরে হাওর ও উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা, লবণাক্ততা বা আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের ‘রিস্ক প্রিমিয়াম’ তৈরি করে। তারা ভবিষ্যতের ক্ষতির আশঙ্কায় দাম আগেভাগেই বাড়িয়ে দেয়।

ওএমএস ও টিসিবির সীমিত প্রভাব

ওএমএস ও টিসিবি সীমিত পরিসরে কম দামে চাল বিক্রি করলেও তা পুরো বাজারে দামের চাপ কমাতে পারছে না। এই কর্মসূচি সাধারণত নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, ফলে ওপেন মার্কেট প্রভাবিত হয় না।

একক কোনো কারণ নয়

বাংলাদেশে চালের দাম প্রতিদিন বাড়ার পেছনে একক কোনো কারণ নয়—বরং সরকারি ক্রয়মূল্য, ব্যবসায়ীদের মজুদ কৌশল, আমদানির জটিলতা, জ্বালানি–বিদ্যুৎ–পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব এবং জলবায়ু ঝুঁকির সমন্বিত প্রভাব এর জন্য দায়ী। এসব সমস্যার সমাধানে বাজার মনিটরিং বাড়ানো, আমদানি প্রক্রিয়া দ্রুত করা, শক্তি ব্যয়ের চাপ কমানো এবং সরকারি বিক্রয় কর্মসূচি প্রসারিত করা জরুরি।